২০ নভেম্বর, মহাবীর ঘোষ, দোগাছিয়া, জৌগ্রাম, জামালপুর থানা, বর্ধমান জেলা#
আলুর দাম যে হঠাৎ করে বেড়ে গেল, এতে চাষির কোনো লাভই নেই। চাষির তো আর মাল নেই, আছে ব্যবসাদারদের। আলু তো নেই, স্টোরেও কম আছে, ১৫% থাকলেও তার মধ্যে বীজ আলু আছে কত? যা আছে তার হাফ তো বীজে লেগে যাবে, তার ওপর দেশীয় লোকের খেতে লেগে যাবে। পুজোর আগে দামটা এত কম ছিল, কী বলব আর, লোকের চোখের জলে নাকের জলে হয়েছে। লোকে দেখছে, আশ্বিন মাস পড়ে গেল, আর আমাদের আলুর দাম হবে না। আমরাই তো দিয়েছিলাম, বহু লোকই বন্ড দিয়ে দিয়েছিল। আমরা দিলাম মহাজনদের, স্টোরের মালিকদের, যে ফড়েরা কিনতে আসে, তাদের দিয়ে দিলাম। তারা কেনে, তাদের কাছে দিয়ে দিলুম। আর যদি না দিই, ধরুন আমি কথায় বলছি, চাষটা করব কী করে? কিষানদের দাম দিতে হবে আমাকে। ধরুন, সার কিনতে হবে। এই জিনিসগুলো আমি যদি ধরি, আমি পাব কোথায়? আলু (বন্ড) বিক্রি করা ছাড়া আমার আর কোনো গতি নেই। আমার নিজস্ব কথা বলছি। এবার যাদের ধরুন দুটো-চারটে ছেলে চাকরি-বাকরি করে বা বাইরে থেকে ব্যবসায় ইনকাম করে, তারা হয়তো …। আমরা ধরুন পুজোর আগে ২৩০-২৪০ টাকায় সব বিক্রি করে দিয়েছি। আস্তে আস্তে তার পর থেকেই দাম বেড়ে গেল।
স্টোরের ভাড়া দিয়ে আলু রেখে আমাদের লস হয়ে গেল। আলু মাঠ থেকে তোলা থেকে এই অবধি একই দাম থেকেছে। আমি যে তারপরও রেখে দেব, কী করে রেখে দেব? আমি যদি দশ বস্তা আলু না বিক্রি করি, আমার চলবে কী করে? আমি চাষির কথা বলছি। যাদের ধরুন অবস্থা ভালো, যারা ব্যবসা-ট্যাবসা করে, তাদের আলাদা কথা। পিওর যদি চাষি হয়, সেই চাষি ক্রমশ মরে যাচ্ছে। আর দু-বছর পরে চাষি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তারা আর চাষ করতে পারবে না।
জৌগ্রামে চাষিরা ২০ নভেম্বর আলু লাগানো শুরু করেনি। ফাঁকা মাঠের মাঝে এক জায়গায় দেখা গেল, চন্দ্রমুখী আলু লাগাচ্ছেন এক বৃদ্ধ চাষি মহাবীর ঘোষ (ছবি তিনের পাতায়)। যে লেবাররা তাঁর জমিতে আলু লাগাচ্ছিল, তারা বলল, ‘১০০ দিনের কাজ বছরে দু-তিনদিন পেয়েছি। এখানে জমিতে লেবারের কাজ ফুরোলে আরও দক্ষিণের দিকে চলে যাই। ওই দেখুন, এই চাষের জমিতেই খৈনি কারখানা হয়েছে। সেখানে আমরা কাজ পাইনি। বাইরের ছেলেরা এসে কাজ করছে।’ ওপরের ছবিতে চাষের জমিতে খৈনি কারখানা। জিতেন নন্দীর তোলা।
Leave a Reply