মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন, শিমুলিয়া, ২৪ অক্টোবর#
২৪ অক্টোবর মজলিশ মুশাওয়ারতের নেতৃত্বে সাতটি সামাজিক সংগঠনের এক প্রতিনিধিদল বর্ধমানের খাগড়াগড় ও শিমুলিয়া পরিদর্শন করে। তারা স্থানীয় মানুষজন ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে।
বর্ধমান শহরের মধ্যে খাগড়াগড় এলাকার মানুষের বক্তব্য, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। বর্ধমান স্টেশন থেকে শিমুলিয়া বর্ধমান-কাটোয়া রোডে চল্লিশ পঞ্চাশ কিলোমিটার হবে। শিমুলিয়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিস্ফোরণের ঘটনা খাগড়াগড় থেকে শিমুলিয়ায় টেনে এনে সংবাদপত্রে প্রকাশ করে এলাকার দুর্নাম করছে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত। শিমুলিয়ার মানুষজন বলেন, এখানে বাচ্চা মেয়েরা পড়াশুনা করত। এখানে বোমা বাঁধা হলে এলাকার মানুষ জানতে পারতো না? এখানে কিছুই পাওয়া যায়নি। আমাদের পুকুরগুলি মেরেও কিছু পায়নি। মাঝ থেকে আমাদের মাছগুলি নষ্ট হলো। স্থানীয় প্রশাসন তাদের কোনো অত্যাচার করেনি, তবে ওই বাড়ির কাছাকাছি যেতে দিচ্ছে না।
এলাকার মানুষ সংবাদমাধ্যমের কাজে ভীষণ চটা। তারা তাদের বিরক্তি উগরে দিল প্রতিনিধিদলের কাছে। প্রতিনিধিদলের সাথে মিডিয়ার লোকেদের যাওয়ার কথা ছিল। দলটির যেতে দেরি হওয়ায় মিডিয়ার লোকেরা গ্রামের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা বলল, গ্রামের মানুষ মিডিয়া দেখে বড়ো বিরক্ত হচ্ছে, তাই গ্রামের বাইরে চলে এলাম। তারপরে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিডিয়ার লোকেরা গ্রামে ঢুকলো। গ্রামের লোকের সঙ্গে মিডিয়া কোনো কথা বলল না। প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলল।
শিমুলিয়া মাদ্রাসাটি মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালের। টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মাদ্রাসায় এখন পুলিশ ক্যাম্প। চারদিকে পুলিশ পিকেটিং। মাদ্রাসার গা ঘেঁষে বাড়ির লোকজনরা বলে, মিডিয়া আর প্রশাসন সব সময় বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করে আমাদের বিরক্ত করছে। ঘরে-বাইরে কাজ করব, না ওদের সঙ্গে শুধু কথাবার্তা প্রশ্নোত্তরে সময় দেব?
এইদিন এনআইএ-র ডিজি খাগড়াগড়ে আসেন। প্রতিনিধিদলটি এনআইএ-র ডিজি-র সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু এনআইএ কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়নি। এনআইএ দলটি শিমুলিয়া না গিয়ে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা চলে যায়।
প্রতিনিধিদলটি খাগড়াগড় ও শিমুলিয়া ঘুরে এসে তাদের মতামত জানায় : ১) খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গে দুষ্কৃতিচক্রের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মাদ্রাসা বা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ২) শিমুলিয়া মাদ্রাসায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত বলে বারবার প্রচার মাধ্যমে বলা হচ্ছে, কিন্তু তা এখনও তদন্তের পর্যায়ে আছে। প্রথমত এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার মতো কোনো পরিকাঠামো নেই, দ্বিতীয়ত দুষ্কৃতিরা মাদ্রাসা নাম ব্যবহার করে কোনো দুষ্কর্ম করলে তার জন্য সমস্ত মাদ্রাসাকে সন্দেহের তালিকায় ফেলা যায় না। ৩) মাদ্রাসা ও মুসলমানদের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগসূত্র নিয়ে লাগাতার প্রচার হওয়ায় সংখ্যালঘু মানুষরা শঙ্কিত। রাস্তাঘাটে বোরখা বা ওড়না পরিহিতা মহিলাদের টিপ্পনি করা হচ্ছে, টুপিওয়ালা দাড়িওয়ালা মানুষদের হেনস্তা করা হচ্ছে। ৪) পুলিশ প্রশাসন বা এনআইএ তদন্তের কাজে সাধারণ মানুষ পূর্ণ সহযোগিতা করছে। কিন্তু প্রচার মাধ্যমের অতিরঞ্জিত প্রচারের ফলে এলাকার মানুষের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। ৫) আমরা মনে করি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীরাই সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই প্রশাসন বা প্রচার মাধ্যমের এমন কিছু করা উচিত নয় যার ফলে নিরপরাধ সাধারণ মানুষের প্রতি সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়। ৬) পবিত্র কুরআনের আরবী অক্ষর, ‘নূরানী কায়দা’ নামক আরবী বর্ণ পরিচয় ও ‘ভালো মৃত্যুর উপায়’ ইত্যাদি বই, পুস্তককে জেহাদি পুস্তক হিসেবে উপস্থাপন করা ঠিক হয়নি। এর ফলে মানুষের মধ্যে অহেতুক ইসলামি সাহিত্যের প্রতি ভীতি জন্মাচ্ছে। ৭) জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) যদি এদেশে সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের পুরো নাম বলতে হবে। শুধু জামাত বলে ছেড়ে দিলে সমস্ত সংখ্যালঘু মুসলিম সংগঠন (যাদের অনেকেই জামাত বা জমায়েত শব্দটি ব্যবহার করে সংগঠনের নাম দেওয়ার ক্ষেত্রে) সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দেহ জন্মাবে। ৮) বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা নিয়ে প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা ও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৯) কোনোভাবেই নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে যেন হেনস্থার শিকার না হতে হয়।
প্রতিনিধিদলটি যে সাতটি সংগঠন নিয়ে তৈরি সেগুলো হলো, মুসলিম মজলিশে-এ-মুশাওয়ারাত, জামাআতে ইসলামি হিন্দ, অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রটেকশন অফ সিভিল রাইটস, স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন, পশ্চিমবঙ্গ ইমাম ও মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন, বন্দি মুক্তি কমিটি, ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া।
Leave a Reply