• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

আমিনার দিনরাত্রি

December 7, 2013 admin Leave a Comment

শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজিরতন, মেটিয়াবুরুজ, ১৫ নভেম্বর#

cc

অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম, কথাগুলো মানুষজনকে জানানো দরকার, না জানালে অন্যায় হবে। আপনি জানলে আরও সাতজন, সাত থেকে সত্তর হবে। শক্ত হবে নড়বড়ে পা — এক নিঃশ্বাসে বলে গেল আমিনা। সামনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে থাকল …।
অনেকদিনের অনেক কথা। মোল্লাপাড়ার রমরমা, পয়সা হয়েছে এককাঁড়ি। পয়সার গুমরে মাটিতে পা পড়ে না অনেকের। চারিদিকে উঁচু উঁচু বাড়ির পরিখা দিয়ে ঘেরা পাড়াখানা। জবরদস্ত সব বাড়ি। বাইরে দেওয়ালে ওজন অনুযায়ী নকশা কাটা। ভেতরে মার্বেলের জৌলুস। ঝকঝকে আরশিতে মুখ দেখা যায়। সে মুখের জেল্লা কত! জমির বড়োই আকাল। সকলের নজর ওই একচিলতে জমিটার দিকে। যেন পথের কাঁটা, তাই খামচে তুলে নিতে চায় মাটিটুকু। প্রাসাদসম বাড়ির মাঝে জেগে রয়েছে ডাঙাটুকু। সেই ডাঙার ওপর মাটির দেওয়াল আর মাথায় টিনের চাল নিয়ে একরত্তি ভিটেখানা। তা হলে কী হবে, বাঁধন বেশ শক্ত। পাকাবাড়িরা অট্টহাসিতে মশগুল। ওদের ব্যঙ্গ চাবুকের ঘায়ের মতো। বুক চিরে যায় মাটির, ঝনঝনায় টিনের চাল। তবু দাঁড়িয়ে আছে, প্রতিবাদ করে চলেছে বাড়িখানা। আমিনা বলে, ‘জীবন মাটি তো কী হয়েছে, মাটিছাড়া হব না।’
কথাটা ওদের কানে যায়। একটা বিহিত হবে বলে শাসায় পাড়ার মাতব্বর। আমিনা বলে, ‘একটুও ভয় করিনি, জানি আমার মাটি বেশ শক্ত। জমির প্রতি কুনজর তো আছেই, সমানে আছে আমার প্রতি কুনজর।’ ওরা বলে, তিন-তিনটে ছেলেমেয়ে নিয়ে দেখি কতক্ষণ টিকে থাকে! ভরা যৌবন, আমিনার চলনে নাকি সুনামির ঢেউ ওঠে। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে ছোঁক ছোঁক করা পুরুষদের মনে। দৃষ্টিসুখে তৃপ্ত হয় না ওদের উতলা মন, ছিঁড়ে খেতে চায় আমিনাকে। শাকিনাবিবি হাসতে হাসতে বলে, ‘শরীলটাকে বেশ বেইনিচিস। হ্যাঁ রা কিচু খাস বুঝি?’ আমিনা ওদের কথায় কান দেয় না। বলছে বলুক ওরা, শরীরটাকে উঠিয়ে নিতে পারবে না ওরা, নিশ্চিত আমিনা।
আমিনার স্বামীর নাম নবাব। লোকে বলে — ‘নামটাই নবাব, নেই এক কানাকড়িও।’ সত্যি কথা, কুঁড়ের হাতেম, সংসারে এক পয়সারও জোগান নেই। আমিনা বলে, ‘যত দায়িত্ব আমার। তবু হাত পাতিনি কারও কাছে।’ জহুরা খালা রেগে বলে, ‘অমন ভাতারের ঘর করার চেয়ে মোউত ঢের ভালো। শুধু ময়না পয়দা করলিই হল?’ পাশের বাড়ির এক ভাবি প্রায়ই আসে আমিনার কাছে, গল্পচ্ছলে উশকানিও দেয়। বলে — ‘বড়োলোক দেকে দোসরা বে কর। কেউয় সতিন হয়ে ভালোই কেটটে দিতি পারবি তুই।’ শুনে বেশ রাগ হয় আমিনার, ‘কথা খুঁজে পাও না তুমি? ছাড়ো ওসব। আমার পা বেশ শক্ত, মাটিও।’ সে পাশ কাটায় কাজের বাহানা করে। ভাবির রাগ একেবারে চরমে — ‘দেমাগ দেক তো মো মাগির। ভালারির ভাত নি, মোরগে যা তুই।’
