‘দি ক্রিটিকাল মুসলিম’ নামে একটা আন্তর্জাতিক ত্রৈমাসিক পত্রিকা বের হচ্ছে লন্ডনের এক ‘মুসলিম ইনস্টিটিউট’ থেকে। বৌদ্ধিক স্তরে, মৌলবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করে ইসলামকে যুগোপযোগী করে তোলার প্রচেষ্টাতেই এই পত্রিকা। পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক, মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও সমাজবিষয়ের অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন সর্দার জানাচ্ছেন, বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানদের জন্য ইসলামের বিচার-বিমর্ষ করা বা সমালোচনার চোখে ইসলামের বিচার করা খুবই জরুরি।
এই পত্রিকার সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা বেশিরভাগই দক্ষিণ-এশিয়ার বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ মুসলিম। এদেরকে বামপন্থী-উদারতাবাদী বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কেননা এরা গভীরভাবে ইসলামে বিশ্বাসী এবং নিজেদের জীবনে ইসলাম ধর্ম পালন করে। তাছাড়াও এরা ইসলাম শাস্ত্রজ্ঞ।
এদের সাম্প্রতিক সংখ্যার বিষয় হল ইসলামিক ধারণা বা ‘দি আইডিয়া অফ ইসলাম’। ইসলামিক যে সমস্ত পুরোনো লেখাপত্রগুলোকে ‘পবিত্র’ নামাঙ্কিত করে আলোচনার বাইরে রেখে দেওয়া হয় সেগুলো সম্পর্কে এরা প্রশ্ন তুলেছে। এদের মতে, ইসলামের ধারণাকে যে বিভিন্ন কারাগারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তার মধ্যে প্রধান একটি হল শরিয়াত বা ইসলামী আইন। এই আইনানুসারে ‘আল্লার প্রাচুর্যময় দুনিয়ায়’ নারীবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ সহ বহু অন্যায়কে ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে। এদের লেখায় এরা এসবের বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তানের এক অভিবাসীর মেয়ে ও লেখিকা সামিয়া রহমান লিখেছেন, ‘নারীবিদ্বেষের যে পাঁকে ইসলামকে নিমজ্জিত করা হয়েছে তার থেকে একে মুক্ত করার জন্য কোরান ও পয়গম্বর মহম্মদের বাণীকে ব্যবহার করে ইসলামের মধ্যেই নারী-পুরুষ সমান-অধিকারের যে কথাগুলো রয়েছে সেগুলোকে তুলে ধরতে হবে’।
এছাড়া, ইসলামে জিহাদের প্রসঙ্গ তুলে যে মুসলিম গোঁড়ামির কথা বলা হয়, যেখানে মুসলমানদের বিশ্বনাগরিকতাবোধের বিরোধী হিসাবে দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতিম ইহুদিদের শত্রু হিসেবে দেখানোর মনোভাবেরও বিরোধিতা করতে হবে।
এই সংখ্যাতেই আন্ডি সিমন্স লিখেছেন জ্যাজ নিয়ে। সঙ্গীতজগতের জনপ্রিয় এই শাখাটি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য — জ্যাজ মোটেই শুধু আমেরিকান মিউজিক নয়, এটা যতখানি আমেরিকান ততখানিই মুসলমান।
তথ্যসূত্র দি হিন্দু, ১৮ই মে, ২০১২
অমিতাভ সেন, কলকাতা, ৩০ মে
Leave a Reply