‘পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের অবস্থা’ শীর্ষক একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হল অ্যাসোসিয়েশন স্ন্যাপ এবং গাইডেন্স গিল্ড-এর পক্ষ থেকে ৩১ মে ২০১৪ দুপুর আড়াইটেয় কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশন’ সভাঘরে। প্রতিবেদনের ওপর কিছুটা আলোচনা করেন কলকাতার কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। এই সভায় হুগলি জেলার একজন ক্ষেত্র-সমীক্ষক শ্রীমতী আজিমা খাতুন তাঁর সমীক্ষার অভিজ্ঞতা নিয়ে সামান্য বক্তব্য রাখেন। এখানে তা প্রকাশ করা হল।#
আমি নিজে ফিল্ডে গিয়ে সার্ভের কাজ করেছি। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছ থেকে যে অভিজ্ঞতা পেয়েছি সেটা হল, গ্রামের মানুষ কেউ আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, কেউ আবার বেরিয়ে যেতে বলেছে। তার কারণ হয়তো এই বক্তব্য যে এরকম রিপোর্ট আমরা দিয়ে যাচ্ছি আর তোমরা নিয়ে যাচ্ছ, আমাদের তো কিছু হয় না। যে লঙ্কায় যায় সেই রাবণ হয়। আমাদের যা অবস্থা সেটাই আছে। তোমরা আবার নতুন করে কী জানবে? আমরা বললাম, দেখুন, আমরা তো ধর্মীয় জায়গা থেকে আসিনি, সরকারের পক্ষ থেকেও আসিনি। আমরা এসেছি মুসলমানদের ওপর একটা সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি করার জন্য একটা সার্ভের টিম থেকে, আমরা মুসলমানদের ঘর-গৃহস্থালি এবং তাদের সামাজিক অবস্থাটা জানতে এসেছি। সেখানে তাদের একটাই কথা ছিল, আমাদের যে অবস্থা তার কোনো পরিবর্তন হয় না।
যারা আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তারা ভেবেছে, আমাদের কাছে হয়তো আমাদের ওপরওয়ালার চলে এসেছে, এবারে হয়তো আমাদের অবস্থার কিছু উন্নতি হবে। আমরা সেখান থেকে এবারে হয়তো কিছু পাব। এরা আমাদের নিয়ে ভাবছে। সেখানে আমরা একটা করুণ দৃশ্য যেটা দেখলাম, বাস্তবিকই মানুষের শিক্ষা স্বাস্থ্য আর সমস্ত দিক থেকে সত্যি মুসলমানরা অনেকটা পিছিয়ে।
রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করছিলেন একজন ভদ্রমহিলা, তিনি বললেন, আপনি কি পারবেন, আমার মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা, দুটো বই দিতে? আমার খুব খারাপ লেগেছিল। আমি বলতে পারিনি যে ওই বই দুটো আপনাকে দেওয়া হবে। কিন্তু আমি বলে এসেছিলাম, আমরা চেষ্টা করছি যাতে আপনারা সেই জায়গায় যেতে পারেন, আপনার মেয়ে যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেটা আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব। কেউ জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা তো শিক্ষিত ছেলেমেয়ে, তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা যে এইসমস্ত করতে এসেছ, তোমরা কী পেয়েছ? আমি বলেছি, আমরা চাইলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অবশ্যই কিছু ফল পাবে, সেইজন্যই আমরা খাটছি। সেইজন্য আপনারা আপনাদের অবস্থাটা বলুন। কেউ বলেছে, আবার কেউ বলতে চায়নি। তার অনেকগুলো কারণ। সরকারের কাছ থেকে তারা অনেককিছু পায়নি, তাদের মনে অসন্তোষ জন্মেছে। কিন্তু যারা বলেছে, তাদের মনে বিশাল বড়ো আশা।
আমাদের মুসলিম সমাজে আমরা যেটা সবচেয়ে বেশি এই সমীক্ষায় পেয়েছি, আজকাল তারা … আপনার ছেলেদের লেখাপড়া না শিখিয়ে বাইরে কেন পাঠালেন? তারা বলেছে, সরকার কি আমাদের কোনোদিন সার্ভিস দেবে? কোনোদিনই দেবে না। এমএ পড়ো, বিএ পড়ো আর যাই পড়ো, কিছুই পাবে না। আমি তাদের যেটা বলে এসেছি, আপনাদের কিছু হবে। আমার এখানে প্রশ্ন, আমি যেটা বলে এসেছি সেটা কি সত্যি হবে? তাদের আশা কি পূর্ণ হবে?
Leave a Reply