৮ জুলাই, ইন্দ্রজিৎ দাস, রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা#
আমি যখন নুটবিহারী বয়েজ স্কুলে পড়তাম, বাঁধাবটতলায় মামাবাড়িতে থাকতাম। মাধ্যমিক দেওয়ার পর পাশ করতে না পেরে আমি পড়াশুনা ছেড়ে দিই। কাজকম্ম তো সেরকম পাওয়া যায় না, আস্তে আস্তে এই পেপার লাইনে ঢুকলাম। আমাদের মামাবাড়ির পাড়ায় পেপার দিত প্রদীপ। ২০০৪ সালে ওর থেকে লাইনটা কিনলাম, যত পেপার তার ওপর পেপার প্রতি একশো টাকা দিয়ে লাইন কিনতে হয়। রবীন্দ্রনগরের একশোটা পেপারের লাইন কিনেছিলাম। তখন থেকে ধর্মতলায় গিয়ে পেপার কিনে এখানে এসে ডিস্ট্রিবিউট করি। তারপর ঠাকুমার প্যারালাইসিস হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাবা বাইরে থাকেন। তিনি পুনায় ছোটোখাটো একটা কাজ করেন। তখন ঘরে একজন ছেলে থাকা দরকার। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আমি রোজ এখান থেকে লঞ্চঘাট পার হয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে বাড়ি চলে যেতাম। আবার ভোরবেলা চারটের সময় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। হাওড়া ব্রিজের ওপর থেকে এসপ্ল্যানেডে গিয়ে কাগজ কালেকশন করি। আকড়া ফটকে যখন এসে পৌঁছাই, তখন আটটা বাজে। রাত তিনটে থাকতে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। দাঁত মেজে বাথরুম সেরে রুটি-টুটি খেয়ে তবে বেরোই। তারপর সব কাজ সারতে সারতে দুপুর একটা বেজে যায়। বাঁধাবটতলায় মামাবাড়িতে খেয়ে নিয়ে ঘরে ফিরি লিলুয়ায়। ফেরার সময় দেড়ঘন্টা লাগে। সকাল থেকে খাটার পর সন্ধেবেলায় আমি বসেই কাটাই। বাড়ির বাজারহাট সব মা সামলান।
এতদিন কাজ করার পর আমার লাইন বেড়েছে। কমা-বাড়া ধরে এখন আমার দেড়শো পেপারের লাইন আছে। গত বছরে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, তারপর এবার হল। আমাদের এই রুটটায় পুলিশের হ্যারাসমেন্ট নেই, প্রচুর পেপারওয়ালা থাকে, তবে অন্য রুটে হয়। আমাদের মধ্যে কেউ রেড রোড ধরে, কেউ বাবুঘাট ধরে। আমাদের এই মেটিয়াবুরুজ রুটে কম করে খান-তিরিশেক পেপারওয়ালা আছে। সবাই ধর্মতলায় যায় না। কেউ কেউ খিদিরপুর থেকে নেয়। এর আগে একজন চেষ্টা করেছিলেন যাতে পেপারগুলো রামনগরে চলে আসে। ধর্মতলায় যে ব্ল্যাকাররা আছে তাদের পেটে লাথি পড়বে বলে তখনকার সরকার সেটা করতে দেয়নি। কোম্পানি থেকে ব্ল্যাকাররা কাগজ তুলে নিল, তাদের থেকে আমরা নিয়ে আসি। তারা আমাদের কাছ থেকে পেপার পিছু দশ পয়সা করে কমিশন পায়। আমরা আবার চেষ্টা করছি যাতে পেপার রামনগরে আসে। এটা হলে কোম্পানি ধর্মতলায় না পাঠিয়ে এখানে পেপার পাঠাবে। তাতে আমাদের পরিশ্রম অনেকটাই কমে যাবে, রাস্তার রিস্কটাও কমে যাবে। আমাদের লাইনে প্রায়ই অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে। এমন অনেকে আছে, যারা কন্টেনারের ধাক্কায় মারা গেছে। পেপারওয়ালাদের খোঁজ কেউ রাখে! এখানে প্রচুর পেপার আসে। আমাদের মেডিক্লেম করা আছে। আমরা কিছুই পাই না। সব ওপরে খাওয়াখাওয়ি হয়ে যায়। পেপারে লিফলেট ভরে দিলে আমাদের জন্য একটা কমিশন আসে। এছাড়া, নতুন কাগজ চালু হওয়ার সময়ই আমাদের জন্য কিছু আসে। আমাদের হাতে কিছুই আসে না। সব ইউনিয়নের লোকেরা খেয়ে নেয়।
Leave a Reply