ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সাতজন আসামীর শাস্তিদানের চূড়ান্ত সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাষ্ট্রপতি ফের তা সেখানেই ফেরত পাঠিয়েছেন। নবাগত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দে জানিয়েছেন যে এই সাতজনের ওপর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের ফাইল আরেকবার তিনি খতিয়ে দেখবেন। এই সাতজনের মধ্যেই ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে হাজতে রয়েছেন আফজল গুরু। শাস্তির আদেশ খতিয়ে দেখা মানে কী?
আফজল গুরু জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের বারামুল্লা জেলার বাসিন্দা। কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। আমরা সকলেই জানি, কীভাবে এই দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্যে হিংসাত্মক উপায়ে লড়াইয়ের একটি ধারা গড়ে উঠেছিল। কাতারে কাতারে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী তাতে যোগ দিয়েছে। দিল্লির সংসদে সশস্ত্র আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমরা জানতে পারি, ১৯ ডিসেম্বর আফজল গুরু তাঁর ওপর অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তারই ফলস্বরূপ তাঁর ওপর ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
এর আগে ২০০৪ সালে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ধনঞ্জয় চ্যাটার্জির ফাঁসির কথা আমাদের মনে আছে। এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছিল। কিন্তু আমাদের চোখের ওপর ধর্ষণ এবং মেয়েদের ওপর নানারকম পীড়ন ও সম্মানহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে।
‘ফিদায়েঁ’ বা আত্মঘাতী হানাদারদের উপস্থিতিও আমাদের সমাজে কমেনি। ভারত বা পাকিস্তানে কোথাও নয়। যুবকদের মধ্যে আত্মঘাতী হওয়ার বিষয়বস্তু অটুট রয়ে গেছে। শুধু কাশ্মীরেই নয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ডে … পশ্চিমবঙ্গেও কি তা নেই?
আমরা বিচারের নামে বিষবৃক্ষের আগা ছেঁটে গোড়ায় জল ঢেলে চলেছি! ধন্য আমাদের বিচার ব্যবস্থা! আফজল গুরু না হয় হিংসার পথ নিয়েছেন বলে অভিযুক্ত। কিন্তু মণিপুরের শর্মিলা তো ১২ বছর ধরে AFSPA র মতো একটা পুরোনো কালাকানুন রদ করার জন্য অহিংস পথে লড়াই করে চলেছেন। কোথায় তিনি সুবিচার পেলেন? আমাদের স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবীরা কতটুকু তাঁর পাশে দাঁড়ালেন?
সমাজে যদি সত্যিই সুবিচার এবং বিবেচনাবোধ থাকে, তাহলে আজ আফজল গুরুদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা দরকার। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে আমরা কথা বলি তাদের সঙ্গে, যারা সেই সমস্যা নিয়ে মোটেই পীড়িত নয়। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আমরা কথা বলি না। আমাদের মিডিয়ায় কথা বলার জন্য রয়েছেন ণ্ণতালিকাভুক্ত’ বুদ্ধিজীবীরা! তারা ভুক্তভোগী নয়। সমস্যার আগুন তাদের স্পর্শ করে না। ধনঞ্জয়ের সঙ্গেও কথা বলা দরকার ছিল। আমরা যারা বিচারের দায়িত্ব নিই, তাদের ভাবা দরকার আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা কেন বিদ্রোহী হয়? কেন তারা অপরাধে লিপ্ত হয়? সেটা ভাবতে পারলে বোধহয় আমরা সুবিচারের পথে এগোনোর চেষ্টা করতে পারতাম।
nurul islam says
Last Chance for Truth
Nirmalangshu Mukherji
Department of Philosophy
University of Delhi
Delhi-110007
http://www.revolutionarydemocracy.org/