শাকিনা বিবি কিন্তু আমিনার মঙ্গল চায়। আমিনা বুঝতে পারে, শাকিনা বিবি তাকে ভালোবাসে। কথায় কথায় বলে, ‘মরদের আয়েস মিটিয়িচিস, অক্ষরে অক্ষরে পালন করিচিস তার কথা, তোর মাটি শক্ত হয়েছে রে! তোর ভালো হবে।’
সময় বিশেষে পরামর্শও দেয় আমিনাকে — ‘অ্যাতো কষ্টর মদ্দি ছেলেমেয়েকে লেকাপড়া শিককে করবী কী তুই? কোনো কাজ হবে না ময়না। সেই খেটে খাতিই হবে।’
আমিনা ওসব কথা কানে তোলে না। শুধু তাকিয়ে থাকে সে। চোখের চাহনিতে বোঝাবার চেষ্টা করে, লড়াই তো এখানেই। সে লড়াই শব্দহীন। নীরব তার ভাষা, ঠিক আমিনার মাটিটার মতো। মকসদের ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে তার ভিতরে। শুধু ফুলকি হয়ে বেরোনোর অপেক্ষায়। ছেলেমেয়েরাই সেই ফুলকি। আমিনা জানে, সে সফল হবেই। ওরা শিক্ষিত হবে, মানুষ হবে, নতুন ঢঙে গড়বে জীবনের ছাঁচ। ছোট্ট হোক, পরোয়া নেই, যেন রুচিশীল পরিপাটি সাজানো-গোছানো হয়। কাল্লু হাজি আঁচ করতে পেরেছিল ব্যাপারটা। উনি বলেছিলেন, ‘এগিয়ে যাও বেটি, আল্লা তোমার আশা পূরণ করুক।’
ভাবনায় কোনো খামতি ছিল না আমিনার। প্রতিদিনই একটু একটু করে ওদের তালিম দিত সে। ওদের শিখিয়েছিল, হুগলির গোবিন্দপুরে ছিল তার গ্রাম। ছেলেমেয়েদের বলত, ‘জেনে রেখো, দৈন্যতা দুর্বলতার আর এক পিঠ, কোনোভাবেই তা যেন প্রকাশ না পায়। মানুষ হলেই বুঝবে এর দাম।’ বড়ো মেয়ে জাহানারাকে উৎসাহ দিয়ে সে বলে, ‘তোমার পাশেই আছি, এগিয়ে যাও, আরও কষ্ট করতে হয় করব।’
বড়ো আদুরে মেয়ে তার। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল মায়ের কথাটাকে। পড়াশুনা করল, কম্পিউটার শিখল, জুটিয়ে নিল একটা কাজ, কল সেন্টারের কাজ। ছোটো হলেও কাজ তো। সে স্বাবলম্বী হল। সংসারে বাড়ল দু-পয়সার জোগান। আমিনার হাত আরও শক্ত হল। ওর বাড়ি ফিরতে রাত হলেও সে ভয় করত না। লড়াই তো করতেই হবে। ওর ডিগ্রি আর বয়স বাদ সাধল এলাকায়। বিয়ে হল না এখানে। মামাদের ঘটকালিতে বিয়ে হল সিঙ্গুরে।
মেয়ে-জামাইয়ের বোঝাপড়ায় সরস হল আমিনার মনের মাটি। রসসিক্ত মন সায় দিল দু-এক ফোঁটা জল ঢেলে। ধুয়ে নিয়ে গেল তার পূর্বজীবনের গ্লানি। মাটিকে নতুন করে আঁকড়ে ধরল সে।
 প্রতিবেদনের স্থান, কাল, পাত্র সবই বাস্তব — তবে তাদের বর্ণনা ও বয়ানে কিছু কল্পনার মিশেল রয়েছে।

মানবাধিকার আমিনা, নারী, মেটিয়াব্রুজ, শ্রমজীবী

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in