১৭ জুলাই, জিতেন নন্দী, সন্তোষপুর, মহেশতলা#
রমজান মাস চলছে। ঘরে ঘরে চলছে রোজা বা উপবাস। সামনে ঈদের পরব। সন্ধের মুখে সন্তোষপুর স্টেশনের ২নং প্ল্যাটফর্মের ওপর শহীদুলের দোকান ফাঁকা। পাশের চপ্পলের দোকান এখনই গুটিয়ে দিচ্ছে। শহীদুল ফিবছর বর্ষায় ছাতা বিক্রি করে। এবছর দোকানের ওপরের তারে গুটিকয়েক কালো ছাতা ঝুলছে। নিচের তক্তার ওপর আর পিছনের রেলের রেলিং জুড়ে বাচ্চাদের রঙিন নতুন নতুন জামা প্যান্ট ফ্রক। হঠাৎ হঠাৎ ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি আসছে। মেঘের তেমন তর্জন-গর্জন নেই, নিঃশব্দে নেমে আসছে জলধারা। আবার থেমে যাচ্ছে, নিমেষে শুকনো। বৃষ্টি এলেই প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিতে হয় মালপত্র, না হলে ভিজে সব একসা হবে।
শহীদুল বলে, ‘এখন তেমন বিক্রিবাটা নেই। পনেরো রোজার পর বাজার জমবে।’
— কেন?
— যারা ফান্ডে পয়সা রাখে, পনেরো রোজার পর পয়সাটা হাতে আসে। তখন সব কেনাকাটা করবে।
— ফান্ডে পয়সা রাখলে কিছু সুদ পাওয়া যায় নিশ্চয়?
— সুদ-টুদ দেয় না। একটা লটারি হয়। জমানো টাকার সঙ্গে একটা গিফ্ট দেয়। কাউকে বালতি, কাউকে গামলা, যার ভাগ্যে যেমন ওঠে। একটা জিনিস দেয়, এক্সট্রা পয়সা দেয় না।
— আশ্চর্য! টাকা জমালে ইন্টারেস্ট দেবে না? ব্যাঙ্কে-পোস্টাপিসে তো দেয়।
— সে জানি না। অল্প টাকা, হাতে রাখলে সংসারে খরচ হয়ে যায়। তাই লোকে ফান্ডে জমা রাখে। কেউ সপ্তাহে জমা দেয়, কেউ মাসে — সামান্য টাকা। মোটা টাকা রাখলে হয়তো সুদ-টুদ পাওয়া যেত। আমার জানা নেই।
ওই তো সামনে রেলগেটের আগে যে দোকানটা, লাভলি স্টোর্স, ওদের ফান্ড আছে। ওরা টাকা জমা রাখে। পনেরো রোজার পর টাকাটা একাট্টা করে ফেরত দেয়। ঈদের পর আবার জমানো শুরু হবে।
আর একটা ফান্ড আছে, ওটাকে বলে ঈদের ফান্ড। এই ধরুন। দশজনে মিলে মাসে মাসে একশো টাকা করে জমা রাখা হল। প্রতি মাসে লটারি হবে, তাতে যার নাম উঠবে, তাকে ধরুন পাঁচহাজার টাকা দেওয়া হল। আবার পরের মাসের লটারিতে আর একজন পাবে। কিন্তু সবাইকেই প্রতি মাসে একশো টাকা করে দিয়ে যেতে হবে।
Leave a Reply