বিপ্লব সরকার, ৫/৫/১৫, নদীয়া, শান্তিপুর #
দীর্ঘ কুড়ি বছরের সমস্যা। অনেক ডাক্তার দেখেছেন। সমস্যা কমাবাড়া হয়েছে। পুরোপুরি বিলোপ হয়নি। যেন পারিবারিক কালচার রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। কালচারটা রক্ত আমাশা তার সঙ্গে হাঁপানি।
ক’দিন ধরে খুব কষ্ট পাচ্ছে বাবা। তাই জোর করে সন্ধ্যেবেলা শান্তিপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। এর্মাজেন্সির ডাক্তার দেখে বললেন, এখুনি ভর্তি করে দিন। আর এই ওষুধগুলো কিনে আনুন।
বেডে শোওয়ানোর পর নার্স এসে পটাপট সূচ স্যালাইন-ক্যাথিটার চালু করে দিয়ে বললেন, কিছু খাইয়ে দেবেন। বরফ ফ্রিজের মধ্যে রেখে খাওয়াবেন।
বাবা হতচকিত। আমি ও। কি ব্যাপার? এত কি জটিল হল? বাড়িতে তো এত খারাপ লাগছিল না। নার্সের পেছন পেছন ছুটলাম, রাত দশটায় ডাক্তার আসবেন বলে , নার্স স্টাফরুমে ঢুকে গেলেন।
হঠাৎ-ই চোখে জল চলে এল। বাইরে বেড়িয়ে এলাম। বাড়ির সবাইকে বিষয়টি জানানো দরকার। রাত্রে থাকতে হবে বলে, বন্ধু খুঁজতে লাগলাম।
সাড়ে দশটায় ডাক্তার এলেন। সন্ধ্যের ডাক্তার নয়। রাউন্ডের ডাক্তার। বাবার দিকে তাকিয়েই বললেন, এখানে রেখেছে কেন? এক্ষুনি রক্ত দিতে হবে। কৃষ্ণনগর নিয়ে যান। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। দোকান পাট বন্ধ। একটা গাড়ী নেই। এ্যম্বুলেন্স-এ খোঁজ নিলাম। দুটো গাড়ীই বাইরে গেছে। সকাল না হলে কোন ব্যবস্থার উপায় নেই।
ডাক্তারকে বলামাত্র চেঁচিয়ে উঠলেন, নামেই শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হসপিটাল। এখানে কি আছে বলুন? ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। অপারেশনের ব্যবস্থানেই। ভাল নার্স নেই। অক্সিজেন ক্যারিভ্যান নেই। প্লাজমা সেন্টার নেই। সাপে কামড়ানোর ওষুধ নেই, সিটি স্ক্যান–আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হবে না। শুধু ধ্যাড়ধ্যেড়ে এক্স-রে মেশিন পড়ে আছে। মেডিকেল সেন্টার ফাঁকা –আছে শুধু গুর্ভনিরোধক আর জ্বর কাশির ওষুধ। আপনারা কি করেন?
দৌড়ে বাবার কাছে এলাম। স্যালাইন খুলে দিয়েছে। পাশের বেডের রোগী বললেন, ওটা ইনজেকশন ছিল। তন্দ্রা ঘুমে বাবা আচ্ছন্ন। সেই ঘোরে আমাকে ভেবেছে ডাক্তার। বলেছে আপনারা কি করেন? বলছি আমার খিদে পেয়েছে। খেতে দিচ্ছেন না!
রাতে আমার খাওয়ার জন্য দুটো বাপুজী কেক ছিল, তাই দিলাম। গোগ্রাসে দুটোই খেয়ে নিল বাবা। ভয়ে ভয়ে জল দিলাম গলায় ঢেলে। তৃপ্তির নিঃশ্বাস বেড়ল বাবার শরীর থেকে। বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে বাইরে এলাম। ওয়েটিং রুমে। দূর থেকে ভেসে আসছে গান …..কৃষ্ণনগর যেতে হবে – – – ও গিন্নী – –
তাই তো! বাবাকে ভোরেই নিয়ে যেতে হবে শক্তিনগর হাসপাতালে।
Leave a Reply