সঙ্কলক রামজীবন ভৌমিক, ১৩ জুলাই#
২৯ জুন বক্সা বাঘবনে একটি চিতল হরিণ পাড়া লোকালয়ে মানুষের হাতে ধরা পড়ে।
আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ায় এক অধিবাসীর রান্নাঘর থেকে গোখরো সাপ উদ্ধার হয় এবং আলিপুর দুয়ারেই ইটখোলা দেশবন্ধু প্রাইমারি স্কুলের দশম শ্রেণীকক্ষের ছাদ থেকে নেমে আসে দুটি কেউটে সাপ, ১ জুলাই। স্কুল ছুটি দেওয়া হয় দ্রুত।
খড়িবাড়ি থানার বুড়োগুঞ্জের গুয়াবাড়িতে ডুমুরিয়া নদীর তীরে আট ফুট লম্বা অজগর একটি ছাগল ছানাকে সাবাড় করে। কৌতূহলী জনতা অজগরটিকে ঘিরে ফেলে। ণ্ণকেয়ার ফর নেচার’-এর সদস্যরা অজগরটিকে উদ্ধার করে নকশালবাড়ির টুকুরিয়া বনদপ্তরের হাতে তুলে দেয়।
কোচবিহারের মাথাভাঙা মহকুমার ভবেরহাট ১২এ রাজ্য সড়কের পাশে লাইন ট্র্যাকের আঘাতে একটি বড়ো আকারের প্যাঁচা রাতে জখম হয়। পরদিন সকালে চা বিক্রেতা শুভেন্দু দাস প্যাঁচাটিকে প্রাথমিক শুশ্রূষা দিয়ে মাথাভাঙা রেঞ্জ অফিসে পৌঁছেছেন (১০ জুলাই)।
একই দিনে চিলাপাতা জঙ্গল থেকে চারটি বাইসন দিক হারিয়ে জঙ্গল সংলগ্ন মাথাভাঙার শৌলমারি ও লতাপোতা জনবসতি এলাকায় আটকে পড়ে। ভিড় করা জনতার চিৎকার ও হুড়োহুড়িতে ঘাবড়ে গিয়ে বাইসনরা বাঁচার জন্য এলোপাথারি ছুটতে থাকে। বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ আহত হয়। খবর পেয়ে বনকর্মী এসে দুটি বাইসনকে ঘুম পাড়ানি গুলি করতেই বাইসনদুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বাকি দুটি বাইসনকে বনে ফেরাতে সক্ষম হয়।
হাতির দল বনে খাবার পাচ্ছে না। বনবস্তিতে নতুন ধরনের লাভজনক ভুট্টা চাষের মরশুম চলে গেছে, তাই বনের পাশের সহজ খাবারও শেষ। খাবারের সন্ধানে এবার লোকালয়ে, বনবস্তির শ্রমিক আবাসে হানা দিচ্ছে হাতির পাল। জয়গাঁর পাশে দলসিং পাড়ার এক ব্যবসায়ীর গুদাম ভেঙে হাতি চিপস কুড়কুড়ের প্যাকেটসুদ্ধ বস্তা নিয়ে পালিয়েছে, ১ জুলাই।
১০ জুলাই রাতে তিনটে বুনোহাতি বীরপাড়া চা বাগানে বেশ কিছু শ্রমিকআবাস ভেঙে রান্না ঘরের চাল, গম খেয়ে নেয়। হাতির দলকে তাড়াতে বনবস্তির মানুষেরা, শ্রমিকআবাসের শ্রমিকরা চকোলেট বোম, টর্চ কিনে রাতভর নিজেরাই ঘরবাড়ি পাহারা দিচ্ছে। সামান্য সংখ্যক বনকর্মীর পক্ষে বন রক্ষার ভার সামলানো,
সাথে লোকালয়ে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা আটকানো সম্ভব নয়। হাতির দল ঘরবাড়ি ভেঙে দিলেও চা শ্রমিক বা বনবস্তির মানুষেরা হাতিকে সাক্ষাৎ মহাকাল বাবা জ্ঞানে পুজোও করে।
ট্রেনের ধাক্কায়, মানুষের আক্রমণে এক সপ্তাহে চারটি হাতির মৃত্যু
এই পুজোর করুণ দৃশ্য দেখা গেল হাসিমারার কাছে মধু চা বাগানের বি-১ সেকশনে আর্মি স্পেশাল ট্রেনের ধাক্কায় দুটি হাতির মৃত্যুর পর। হাতির দল রেললাইনের আশেপাশে দু-তিনদিন ধরে ঘোরাফেরা করছে। এ খবর বন দপ্তর ও রেলদপ্তর উভয়ের কাছে ছিল। রেল লাইন ডানদিকে বেঁকে গেছে। রাত দুটো নাগাদ হাতির দল রেল লাইনের বামদিক থেকে লাইনে উঠে আসছিল। রাতে ট্রেনের আলো বাঁক ঘুরতে গিয়ে অনেক দূর থেকেই হাতির পালের ওপর পড়েছিল। নিশ্চয়ই ট্রেনের গতিবেগ এত বেশি ছিল যে ব্রেক কষে হাতি দুটোকে বাঁচানো যায়নি। ছুটন্ত ট্রেনের আঘাতে চার পাঁচ বছরের শাবক হাতি ১০০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে। গর্ভবতী মা হাতি কিছুদিন পরেই শাবকের জন্ম দিত, সে ট্রেনের চাকায় পেঁচিয়ে মারা যায়। ২ জুলাই কোচবিহার মাউন্টেনিয়ার্স ক্লাব হাতির মৃত্যুতে শোকসভা পালন করে।
বাগডোগরায় একটি হাতি মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। হাতিটির বাঁ পায়ে কেউ গুলি করায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। ৩০ জুন মাদারিহাট থেকে দুটি কুনকি হাতি নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার শুশ্রূষার জন্য।
৩ জুলাই ব্যাঙডুবি টাইপু বিটের বনাঞ্চলে একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির মৃত্যু ঘটে। হাতিটির শরীরে অন্তত ১৪টি আঘাত-ক্ষতের চিহ্ন ছিল এবং দুটি চোখ খুঁচিয়ে অন্ধ করা ছিল বলে বনাধিকারিক জানান।
৯ জুলাই কার্সিয়াং বনবিভাগের বামনপুথরি বনাঞ্চলে একটি মাকনা হাতির মৃত্যু হয়েছে। কেন কীভাবে মারা গেল সে, তা এখনো জানা যায়নি।
৩০ জুন থেকে ১৩ জুলাই দৈনিক উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের ২২টি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে ১৩টি হাতির খবর, ৩টি সাপের, ২টি বাইসনের, ১টি চিতল হরিণের, ১টি প্যাঁচার, ১টি অদ্ভুত দর্শন মাছের (ক্রোকোডাইল ফিশ) ও একটি বুনোবিড়ালের।
Leave a Reply