রামজীবন ভৌমিক, কোচবিহার, ১২ মে#
পয়লা বৈশাখেই গৃহপ্রবেশ হবে। হাতে টাকা নেই তাই তোমাদের খাওয়াতে পারবো না। শুধু একটু নিয়মরক্ষার পূজো করেই ঘরে ঢুকে যাব। দেখা হলেই শঙ্খজিৎদা বলত আমাদের। ঘর বলতে আট লাভ টাকার হাউস বিল্ডিং লোন নিয়ে দু-কাটা জমির ওপর দুটো রুম আর গ্রিল ছাড়া জানালা। শক্তপোক্ত লক ছাড়া, ডাসা ছাড়া শুধু ছিটকানি দেওয়া দরজা। প্লাস্টার হয়নি ঠিকমতো। রং, রানিং ওয়াটার, ইলাস্টিক ওয়ারিং এসব টাকার অভাবে করা যায়নি। ডাকাতির ভয় কল্পনাতেও আসেনি শঙ্খজিৎ-এর। ডাকাতরা নাকি হোম-ওয়ার্ক করেই ডাকাতি করে। কোথায় ডাকাতি করলে মালকড়ি ভালো পাওয়া যাবে, সেটা নিশ্চিত না হয়ে পণ্ডশ্রম করতে ডাকাত আসবে না। বন্যাকে বারবার বুঝিয়েছে শঙ্খজিৎ। কোচবিহার বাবুরহাট, রাজেন চৌপথি সব জায়গায় রাত পাহারা আছে। রাজেন চৌপথি থেকে প্রদীপ আর্টের দক্ষিণ গলি ধরে ৫০০ মিটার গেলেই শঙ্খজিৎ-বন্যাদের নতুন বাড়ি আর পনেরো বছর ভাড়া বাড়িতে কাটিয়ে আসা পুরনো সংসার। চারদিকে অনেক দূর অবধি ফাঁকা, বাড়িঘর নেই। তবুও ডাকাতের ভয় কখনও পায়নি। আর কি আছে যে নেবে?
কখন যে বন্যা-শঙ্খজিৎ আর তাদের দু-বছরের মেয়ে গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠে বসেছে বিছানায় — মনে করতে পারছে না। অন্ধকার ঘরে কিছু ভোজালি আর টর্চের আলো মশারির ওপর ঘুরছে। দেওয়াল ঘড়িতে রাত দেড়টা। এখান থেকে স্মৃতি শুরু। দু-জন জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করছে, কিছুই মিলছে না। লকার ভাঙছে। সেখানেও কিছু পাচ্ছে না। এভাবে প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে পুরো ঘর ওলট পালট। একবার বন্যার মেয়ে একটু কেঁদে উঠল। বন্যাও ভয়ে গুটি-শুটি। ডাকাতরা ধমকে মেয়েকে চুপ করাতে বলে। সাথে বন্যাকে বলে, তুমি নিশ্চিত থাকো তোমার কিছু করব না। আমাদেরও বোন আছে। কিন্তু কি করব? আমরা বেকার, চাকরি বাকরি নাই। ডাকাতি আমরা করবোই।
শঙ্খজিৎ আর স্নায়ুর জোর ধরে রাখতে পারল না। যদি কিছু না পেয়ে ছোটো সন্তানের গায়ে ভোজালি চালিয়ে দেয়? এসব ভাবতেই মনে হল, বলে দেওয়াই ভালো। ফ্রিজের ভেতরে লোন-এর একটা ইনস্টলমেন্ট-এর বারো হাজার টাকা আছে। শঙ্খজিৎ জানত না, ওদের সামান্য সোনার গয়নাও ওখানেই রেখেছে বন্যা। টাকা গয়না নিয়ে ওদের ডাকাতরা থ্যাঙ্ক ইউ বলে।
পরদিন ৮ মে সকালে বাড়ির সামনে গেলে একটা জটলা দেখতে পেলাম। এএসপি এসেছে ইনকোয়ারিতে। জটলায় সবাই বলছে, চারদিকে ঘনঘন ছোটোখাটো ডাকাতি ঘটে চলেছে। কেউ বলছে, এটা শুরু বলা যায়। এখন ডাকাতি ছিনতাই বাইক চুরি এসব চলতেই থাকবে। সারদা কাণ্ড সহ অন্য সব চিট ফাণ্ড সংস্থা উঠে যাওয়ায় যে বেকার সমস্যা, অর্থনৈতিক নেতিবাচক শূণ্যতা তৈরি হয়েছে সেটা এভাবেই সমাজ জুড়ে ফুটে বেরোবে।
Leave a Reply