কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, কলকাতা, ২১ মার্চ#
মাইতিদা কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থায় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। বাড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্গত এগরা বিধানসভায়। দেশে বাড়ি-ঘর জমি জায়গা সবই আছে। এহেন মাইতিদা, তার নিজের কথায়, ‘বামপন্থী থেকে তৃণমূলপন্থী হয়েও, আবার ফিরেছি বামপন্থায়।’ একসময়, যখন সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ঘটছে, মাইতিদাকে দেখেছি চরম উত্তেজিত। জমি বাঁচাতে তৃণমূলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। সবিনয়ে কারণ জানতে চাই — দাদা, সিপিএম-এর দুর্নীতি দেশে তৃণমূল পার্টিটাকে আমরা নিজেরাই গড়েছিলাম। সৎভাবে কাজ করেছি। গরীব মানুষের কাছ থেকে একটা পয়সাও চাইনি। চেয়েছি গরীব মানুষ কাজ পাক — সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধে পাক। কিন্তু যারা পরে এলো সিপিএম থেকে, টাকার জোরে পঞ্চায়েতের নেতা হয়ে বসলো। তারা গরীবের আরও বেশি বেশি পকেট কাটতে লাগলো। ওরা যদি কোনও কাজে ১০০ টাকা নিয়ে থাকে এরা চায় ১০০০ টাকা। ইন্দিরা আবাস যোজনার ৪০ হাজার টাকায় ১০ হাজার টাকা পকেটে পোরে। গরীব মানুষ দেখে তাই সই, ৩০ হাজার টাকা তো পাওয়া গেল।
— আপনাদের ওখানে এবার তো দাঁড়িয়েছে সন্ধ্যা রায়।
হারবে। প্রবোধ পাণ্ডাই জিতবেন। গতবারও জিতেছেন। সারা পশ্চিমবাংলায় তৃণমূল খুব বেশি হলে ১২-১৩ টা আসনে জিতবে। চতুর্মুখী ভোট তো, কাটাকাটি হবেই।
— আচ্ছা মাইতিদা, কেন্দ্রে কি এবার বিজেপিই আসছে?
দেখুন, বিজেপি এলে সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোল শুরু হয়ে যাবে। তবে কংগ্রেসই আসবে ক্ষমতায়। গত দশ বছরে ভালো কাজ হয়েছে। কংগ্রেস এলে আরও উন্নতি হবে। আরে পশ্চিমবাংলাতেও কংগ্রেসেরই জেতার কথা। কিন্তু ওদের প্রচার নেই তো। এই যে ণ্ণইন্দিরা আবাস যোজনা’, ণ্ণগ্রাম সড়ক যোজনা’, ণ্ণ১০০ দিনের কাজ’ — এগুলো কে করেছে? কংগ্রেসই তো। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়া এগুলো দেবে কে? রাজ্য সরকারের আছে কি? কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা, মাটি উৎসবের টাকা ধার করে বিলোচ্ছে। পরে ভুগবে। হয় বামপন্থীরা জিতুক, নয়তো কংগ্রেস।
এখন মনে হয়, সিঙ্গুরে কারখানা হলে ভালোই হত। নন্দীগ্রামের ব্যাপারটা আলাদা, ওখানে সরকারি নির্দেশটা ডি-নোটিফাই হয়েছিল। তা সত্ত্বেও জায়গাটার দখল নেবার জন্য শুভেন্দু অধিকারীরা মানুষকে ভুল বুঝিয়েছিল।
— কিন্তু মাইতিদা, চাষের জমিতে কারখানা হওয়া কি খুব দরকার?
দেখুন! কলকারখানা ছাড়া আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে কি করে। আর কলকারখানা হলে সরকারের ঘরে টাকা আসে, সেই টাকায় কত উন্নয়নের কাজ হয়। আমার বাড়ির সামনের রাস্তাটা — সে তো ব্যক্তি আমি তৈরি করবো না। সরকার করে দেবে। জমির দাম-ও তো এখন ভালোই দিচ্ছে। বাজারমূল্যের তিনগুণ দাম দিচ্ছে। যারা কাছের নয়, দূরের জমির মালিক, তারা আরও লাভবান হচ্ছে।
— মাইতিদা, ছোটো থেকে বড়ো হতে হতে আপনাদের মেদিনীপুর, বর্ধমান সহ সারা পশ্চিমবাংলায় চাষের কি অবস্থা দাঁড়ালো?
খুব ভালো। চাষের ৫০ শতাংশ লাভ আছে যদি নিজের ঘরে লেবার থাকে। চাষি, চাষির বউ; ছেলে, ছেলের বউ সবাই মিলে যদি চাষ করে। কিন্তু অনেকের ঘরে লেবার নাই তো।
— তাহলে সরকারের ঘরে টাকা আসার জন্য শুধু কলকারখানা থেকে কেন, চাষ থেকেও তো রাজস্ব আদায় হতে পারে?
দূর। আপনি বুঝছেন না। মনে করুন, চাষির জমিতে ফসল হয়ে পড়ে আছে, সেখানে সরকার থেকে কে গিয়ে কিভাবে কার জমি থেকে কতটা ফসলের জন্য রাজস্ব আদায় করবে? কারখানা হলে সরাসরি উৎপাদন থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারে। আর জমির ওপরে তো ট্যাক্স আছেই।
— ৩৪ বছর বামফ্রন্ট থাকায় কি উন্নতি হলো?
আমার গ্রামে আমার বয়সী কারুর ক্লাস এইটের বেশি বিদ্যে নয়। ১২ টাকা স্কুলে মাইনে ছিল। তাই কেউ দিতে পারতো না। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে স্কুলে ফ্রি করে দিল। এখন যে কয়েক লাখ ছেলে মাধ্যমিক দিচ্ছে, সে তো এমনি নয়। … আজ থাক, আরেকদিন সময় করে আসবেন, সব বুঝিয়ে দেব।
Leave a Reply