রাজারামপুর গ্রামটি বহু নামে পরিচিত, নানা অংশ, নানা ভাগ আর হরেক কিসিমের মানুষ নিয়ে। রাজারামপুরের প্রাইমারি স্কুলের পিছনে তার গরিবানা ঘর। আমিরুলের বাড়ি আসলে বৈকুন্ঠপুর মৌজায়। এই বৈকুন্ঠপুর মৌজায় এদের ঘরের পিছনে বিস্তীর্ণ ধান জমি। এই খোরোর মরসুমে তার বেশির ভাগটাই অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে। জল নাই, অথচ একটু গেলেই কাঁটাখালির বড়ো খাল। মাঠের মাঝখান দিয়ে পায়ে চলা পথ তৈরি। সোজা উঠেছে পূর্ব কামালপুর যাওয়ার রাস্তায়। অবশ্য বর্ষায় এ রাস্তার অস্তিত্ব থাকে না।আমিরুলদের ঘরের পিছনে বনবিবি মায়ের থান। একটু জঙ্গল মতো। অনেকে মানত করে মুরগির বাচ্চা ছেড়ে দিয়ে যায়। সেই বাচ্চা আবার অনেকে ধরে।
এই গোটা মাঠ জুড়ে এবছর শুধু কড়াই চাষ। প্রচণ্ড গরমের দিনের শেষে গোটা মাঠ জুড়ে সন্ধ্যা নামে। দক্ষিণে হাওয়া কড়াই ক্ষেতে বাচ্চাদের সাথে খেলতে খেলতে লুটোপুটি খায়, কড়াইয়ের বেগুনী ফুল হাওয়ায় ভাসে। তার মাঝে আশপাশের বাড়ির মহিলারা, কোথাও কোথাও পুরুষরাও হাত লাগিয়ে কড়াই তোলে। আগে কড়াই দানা ফেললে তার থেকে আপনাআপনি যা হত তাতেই লোকে সন্তুষ্ট থাকত। কিন্তু বাজারে ডালের দাম বাড়া ও অন্যদিকে ধান চাষে সার-বিষের খরচ বাড়ার সাথে সাথে, আর জমিতে জল সংকটের কারণে লোকে বেশি বেশি করে কড়াই চাষের দিকে ঝুঁকল।
এখন কড়াই চাষের আগে জমিতে হাল করে, সার দিয়ে দানা ছড়ানো হয়। এ মাঠের পশ্চিমদিকে সূর্য পাটে নামছে, চারদিকে খেতে নানান জন নেমে কড়াই তোলায় ব্যস্ত। এক জায়গায় কর্তা গিন্নি, শ্বশুরমশাই আর ছেলেপিলে মিলে গোটা পরিবার মাঠে কড়াই তুলছে। কর্তাটি গাঁ থেকে ডাব কিনে মহেশতলায় চালান দেন। এখানে থাকেন না, সম্ভবত কড়াই তোলার জন্য বাড়িতে এসেছেন। কড়াই হয় প্রচুর। যখন হয় তখন সপ্তাহভর হতেই থাকে। রোজ তুলতে হয়।
কোথাও আবার বাড়িতে এত লোক থাকে না বলে অন্য বাড়ির বউ-ঝিরাও এসে হাত লাগায়। যে কড়াই ওঠে তার সাত ভাগের এক ভাগ পায় যে অন্য বাড়ি থেকে এসে কড়াই তোলে। এভাবে চাষ না করেও অনেকে বাড়িতে সারা বছর খাবার কড়াইটা জোগাড় করে নেয়। তার থেকে বাড়ির প্রয়োজনে সময়ে অসময়ে বিক্রিও করা যায়। কড়াই তোলার পর শুকনো ডালটা জ্বালন হয়।
আমিরুলদের কড়াই মাঠ থেকে প্রায় উঠেই গেছে। আজ পিঁপড়ে ধরেছে বলে বিষ দিয়েছে। একটু সারও ছড়িয়েছে। কাল আবার অল্পবিস্তর কড়াই ফুল হবে। মাঠে অন্ধকার নামছে। ফিরে আসছি। স্বামী স্ত্রী বাচ্চা কাচ্চা সবাই শসা খেতের পাশে বসে আছে। খেত আগলাচ্ছে রাত অবধি। এখানেই খাওয়াদাওয়া আর হাসিকান্না। ঘরে শুধু রান্নাবান্না।
এই জন্যই কি চাষবাড়ি বলে?
পার্থ কয়াল, ফলতা, ১ মে। ছবি প্রতিবেদকের তোলা
Leave a Reply