সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৫ জুলাই, কাজিরাঙার মৃত্য পশুর ছবি সংবাদসংস্থা থেকে পাওয়া#
প্রতি বছরের মতো এবারও আসামে বন্যা হয়েছে, তবে এবারের বন্যা এক দশকের মধ্যে ভয়াবহ। ব্রহ্মপুত্র এবং তার উপনদীগুলির জল উপচে গিয়ে আসামের সাতাশটি জেলার অন্তত চব্বিশ লাখ মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের সরকারি হিসেবে এখনও অবধি একশো চব্বিশ জন মানুষ মারা গেছে বন্যায়, আরও ষোলো জন মারা গেছে ধসে। বেশ কিছু মানুষ নিখোঁজ। চার হাজার পাঁচশো চল্লিশটি গ্রাম ভেসে গেছে, মোট সাড়ে নয় লক্ষ হেক্টর জমি জলের তলায়, যার মধ্যে আড়াই লক্ষ হেক্টর চাষজমি। কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের সাড়ে পাঁচশো জন্তু বন্যায় মারা গেছে। লামডিং-বদরপুর রেলওয়ে ভূমি ধসে বন্ধ রয়েছে। প্রায় তিন হাজার জায়গায় সড়ক বন্ধ, রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষ সরকার পরিচালিত ছ-শো তিরিশটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদি পশু রাখার জন্য তিরিশটি ক্যাম্প করা হয়েছে। বন্যা হয়েছে বরাক উপত্যকাতেও।
ব্রহ্মপুত্র এবং তার উপনদীগুলি উপচে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর বিশ্ববিখ্যাত চর মাজুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনিতেই নদী ভাঙনে মাজুলি চর অর্ধেক হয়ে গিয়েছে গত তিরিশ বছরে (১২২৬ বর্গকিমি থেকে ৫৭৬ বর্গকিমি)। দ্বীপটিকে ঘিরে থাকা যে বাঁধ, তা সোনোয়াল কাছারিতে ভেঙেছে। অনেকের মতে পাকাপোক্ত বাঁধ দেওয়াই সমাধান। কিন্তু ইউনেস্কো সহ অনেকের মত, বাঁধ থাকাই উচিত নয়। প্রতি বছর কিছুটা জল উপচে গিয়ে আবার নেমে যাবে, সেই বরং ভালো। কিন্তু বাঁধ দিলে সেই বাঁধ ভাঙবে যখন, গোটা এলাকা প্লাবিত হবে ভয়াবহভাবে, যা এবারে হয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য এই দ্বীপ থেকে মানুষ সরিয়ে আনার কথাও বলেছে।
তবে বন্যা আটকানোর জন্য নদীখাত গভীর করার কথা উঠছে। আসামের ওপরদিকের সাদিয়া থেকে ধুবড়ি অবধি ব্রহ্মপুত্র এবং তার ১২৬ টি উপনদী ড্রেজিং করে নদীখাতের বালি দূর করার পরিকল্পনার কথা বলছে কেউ কেউ। কিন্তু অনেকেরই মতে, এই পদ্ধতি খরচসাপেক্ষ এবং বাস্তবোচিত নয়, কারণ নদীতে পলির পরিমাণ বিশাল। অপরদিকে কেউ কেউ ব্রহ্মপুত্র দিয়ে জাহাজ চালানোর পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে তার দরুনই নদীখাতের মাঝখানটা গভীর হয়ে যায় আপনা থেকেই।
আসামের বন্যায় নদীর ওপর বড়ো বড়ো জলাধার ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভূমিকার কথাও উঠছে। গত বছর অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়গুলোতে বন্যার ফলে সংলগ্ন আসামের ধেমাজি, লখিমপুর, শোনিতপুর জেলা এবং জোরহাট ও বারপেটার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তখন অনেকেই বলেছিল, অরুণাচল প্রদেশের রাঙ্গা নদী, যার আসামে নাম দিকরঙ, সেখানে ৪০৫ মেগাওয়াটের একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণেই এইসব এলাকায় প্রতি বছর বন্যা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এই লখিমপুর জেলাতেই সুবণসিরি নদীর ওপর যে ২০০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ হচ্ছে, তা ব্রহ্মপুত্র নদীতে বার্ষিক অন্তত দশ শতাংশ জল সরবরাহ করে।
Leave a Reply