এমন কথাই জানাল সোনালী। আরও বললেন কেউ যদি ধর্ম বিশ্বাস করেও ভাল কাজ করে সেটাও স্বাগত। এই যে ‘ধর্ম’ এবং ‘ঈশ্বর’ বিরোধী আলোচনা হচ্ছে রাধাকৃষ্ণ জিউ মন্দিরের চাতালে এটাও ভাববার। এসব কথা হচ্ছিল ‘অনীশ সংস্কৃতি পরিষদ’- এর চতুর্দশ বার্ষিক সম্মেলনে। ২৩শে ডিসেম্বর, ২০১২, রবিবার সারাদিন ধরে বি.টি. রোডের পাশে, বেলঘরিয়া থানার উল্টোদিকে প্যারীচাঁদ মিত্রের বাগান বাড়ীর মন্দির চত্বরে। মেঘলা দিনে ঠান্ডা বাতাসে, জনা পঁচাত্তর মানুষ একত্রিত হয়েছিল। বেশির ভাগই প্রবৃদ্ধ, তবে তেরো বছরের এক কিশোরীও ছিল। সমগ্র মন্দির চত্বরটি বাচ্চুদা ও তার সঙ্গীসাথিদের সহোযোগিতায় বিভিন্ন উদ্ধৃতি ও স্লোগানের ছোট ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে বর্ণময় হয়ে উঠেছিল।
সভায় গিয়াসুদ্দিনের লেখা ‘নানা ঘটনায় ইসলাম’ (২৫), আশীষ লাহিড়ীর ‘ঈশ্বরীক ফাঁক'(১০), সমীরণ মজুমদারের ‘উপপত্ত’ বই প্রকাশিত হল। অশোক বন্দোপাধ্যায়, সন্দীপ দত্ত সহ নানা বিশিষ্ট জনেরা বক্তব্য রাখলেন মুক্তচিন্তার নানা দিক নিয়ে। সন্দীপ দত্ত ছোট পত্রিকার মধ্যে মুক্তচিন্তা কীভাবে প্রসারিত হয় সে সম্পর্কে আমাদের অবহিত করলেন।
অনুষ্ঠানে মীরাতুন নাহার নবাব ফয়জ্জুনেষার (১৮৩৪-১৯০৩) বর্ণময় জীবনের গল্প শোনালেন। অধুনা বাংলাদেশের কুমীল্লায় যখন ফয়জুন্নেষার জন্ম তখন বিদ্যাসাগর চৌদ্দ বছরের বালকমাত্র। ফয়জুন্নেষার রূপমুগ্ধ এক বিবাহিত জমিদার পুত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। পরবর্তীতে স্বামীর রূপের মোহ কাটলে তাঁর দাম্পত্য জীবন ভেঙে যায়। ১৮৮৩ তে তাঁর মা মারা গেলে তিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার হিসাবে পশ্চিমগাঁও-এর জমিদার হন। জমিদারী পরিচালনার কাজে ঘরে ঘরে মানুষের সাথে পরিচিতও হলেন। বহু স্কুল স্থাপন করলেন, এমনকি সেইসময় মেয়েদের জন্য ইংরাজী স্কুলও স্থাপন করেন। হাসপাতালে মেয়েদের জন্য বিশেষ ওয়ার্ড করেছিলেন। বহু জলাশয় তৈরি করেন, বহুবিধ জনহিতকর কাজও করেছিলেন সারা জীবন ধরে। তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘রূপজালাল’ (১৮৭৬)-এ তাঁর বিবাহিত জীবন ও তৎকালীন মুসলিম সমাজে মেয়েদের অবস্থার কথা ব্যক্ত করেন। এছাড়াও ‘সংগীতসার’ ও ‘সংগীতলহরী’ নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন।
এর পর মীরাতুন নাহার রোকেয়া নামের সঙ্গে বেগম কথাটা না জুড়তেই অনুরোধ করলেন এবং রোকেয়ার সংস্কার চিন্তা, মেয়েদের অলঙ্কার প্রীতির বিরোধীতা, শিক্ষাভাবনা, দেশভাবনা-র প্রসঙ্গ তুলে ধরলেন। বললেন, রোকেয়া বলেছিলেন ভারতবাসীর সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয় সভায় আর হাততালি লাভে।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বঙ্কিম, গোরা গাঙ্গুলী,
অনীশ সংস্কৃতি পরিষদ, প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় কলেজ স্ট্রীটে, সমীরণ মজুমদার, (৯০০৭৭৩০৭৬৬)
Leave a Reply