পাটুলি বাইপাসে উচ্ছেদ হওয়া হকার নতুন করে ট্রলি নিয়েই বসতে চলেছে। কিন্তু আগে তো তারা ওই দোকানেই একচিলতে জায়গায় রাত্রেও থাকত। তার কী হবে?
বাইপাসের ধারেই ভাতের হোটেল চালাতেন বয়স্কা কণিকা নস্কর। তাঁরা স্বামী স্ত্রী ওখানেই থাকতেন। তাঁদের দরমার হোটেলের ঘরটি ভাঙার পর তাঁরাও ওই পাটুলি টেলিফোন ভবনের সামনে দরমা দিয়ে নতুন ঠিকানা গড়েছেন। এখানেই আবার হোটেল খুলেছেন। তবে কাস্টমার নেই বললেই চলে। কয়েকজন পরিচিত রিক্সাওয়ালা আছে, তাদেরকে বলে কয়ে নিয়ে আসা হয়, আর একজনকে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসেন। কোনোভাবে দু’জনের দুবেলার খোরাকিটুকু চলে যায়।
কথা হল গণেশ মন্ডল ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জু মণ্ডলের সাথে। মেয়েকে নিয়ে তাঁরাও টেলিফোন ভবনের পাঁচিলের
গায়ে ঘর বেঁধেছেন। পাশেই ভাঙা দোকানের জিনিসপত্র সব পড়ে রয়েছে। রয়েছে দোকানের আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোচরণের এই বাসিন্দারা প্রায় বারো-তেরো বছর বাইপাসের ধারে পাটুলির মোড়ে দোকান দিয়েছিল। আগে গড়িয়ার দিকেই ভাড়া থাকত। পরে ভাড়া আর না থেকে ওই দোকানেই থাকতে শুরু করে। দোকানটা প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে আর দরমা দিয়ে বানানো। টালি দেননি? জিজ্ঞেস করাতে গণেশ বললেন, না, পার্টির (সিপিএম) বয়স্করা বলেছিল, টালি দিলে লোকের চোখে পড়ে যাবে।
গণেশ আগে গ্রিল ও প্যারিসের কাজ করতেন। বাইপাসে তাঁর স্টেশনারি দোকানটি ভাঙার পর এখন আবার সেই পুরোনো গ্রিলের কাজ করছেন। নিজেস্ব ভ্যান রিক্সা থাকায় তাঁর কাজের কিছুটা সুবিধা রয়েছে। বললেন, রাস্তার পাশেই এখন তিনি ট্রলি করে দোকান লাগাবেন। ভাঙার আগে আগে কয়েকটা শোকেস বানিয়েছিলেন দোকানের জন্য, সেগুলোকে ট্রলির মধ্যে সেট করবেন। ট্রলি গাড়ির জন্য চারটি বেয়ারিং চাকা কিনে এনেছেন, যার দাম ১৪০০ টাকা। গ্রিলের লোহা দিয়েই গণেশ ট্রলি বানাবেন ধীরে সুস্থে। মাঝে গোচরণে বাড়ি গিয়েছিলেন। ওখানে মায়ের মাটির দেওয়াল ভেঙে পড়েছে ক’দিন আগের কালবৈশাখী ঝড়ে, সেটা মেরামত করতে হল। মা এখন বাড়িতে গিয়ে থাকতে বললেও তাঁরা থাকতে পারছেন না। কারণ দোকানের জিনিসপত্র ছড়ানো ছেটানো রয়েছে এখানে।
কথা হল আয়লা ঝড়ের পর গোসাবা থেকে আসা কাকুলি কয়াল ও সুশীলা মৃধার সঙ্গে। তাঁরাও এখানে এসে বাইপাসের ধারে ঘর বেঁধেছিলেন। এখন এখানে একজন ঘর করেছেন, আরেক জন ভাড়া থাকেন। লোকের বাড়ি ঠিকে কাজ করেন তাঁরা। আমাদের প্রশ্ন করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কোনো পুনর্বাসনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছি কিনা। আমরা বললাম, না, আমাদের একটা ছোটো কাগজ আছে।
ওদিকে বাইপাসের হাইল্যান্ড পার্ক বিগবাজারের আশেপাশের হকাররা নতুন করে বসতে শুরু করেছে আগের জায়গাতেই, পুলিশি জুলুমকে উপেক্ষা করে। ইতিমধ্যে তারা ‘হকার সংগ্রাম কমিটি’র মাধ্যমে নিয়মিত নিজেদের সংগঠিত রেখেছে। বিভা মণ্ডল জানালেন, প্রায় ৫-৬ হাজার হকার ১১ মে সল্টলেকের পুর্ত ভবনে ডেপুটেশন দিয়েছে মন্ত্রীর কাছে, যাতে তাদের এভাবে উচ্ছেদ না করা হয়। পাশাপাশি তারা পুলিশি জুলুমবাজিরও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
শ্রীমান চক্রবর্তী, পাটুলি, ১১ মে। ছবি শমীক সরকার
Leave a Reply