সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ১৩ জুলাই#
২১ জুন কলেজ স্ট্রীটে র্যাডিকাল হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাঘরে ণ্ণআয়লার পাঁচ বছর পর কেমন আছে সুন্দরবনণ্ণ শীর্ষক একটি আলোচনা হয়। সেখানে অমিতাভ চক্রবর্তী এবং অমিতেশ মুখার্জি দুটি বক্তব্য রাখেন। সভাতে আরও অনেকে ছোটো ছোটো করে বলেন। সভার শুরুতে ণ্ণআয়লাণ্ণ নামে একটি মূকাভিনয় করে দেখান সুশান্ত দাস।
অমিতাভ বলেন, যেটুকু পর্যবেক্ষণ করছি, সেটা হচ্ছে, সুন্দরবনের নদীবাঁধের সমস্যাটা ২০০৯ সালে যা ছিল, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি প্রকট। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২২ শতাংশ বাঁধ তারা মেগা সাইজের তৈরি করে দেবে। তার মানে সরকার নিজেই বলে দিয়েছিল, তারা একশো শতাংশ বাঁধ করবে না, বা বাঁধের বিকল্প কিছুও করবে না। মজাটা হল, সরকার যে ২২ শতাংশ জায়গায় নদীবাঁধটা তৈরি করবে সেখানেই নদীটা এসে আঘাত করবে তা তো নয়। সরকার নিজেও কিছু সামগ্রিক সুরক্ষার কথা বলেনি। সেই ২২ শতাংশের মধ্যে সরকার ২ শতাংশও করেনি। … সুন্দরবনে ব্রিটিশ আমলে বাঁধগুলো তৈরি হয়েছিল। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আর কিছুই করা হয়নি। তারপর আয়লার সময় অনেকগুলো বাঁধ ধুয়েমুছে গেল। তখন সরকার বলল, হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা। যা বলেছিল, তার একশো ভাগের একভাগ হয়তো করেছে। তার ফলে এখন জায়গাটা অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে গেছে। এখন আয়লার সিকিভাগ একটা ঝড় হলে সুন্দরবনে আয়লার চেয়ে ক্ষতিকর পরিস্থিতি হবে।
অমিতাভ আরও বলেন, এখন সুন্দরবনের গ্রামগুলোতে একটা হলদে রঙের বড়ো বড়ো যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। প্রথম দেখেছিলাম নদী বাঁধে। এখন দেখা যাচ্ছে গ্রামে। যন্ত্রগুলো সবদিকেই চলে। তার হাতে বড়ো বড়ো হাতা আছে, খুন্তি আছে। এক জায়গার মাটি কেটে নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় ফেলে। দুশো মানুষের কাজ একা একটা যন্ত্র করে দিতে পারে। এখানে পুকুর কেটে দিল, ওখানে মাটি ঠুঁসে দিল। সবই ওই যন্ত্র পারে। এই যন্ত্রের ব্যবহার প্রথম দেখেছিলাম আয়লার পর, যখন নদীবাঁধ তৈরি করা শুরু হল। নদীবাঁধটা আর হল না। এখন এই যন্ত্রে সুন্দরবন ছেয়ে গেছে। এখন চাষের মরশুমে, যেহেতু সুন্দরবনে শ্রম দেবার মানুষ নেই, তাই ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে এই যন্ত্রের ব্যবহার। ধান কাটার, ঝাড়ার, জন দেবার মানুষ তো নেই। মানুষ এখন আন্দামান, দিল্লি চলে গেছে। এখন যন্ত্রগুলো পিলপিল করছে। সব বেসরকারি যন্ত্র। আমি যে কটা যন্ত্র দেখেছি, বেশিরভাগেরই মালিক বজবজের একটা লোক। ভাড়া, তস্য ভাড়া ঘুরে আজ তা সুন্দরবনে। … আগে ধরুন আমার দশবিঘা জমি আছে। ঘরে বউ ছেলে বউমা মেয়ে আছে। কিন্তু মজুর না নিয়ে দশবিঘা চষা সম্ভব ছিল না। এখন যদি ছেলে বউমা বাইরে চলেও যায়, এই যন্ত্র একদিনেই দশবিঘা চষে দিয়ে চলে যাচ্ছে। ঘর তৈরি করা, পুকুর কাটার জন্য আর মানুষের দরকার হচ্ছে না।
এখানে সায়ন্তন বেরার একটা লেখা ওর অনুমতি নিয়েই ছাপিয়ে আনা হয়েছে, আপনারা দেখতে পারেন। সেখানে অনেক খতিয়ান আছে। কেন্দ্র থেকে কত টাকা দিয়েছে, তার কতটা খরচ হয়েছে প্রভৃতি। ওই পরিসংখ্যানগুলো জানাটা জরুরি। কিন্তু যে ক্ষতিটা হয়ে গেছে তা কোনো খতিয়ানে আসবে না, সেটা বাঁধটা বায়োডিগ্রেডেবল না নন বায়োডিগ্রেডেবল সেই তথ্যে আসবে না। এটা সভ্যতার ক্ষতি। আয়লা আমাদের শিক্ষক। আয়লার শিক্ষাটা অনেক বেশি করে মানবিক, সামাজিক। মানুষের সাথে প্রকৃতির চাইতে মানুষের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক, আয়লা সেটাকে বেআব্রু করে দিয়ে গেছে।
Leave a Reply