শহুরে উন্নয়নের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে উচ্ছেদ — একথা গত কয়েক বছরে মোটামুটি বোঝা গেছে। সে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে সেজ বা বড়ো শিল্পের উন্নয়ন হোক অথবা শহরের রাস্তাঘাট বা বস্তির উন্নয়ন — সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে সাধারণ কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের বাস্তুচ্যুত বা জীবিকাচ্যুত হওয়ার ভবিতব্য। নির্দিষ্ট ঘটনাগুলিতে স্বীকার না করলেও নীতিগতভাবে উন্নয়নের সঙ্গে উচ্ছেদের অবিচ্ছেদ্য বাঁধনের কথা মেনে নিয়েছে সরকারও। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন যে আইনগুলো করেছে, তার কয়েকটিতে পুনর্বাসন শব্দটি তাই জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন, ২০১৩ সালের নয়া জমি অধিগ্রহণ আইনে রয়েছে।
কিন্তু গ্রামীণ উন্নয়নও বোধহয় বিতর্কের ঊর্দ্ধে নয়। সম্প্রতি রাজনৈতিক সন্ত্রাসে বিদ্ধ মাকড়া গ্রামে গিয়ে তার ইঙ্গিত মিলল। একশো দিনের কাজের কর্মসূচি আপাতদৃষ্টিতে যতই জমকালো হোক, বাস্তবে তা জন্ম দিয়েছে দুর্নীতির। শ্রম দিয়ে পুকুর খোঁড়ার বদলে মেশিন দিয়ে পুকুর খুঁড়ে নেতারা টাকা হাপিশ করে দিচ্ছে। কাজ যারা করল, তাদের ওপর জোর খাটিয়ে প্রাপ্যের চেয়ে কম টাকা দিয়ে আত্মসাৎ করছে পঞ্চায়েত মেম্বাররা। ঢালাই রাস্তার কাজে কন্ট্রাক্টরকে চাপ দিয়ে টাকার বখরা নেওয়া হচ্ছে। টাকা এসেছে, সেই টাকার বিতরণ নিয়ে চোরাগোপ্তা মারধোর খুনোখুনি নয়, রীতিমতো অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে ‘যুদ্ধ’ বেধে গেছে গ্রামে।
শহুরে উন্নয়নের মতোই গ্রামীণ উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচিকেও আহ্লাদভরে দেখা, কতটা কী হল তার হিসেব-নিকেশ করা নাগরিক ও রাজনৈতিক সমাজের নিত্যকার কাজ। হয়তো তার কিছু প্রয়োজনও রয়েছে। তার আড়ালে রয়ে যায় সমাজের ভেতরের ভেঙে যাওয়ার কান্না। নেতারা আর সাংবাদিকরা শহুরে নিরাপত্তায় বসে রাজা উজির মারে। কিন্তু মাকড়ার তৌসিফ আর মোজাম্মেলের মা-দাদা-দিদি-বোনরা ভেঙে যায় আতঙ্ক আর বোবা কান্নায়। রাষ্ট্রীয় রাজনীতির চেনা বয়ানে তার হদিশ থাকে না।
Leave a Reply