পার্থ কয়ালের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে, ২২ নভেম্বর#
ইউআইডি প্রকল্পটি শুরু থেকেই রহস্যঘন। এর ফলে গরীবদের উপকার হবার দাবিও পুরোপুরি ভ্রান্ত। যার মাধ্যমে গরীব ও তথ্যবিহীনদের আত্মপরিচয় দেওয়া হবে বলে দাবি করা হচ্ছে, আসলে তা দিয়ে আধার নম্বর যাদের নেই, তাদের পরিষেবা থেকে বাদ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে — এরকমই দাবি জানালেন আইন বিশেষজ্ঞ উষা রামনাথন, ২১ নভেম্বর আর্থকেয়ার বুকস্টোরে আয়োজিত একটি সভায়। তিনি আরও বললেন, আধার কোনও কার্ড নয়, একটি নম্বর মাত্র, তার মূল্য কেবল বায়োমেট্রিক্স-এর সঙ্গে মিললে, তবেই। কিন্তু ওই বায়োমেট্রিক্স অনেক ক্ষেত্রেই অচল। ফলে এই বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করে পরিচিতি জ্ঞাপন কতদূর সফল হবে তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়।
রামনাথন নিজে তদন্ত করে দেখেছেন, ইউআইডি-র সাফল্য নিয়ে যে প্রচার চলছে, তা অনেকটাই সাজানো। এবং এই ইউআইডি দিয়ে সরকার নাগরিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেস তৈরি করতে চাইছে, যাতে কোন নাগরিক কি কি সম্পত্তি খরিদ করল থেকে শুরু করল কবে কখন কাকে বিয়ে করল, সব লেখা থাকবে। এবার আমাদের সরকার এই প্রকল্পের কাজ দেশের ও বাইরের বেসরকারি কোম্পানির হাতে চালান করে দিলে এই ডেটাবেস বেসরকারি হাতে গিয়ে পড়বে।
এই প্রকল্প নিয়ে সেই ২০১০ থেকে প্রচার চললেও, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়নি, এই প্রকল্পে যা খরচ হবে তার তুলনায় এর ফলে লাভ কতটা, তাও খতিয়ে দেখা হয়নি।
এই ইউআইডি ডেটা নিয়ে সরকার বা অন্য কেউ অপব্যবহার বা দুর্ব্যবহার করতে যাতে না পারে তার জন্য কোনও আইনও নেই। কেউ এর দায়িত্ব নিতে রাজিও হচ্ছে না।
আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়েও কোনও আইন নেই। এখন ইউআইডি কর্তৃপক্ষ দিন রাত এক করে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া ডেটাবেস-এর অমিল। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়েই একপ্রস্থ নজরদারি এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ করে ফেলছে। এই প্রক্রিয়ায় যে চিহ্নিত করা, অনুসরণ করা বা দেগে দেওয়া হবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। এবং ন্যাটগ্রিড, এনসিটিসি, পিআইআই, ম্যাক — এইসব সংক্ষিপ্ত নাম তো আমরা তিন চার বছর ধরেই শুনছি, যারা নাকি নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোকে চোখা চোখা অস্ত্র সরবরাহ করবে জনগণের জীবন ও প্রাত্যাহিক আচরনের ওপর হস্তক্ষেপ করার জন্য। এগুলো হল — ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স গ্রিড বা ন্যাটগ্রিড, ক্রাইম এন্ড ক্রিমিন্যাল ট্র্যাকিং নেটওয়র্ক সিস্টেম, মাল্টি এজেন্সি সেন্টার বা ম্যাক, পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্ড ইনোভেশনস বা পিআইআই।
প্রশ্ন ছিল, আধার কার্ড করার চাপ কীভাবে এড়াতে পারা যায়? উত্তরে রামানাথন বলেন, যারা আধার কার্ড করিয়ে ফেলেছেন, তারা যেন তারা ব্যবহার না করান, আর যারা করান নি, তারা যেন বয়কট করেন। আধার নম্বর ব্যবহার না করার মাধ্যমেই নজরদারি ও ধরে ফেলা এড়ানো সম্ভব।
Leave a Reply