নয়া দিল্লি থেকে প্রকাশিত হিন্দি ই-পত্রিকা ণ্ণরবিবার’-এর ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে নেওয়া#
কিছু প্রশ্ন | |
@ | সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করেছে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কেবল পারিপার্শিক প্রমাণ বা সার্কামস্টেনসিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতে তাঁর ফাসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা কি এই দণ্ড মেনে নিতে পারি? ; |
@ | সম্প্রতি ভার্মা কমিশনের রিপোর্টেও প্রধানমন্ত্রীকে আর একবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের মদত নিয়ে কীভাবে এই তথাকথিত ণ্ণসংঘর্ষের এলাকা’য় হিংসা এবং শাসনব্যবস্থার প্রতি চূড়ান্ত অবিশ্বাস বাড়িয়ে চলেছে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী; |
সোপোরে ঝিলম নদীর তীরে আবগাহ গ্রামে জন্ম হয়েছিল আফজল গুরুর। ছোটোবেলায় শিশু আফজল যখন স্কুলে যেত, স্বাধীনতা দিবসের দিন প্যারেডে সামনের সারিতে তাকে বেছে নেওয়া হত। বড়ো হয়ে আফজল বিখ্যাত কবি মির্জা গালিবের ভক্ত হয়ে গিয়েছিল।
১৯৮৬ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে আফজল হায়ার সেকেন্ডারি পড়তে গেলেন সোপোরের মুসলিম এডুকেশন ট্রাস্টে। সেখানে তাঁর আলাপ হয় নবেদ হাকিমের সঙ্গে। তিনি কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। আফজল সেদিকে না গিয়ে পড়াশুনায় মন দিলেন এবং বারো ক্লাসের পর এমবিবিএস পড়তে মেডিকাল কলেজে ভর্তি হলেন। কিন্তু তাঁর পড়া শেষ হল না।
১৯৯০ সাল নাগাদ কাশ্মীরে সশস্ত্র জঙ্গি আন্দোলন শুরু হল। ততদিনে তাঁর পূর্ব-পরিচিত নবেদ হাকিম জঙ্গি আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। শোনা যায়, এইসময় শ্রীনগরের কাছে ছানপুরায় ভারতীয় সেনা কয়েকজন মহিলাকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় আফজলের মনে এতখানি আঘাত লাগে, তিনি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে নবেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টে (জেকেএলএফ) যোগ দেন। আফজল নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে পাকিস্তানের মুজফফরাবাদে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে কাশ্মীরে ফিরে আসেন। এখানে এসে তিনি জেকেএলএফ-এর সশস্ত্র বাহিনী তৈরির কাজে শামিল হন। সোপোরের প্রায় তিনশোজন কাশ্মীরি যুবক তাঁর সংস্পর্শে এসে জঙ্গি কার্যকলাপে যোগ দেয়। \par
এদের মধ্যেই ছিলেন তাঁর বন্ধু ফারুক আহমেদ ওরফে ক্যাপটেন তাজাম্মুল। পরে তিনি জঙ্গি কার্যকলাপ থেকে সরে এসেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে শোনা যায়, ণ্ণযখন কাশ্মীরে জেকেএলএফ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়, আফজল ওই তিনশো সশস্ত্র যুবককে সোপোরে আলোচনায় ডাকেন। সেখানে তিনি ঘোষণা করেন, আমি এই মারামারি-কাটাকাটিতে থাকতে চাই না। কারণ পুরো এলাকায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে শত শত মুজাহিদ মারা গেছে। কিন্তু আমাদের এলাকা শান্ত রয়েছে।’
আফজল গুরু সম্পর্কে লেখা রিয়াজ মসরুর-এর ছয় বছরের পুরোনো এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আফজলের খুড়তুতো ভাই শওকত গুরুর সাহায্য নিয়ে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের পড়াশুনা শুরু করেন। সেখান থেকে অর্থশাস্ত্রের স্নাতক হন। শওকতের ছোটো ভাই ইয়াসিন গুরুর কাছ থেকে জানা যায়, আফজল দিল্লিতে নিজের পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করতেন। পাশ করে শওকত ও আফজল কিছুদিন ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকায় চাকরি করেছিলেন। সাত বছর দিল্লিতে কাটিয়ে অবশেষে ১৯৯৮ সালে আফজল গুরু কাশ্মীরে ফিরে আসেন। বারামুল্লার মেয়ে তবসসুমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
তবসসুমের কাছ থেকে জানা যায়, তিনি আফজলকে বিয়ের আগে থেকেই চিনতেন। আফজল এত গানের ভক্ত ছিলেন, অথচ তিনি জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবসসুম বলেছিলেন, ণ্ণওঁর মাথায় সবসময় ঘুরত গালিবের শায়েরি। এমনকী নিজের ছেলেরও নাম রেখেছিলেন গালিব। মাইকেল জ্যাকসনের গানও খুব উপভোগ করতেন আফজল।’
দিল্লিতে আফজল ওষুধ তৈরির একটি কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হয়েছিলেন। তারপর নিজেই ওষুধের ব্যবসা শুরু করে দেন। তাঁর ছোটোবেলার বন্ধু মাস্টার ফৈয়াজ বলেছিলেন, তাঁকে প্রতিদিন স্থানীয় সেনা শিবিরে হাজিরা দিতে হত এবং তাঁদের জ্বালাতন তাঁর স্বাভাবিক জীবনকে অস্থির করে তুলেছিল। আফজলের বউদি বেগম এজাজ বলেছিলেন, ২০০০ সালে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং তাঁকে প্রচুর যন্ত্রণা দেয়। তিনি সোপোর ছেড়ে দিয়ে বেশি বেশি দিল্লি এবং শ্রীনগরে থাকতে শুরু করেন।
Leave a Reply