অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভোটে দাঁড়ানো নতুন নয়। তবে এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীপদে তাঁদের অংশগ্রহণ বেশ চোখে পড়ছে। শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রীই নয়, গায়ক চিত্রশিল্পী নৃত্যশিল্পী সকলেই এখন দলীয় রাজনীতির আসরে। মিডিয়ার সামনে তাদের সাফাই, তারা যুবসমাজকে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করতে চান। এটা শুধু একটা ছেঁদো কথাই নয়, যুবক-যুবতীদের নিজস্ব বোধশক্তির প্রতি অপমানও বটে। আমাদের যুবসমাজ দল বা রাজনীতিতে আগ্রহী নয়, কিন্তু তারা দল বা রাজনীতি সম্পর্কে কোনো খবর রাখে না, তা মোটেই নয়। শিল্পী বা অভিনেতাদের চেয়ে তারা দেশের রাজনীতির চালচিত্র সম্বন্ধে মোটেই কম জানে না।
আমাদের ছাত্র ও যুবসমাজ স্বাধীনতা আন্দোলনে, গান্ধীবাদী আন্দোলনে, জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে আন্দোলনে, নকশালবাড়ি আন্দোলনে এবং নানা বামপন্থী আন্দোলনে বারবার স্বাধীনভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে, নিজেদের কেরিয়ার লেখাপড়া ভবিষ্যৎ তুচ্ছ করে আত্মত্যাগ করেছে, প্রাণ পর্যন্ত দিয়েছে। তার মধ্যে এতটুকু অভিনয় বা অন্য কোনো হিসেব-নিকেশ ছিল না যে অভিনেতা-শিল্পীদের অনুপ্রেরণা তাদের দরকার হবে! অত্যন্ত কেরিয়ার-সচেতন অভিনেতা-শিল্পীরা কান-কাটা নির্লজ্জের মতো ভোটের আগে মেক-আপ নিয়ে আসরে নেমে পড়ছেন। যুবসমাজ আজকের দলীয় রাজনীতির মতোই একে ঘৃণা করে।
কিন্তু রাজনীতিতেও এখন অভিনেতাদের বড্ড দরকার। কারণ এই রাজনীতির সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে আজকের ক্ষমতাশালী মিডিয়া, বিশেষত অডিও-ভিসুয়াল মিডিয়া। তাই রাজনীতির চেয়েও বড়ো রাজনৈতিক নেতার আদব-কায়দা, তার মেক-আপ। সে কী বলছে, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সে কীভাবে বলছে, তার বাচনভঙ্গী, তার ড্রেস। এটা রেডিমেড পাওয়া যায় অভিনেতা-অভিনেত্রী-শিল্পীদের কাছ থেকে। অতীতে খবরের কাগজ-রেডিওর যুগে ডান-বাম সকল রাজনীতিতেই দর ছিল শিক্ষক-অধ্যাপকদের, সাজিয়ে-গুছিয়ে বলার দরকার পড়ত। আজ টিভি-ইন্টারনেটের যুগ। শিক্ষক-অধ্যাপকদের চেয়েও আজ দর বেশি অভিনেতা-শিল্পীদের।
Leave a Reply