অনন্যা সিংহ রায়, কোচবিহার, ২৪ জুন#
শেষ অবধি গ্র্যাজুয়েশনের পরীক্ষাটা শেষ হয়েই গেল। আগে এই ব্যাপারে ভাবিনি, শেষ হওয়ার পর ভাবতে বসলাম এবারে কী করব? এতদিনতো বেশ আনন্দেই কাটত হোস্টেল জীবন? এবারে কী?
বাবা বললেন এমএ করতে, আবার কেউ কেউ বিএড করার পরামর্শ দিলেন। অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, আগে এমএ করাটাই সবচেয়ে ভালো। তাই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করলাম কোথায় কোথায় এই এডুকেশন বিষয়টা আছে, কবে থেকে ফর্ম দেবে ইত্যাদি, আর তাতেই যা জানতে পারলাম তাতে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
সব ইউনিভার্সিটির নিয়ম হচ্ছে অন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নেবে, সেটাও নেবে এন্ট্রান্স পরীক্ষার মাধ্যমে আর নিজেদের ছাত্রছাত্রী নেবে বাকি ৬০ শতাংশ। বেশ ভালোই খুশিতে ছিলাম তারপরই জানতে পারলাম আমার ইউনিভার্সিটি মানে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার গ্রাজুয়েশনের বিষয় এডুকেশন-এ এমএ করার কোনো সুযোগই নেই, কারণ এখানে এখনও সংস্কৃত আর এডুকেশন বিষয়দুটিতে এমএ করা যায় না। তার উপর আমি আবার জেনারেল ক্যাটেগরির, ব্যাপারটা আরও কঠিন হয়ে গেল।
যাই হোক কপালে যা আছে তাই হবে এই ভাবনা নিয়ে ফর্ম ফিল আপ করা শুরু করলাম। যাদবপুরে অন্য ইউনিভার্সিটির জেনারেল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে মাত্র ২টা আসন। বিশ্বভারতীতে সেরকম কোনো নোটিস ছিল না। ফর্ম ফিল আপ করলাম, চালান জমা দিলাম, পরীক্ষা দিতেও এলাম, কিন্তু ওনারা জানালেন ফাইনাল বর্ষের মার্কশীট ছাড়া পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। এবার মজা হল আমরা সবাই ফর্ম-এ ণ্ণঅ্যাজ অ্যান অ্যাপিয়ারিং স্টুডেন্ট’ হিসেবে ফিল আপ করেছিলাম। অনেক বলা হল বিনয় ভবনের প্রিন্সিপালকে, উনি যা ব্যবহার করলেন তা অতুলনীয়। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এরকম ব্যবহার অনাকাঙ্খিত — জানি না এটা কী ধরনের ব্যবসা। নেট-এ যদি অ্যাপিয়ারিং স্টুডেন্টরা পরীক্ষা দিতে পারে সেখানে আমরা সামান্য এন্ট্রান্স পরীক্ষাও দিয়ে পারব না, যেখানে আমাদের এমএ করার জন্যে অন্য ইউনিভার্সিটির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পরীক্ষা দিতে না পেরে হতাশ হয়ে আমরা ওখান থেকে চলে এলাম বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওখানে এসে জানলাম এডুকেশনে এমএ নেই, আর এবারে খোলার কথা ঠিক নেই কিছু, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই। ২৭ জুন পরীক্ষা দিতে আমরা যাব কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আমাদের পক্ষে কিভাবে দৌড়ে বেড়ানো সম্ভব? এতদিনের প্রাচীন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কি উচিত ছিল না সংস্কৃত আর এডুকেশনে এমএ পাঠক্রম চালু করার? এমনকী ফিজিওলজিতেও এমএসসি করার সুযোগ নেই এখান থেকে। যে বিষয়গুলোতে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ দিতে পারবে না সেই বিষয়গুলোকে এতদিন ধরে গ্র্যাজুয়েশন স্তরে রাখার যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আমার বিষয়ে শিক্ষকতা করতে গেলে এমএ করতেই হবে — এডুকেশন বিষয়টা মাধ্যমিক স্তরে আসবেই না, উচ্চমাধ্যমিকে আসবে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন?
Leave a Reply