স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে সম্প্রতি। সেই উপলক্ষ্যে কলকাতায় এসেছিলেন ভগৎ সিং-এর ভগ্নীপুত্র জগমোহন সিং। ১১ মে আমরা কয়েকজন তাঁকে নিয়ে একটি ঘরোয়া আলাপে বসেছিলাম। বিষয় ছিল, স্বাধীনতা আন্দোলনের দিনগুলিকে আমরা কী চোখে দেখব। অধ্যাপক জগমোহন বলেন, ইতিহাসের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হয়, কারণ, আমরা এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, সেই যাত্রাপথের ধারণাটা আমরা পাই ইতিহাসের কাছে। কিন্তু ইতিহাস কি ব্যক্তি নিরপেক্ষ? ধরা যাক, ১৯৮০-র দশকে পাঞ্জাব আন্দোলনের সময় ভগৎ সিং-কে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তার সঙ্গে ইতিহাসের সম্পর্ক কতটা? আমাদের এই প্রশ্নের জবাবে জগমোহন বলেন, ইতিহাসকে মানুষ নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে ব্যবহার করে। সেই সময় যুবকদের বলা হচ্ছিল, হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে একটা খুন করে এসো, ভগৎ সিং হয়ে যাও। এটা ইতিহাস বিকৃতি। ভগৎ সিং এই রাজনীতি করেননি। কিন্তু এটা বন্ধ করা যাবে না। ইতিহাস জনসমাজের সম্পত্তি। কে কখন তাকে কীভাবে ব্যবহার করছে, তার ওপর নজরদারি চলে না। আমরা যেটা করছি, ইতিহাসের তথ্যগুলো সাজিয়ে দেওয়া। বিরোধী মতগুলো পাশে রাখা। যে যেমন ভাবে ব্যবহার করে।
কিন্তু প্রত্যাশিত স্বাধীনতা কি আমরা পেয়েছি? এই স্বাধীনতা নিয়ে গর্ববোধ করবেন কেন? জগমোহনজি বলেন, দেশের সম্পদ লুঠ হয়ে যাচ্ছে। যেটুকু স্বাধীনতা আমরা পেয়েছিলাম, সেটাও কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, তা বোঝার জন্য আমাদের ইতিহাসটা জানা দরকার। কিন্তু ১৯৪৭ সালে আমরা যা পেয়েছিলাম, সেটা কি স্বাধীনতা, নাকি ক্ষমতার হাতবদল? বিষয়টি নিয়ে মতভেদ আছে, বিতর্ক আছে। আবার অনেক গালগল্প প্রচলিত আছে। যতদূর সম্ভব নির্ভুল তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হোক। ১৯৪২ সালের আন্দোলনেও অনেক মতভেদ আছে। সবকটি পাশাপাশি রাখা হোক।
আজকে ভারতে যে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চলছে, তার সঙ্গে ভগৎ সিং বা সূর্য সেনের যুগের কি তুলনা করা যায়? জগমোহন বলেন, সন্ত্রাসবাদ শব্দটিতেই তাঁর আপত্তি আছে। ভগৎ সিং বা সূর্য সেন কেউই সন্ত্রাসবাদী ছিলেন না। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি এক কথায় মন্তব্য করতে চান না। কোথায় কারা কীভাবে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে তা জানার জন্য সেইখানে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কিছুদিন থাকা দরকার। তা না করে কোনো মত দেওয়া যায় না।
আলোচনা শেষে সকলে একমত হন, স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের অনেক মত থাকলেও সংগ্রামের ইতিহাস আত্মত্যাগের ইতিহাস বিলুপ্ত হয়ে যায় না। এমনকী স্বাধীনতার পর প্রথম কুড়ি বছরের ইতিহাসটাও গুরুত্বপূর্ণ। সেই কথা মনে রেখেই গড়ে তুলতে হবে ওয়েবসাইটটি।
সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৫ মে
Indranil Saha says
What is the address of the site?
admin says
http://www.towardsfreedom.in