আর আমদানি করতে হবে না কয়লা। দেশে শিল্পের জোয়ার আসছে, কয়লার অভাবে তা থমকে থাকবে না। বুক ঠুকে এইসব ঘোষণা দিয়ে কয়লা ব্লক নিলামের আইন বানিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমে নিমরাজি হলেও, নিলামে কয়লা ব্লকগুলির বিপুল চাহিদা দেখে বেশ কিছু আঞ্চলিক দল এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে সংসদে। আমাদের রাজ্যের শাসক দল তার অন্যতম।
ঠিকা মজুর দিয়ে যাতে কয়লাখনি চালানো যায়, তার জন্য কয়লা শিল্পের সাথে যুক্ত ঠিকা মজুরদের পারিশ্রমিক বাড়ানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতার কমিটি গড়ে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো তা সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছে বলা যায়।
সত্তরের দশকের প্রথমার্ধে কয়লা শিল্পের জাতীয়করণের কয়েক বছরের মধ্যেই আউটসোর্সিং প্রভৃতির মাধ্যমে এর বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছিল। সেই বেসরকারিকরণ তথা কর্পোরেটাইজেশনে উদ্দাম গতি এনে দিতে বিগত কেন্দ্রীয় সরকার কয়লা ব্লক ‘অ্যালোকেট’ করেছিল কর্পোরেটদের। বর্তমান সরকার নিলাম করে বিক্রি করছে। আপাতদৃষ্টিতে এতে কিছু বেশি টাকা আসছে সরকারি কোষাগারে, কর্পোরেটদের পকেট থেকে।
যেন সব পক্ষেরই লাভ — এমনভাবে কয়লা ব্লক নিলামের খবরাখবরগুলি লোকজানাজানি হওয়ার মাঝেই সুর কেটে যাওয়ার মতো একটা খবর এল — মধ্যপ্রদেশের মাহান কয়লা ব্লকের ওপরে থাকা বাসিন্দাদের তীব্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ব্লক নিলাম থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
নগর জীবনের বৈদ্যুতিক সভ্যতা, ইন্ডাস্ট্রি, কর্পোরেট আর সরকার — সবাই চাইলেও, নিলামে উঠতে চলা কয়লা ব্লকগুলি যে অঞ্চলে, সেখানকার গ্রামসমাজ কি চায় বাড়ির পাশে কয়লা খনি/খাদান হোক? বিশেষ করে আজকালকার বেশিরভাগ খনিই যখন খোলামুখ? আসানসোল-রাণিগঞ্জ এলাকার চাষি-মজুর, লোবার গ্রামবাসী, পাঁচামির পাথর খাদানের দূষণে ভোগা আদিবাসী — এদের প্রতিনিধিরা জানালেন, না। গত সপ্তাহে আসানসোল কোর্ট ঘরে আয়োজিত এক আলোচনাসভায়।
বিদ্যুৎ নির্ভর নাগরিক সমাজ কি কয়লা ব্লকগুলির আশেপাশের গ্রামের মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি প্রশ্ন করবে, আমাদের আর কত কয়লাখনি দরকার?
Leave a Reply