প্রদীপন, শিলিগুড়ি, ২৯ নভেম্বর#
রেডব্যাঙ্ক গ্রুপের তিনটে চা বাগান রেডব্যাঙ্ক, ধরণীপুর এবং সুরেন্দরনগর রয়েছে বানারহাট অঞ্চলে। দীর্ঘ দশ বছর ধরে অনাহার এই তিনটি চা বাগানের বাসিন্দাদের নিত্যসঙ্গী। রেডব্যাঙ্ক গ্রুপের মালিক শুধু পাতা তোলার সময় বাগানে এসে পাতা নিয়ে যান। বাকি সময় তাঁর দেখা পাওয়া যায় না।
অনাহারে মৃত্যুর উপাখ্যান
বিগত এক দেড় মাসে পত্রিকার শিরোনামে উঠে এসেছিল রেডব্যাঙ্ক, অনাহারে মৃত্যুর কারণে। রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের বিকা লাইনে বিলাসী গোঁসাই মারা যায় ৬ অক্টোবর। সুধীর ওঁরাও মারা যান ১২ অক্টোবর। বিকা লাইনের রন্থী নায়ক ১৬ অক্টোবর, বয়স ৪০। গির্জা লাইনের ঠেডোর ওঁরাও মারা যান ১৯ অক্টোবর, এর বয়স ৪৮। তিন নম্বর লাইনের সুন্দরী মুন্ডা (৫০) মারা গেছেন ২০ অক্টোবর; কাঞ্ছা বিশ্বকর্মা (৫২) মারা গেছেন ২৬ অক্টোবর; বুদাইন ওঁরাও (৪৮) মারা গেছেন ৭ নভেম্বর।
এছাড়া সুরেন্দরনগরের লেবার লাইনের লহরু খা খা (৬২) মারা গেছেন ২৬ অক্টোবর। মন্দির লাইনের জেলফ মিঞ্চ (১২) মারা যায় ২৭ অক্টোবর। গুয়াবাড়ি লাইনের যমুনা রাম (৫৫) মারা যান নভেম্বর মাসে।
ধরনীপুরে মৃত্যু হয়েছে পার্বতী লোহারের (৪৫), ৩০ অক্টোবর। মেচ লাইনের তান সিং ঘাটোয়ার (৫৫) মারা যান নভেম্বর মাসে।
সুরেন্দরনগরের লহরু খা খা র বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর স্ত্রী শুধু বাড়িতে রয়েছেন। তিনি জানালেন, ছেলেরা কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গেছে। অশক্ত শরীরে লহরু খা খা পাথর ভাঙার মতো শক্ত কাজ করতে না পারায় অনাহারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাগান বন্ধ থাকায় কাজ বলতে শুধু ডাইনা নদীতে পাথর ভাঙার কাজ রয়েছে। রেডব্যাঙ্কে যেটি বিশেষভাবে দেখা গেল, তা হল, শুধু বড়োরা নয়, ছোটোরাও পাথর ভাঙছে। তার ফলে সিলিকোসিস-এর মতো মারণ রোগ ছোটোবেলা থেকেই হচ্ছে।
কাজের সন্ধানে দেশান্তর
ধরণীপুর চা বাগানের পঁচিশ জন শ্রমিক কাজের সন্ধানে ঘর ছেড়েছেন। শিবলাল সাঁওতাল, স্বপন নট্ট, বাইলু রাম, ক্ষিতীশ নট্ট, পূরণ খারিয়া, রূপলাল সাঁওতাল, ছোটেলাল খেরোয়ার, প্রদীপ নট্ট কাজের সন্ধানে কেরলে পাড়ি দিয়েছে। মিশন লাইনের কতরিনা লাকড়া, বিকা লাইনের বিষমুণি ওঁরাও, আপার লাইনের আপলিনা লাকড়া পাড়ি দিয়েছেন কেরল।
খাদ্য সুরক্ষা আইনের অসারতা
সপ্তাহে পাঁচ কেজি চাল দেওয়া হয় বটে, কিন্তু তাতে দুই তিনদিনের বেশি চলে না। কিন্তু শুধু ভাত খেয়ে তো আর শরীর চলে না। তাই পাথর ভাঙার অমানুষিক পরিশ্রমের ফলে শরীর দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। শীতকালে নদীতে জলের অভাব। আর শুধু চাল দিয়ে তো খাওয়া যায় না, সেটা ফোটানোর জন্য কাঠ লাগে এবং জল লাগে। এই কাঠ আনতে এবং জল আনতে অনেক দূর পাড়ি দিতে হয়।
বেহাল স্বাস্থ্য
স্থানীয় প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে ডাক্তার নেই, ওষুধও অমিল। ফলে এখান থেকে অসুস্থ মজুরদের পাঠানো হয় বানারহাটে। সেখান থেকে রেফার করে দেওয়া হয় জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়িতে। অ্যাম্বুলেন্স নেই। ফলে ওই টাকা খরচ করে আসাটাই মুশকিল।
মানভূম আনন্দ আশ্রম নিত্যানন্দ ট্রাস্ট (মান্ট) বলে একটি এনজিও রেডব্যাঙ্কে নিয়মিত যেত, প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাতেই। কিন্তু গত চার পাঁচ মাস ধরে তারা আর ওখানে যাচ্ছে না, বদলে যাচ্ছে কাঁঠালগুড়িতে। কারণ কাঁঠালগুড়িতে মাস ছয়েক আগে অনাহারে মৃত্যু শিরোনাম হয়েছিল।
Leave a Reply