তমাল ভৌমিক, কলকাতা, ৩০ নভেম্বর#
২৯ নভেম্বর ২০১৪ রাতে অশোক সেকসেরিয়া মারা গেলেন জিডি হাসপাতালে। কয়েকদিন আগে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে ফিমার বোন ভেঙ্গে গিয়েছিল তাঁর। দিন তিনেক আগে ফিমার বোন অপারেশন করা হয় জিডি হাসপাতালে। তারপর পরপর দুটো স্ট্রোক হয়, যার ধাক্কা আর সামলাতে পারেননি আশি বছর বয়স্ক এই সমাজকর্মী ও সাহিত্যসেবী।
১৯৩৪ সালে তাঁর জন্ম। এই শেষ বয়সে এসেও উনি ‘সাময়িক বার্তা’ নামক পত্রিকার দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। তাঁর বন্ধু সুনীলের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত এই উল্লেখযোগ্য হিন্দি পত্রিকার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রায় চলৎশক্তিহীন হয়ে দীর্ঘ দিন কাটাচ্ছিলেন অশোকজী শারীরিক নানা অসুস্থতার কারণেই। তার মধ্যেই যতটুকু পারেন কাজ চালিয়ে যেতেন। অল্প কিছুদিন আগেই ফোনে যাদবপুরের ‘হোক কলরব’ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন, যাদবপুরের ছাত্রী, আমার মেয়ের কাছে ওই আন্দোলন সম্বন্ধে তাঁর কাগজে সংবাদ ছাপানোর উদ্দেশ্যে।
আমাদের সংবাদমন্থনের তিনি নিয়মিত পাঠক ছিলেন। মাঝেমধ্যে খবরও পাঠিয়েছেন — সাময়িক বার্তার সুনীলকুমারের প্রয়াণের পরে তাঁর সম্পর্কে শোকবার্তা লিখে পাঠিয়েছিলেন এই বছরেই। তার আগে ভারতীয় ভাষা সাহিত্য পরিষদে কর্মচারী আন্দোলনেরও রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন অশোকজী। হিন্দি ও বাংলা দুটো ভাষাতেই তিনি বলতে পারতেন ভালো। বাংলাটা লিখতেও পারতেন, তবে হিন্দির মতো ততটা ভালো নয়।
অনেক হিন্দি ও বাংলা সাহিত্যিক তাঁর বাড়িতে যেতেন ভারতীয় ভাষা সাহিত্য পরিষদের সুবাদে। সমাজকর্মী হিসেবে গান্ধীবাদী ও বামপন্থী উভয়পক্ষের অনেক কর্মী-সংগঠকেরও যোগাযোগ ছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি অবশ্য এসব গল্প বা নিজের গল্প কখনো বলতেন না, পাছে আত্মপ্রচার হয়ে যায়। খুবই সাধারণভাবে থাকতেন অভিজাত ঘরের এই মাড়োয়ারি সন্তান। তাঁর ঘরে থাকত একটা ছোটো খাট, একটা চেয়ার একটা ল্যান্ডফোন আর দেওয়ালের র্যাকে ও ঘরের মেঝেতে রাখা নানা বইপত্র। তার ঘরের পাশের ঘরে তাঁরই আশ্রয়ে এক মহিলা স্বামীপুত্র নিয়ে তাঁর মেয়ের মতো থাকতেন ও অশোকজীকে দেখভাল করতেন। এই মহিলাকে লেখাপড়া শিখিয়ে এই মহিলারই আত্মজীবনী লিখিয়েছিলেন তিনি। এরকম আরও অনেক কথা জানা যায় তাঁর সম্পর্কে যার থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।
তাঁর সঙ্গে একদম এই শেষের দিকে যোগাযোগ রাখতে পারিনি নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে। ফিমার বোন ভাঙ্গার ঠিক আগেই ফোনে কথা হয়েছিল শিগগিরি লর্ড সিনহা রোডে তাঁর বাড়িতে একদিন যাব বলে। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে গেলেন। মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। এমনও একটা ভালোমানুষ যার সঙ্গে দুদণ্ড কথা বললেও প্রাণটা ঠান্ডা হত। যারা ওঁর কাছাকাছি গেছে তারা জানে মানুষটা সবসময় নিজের কথা ভুলে অন্যের কথা ভাবতেন।
Leave a Reply