শামসুদ্দিন পুরকাইত, হাজিরতন, ১৪ এপ্রিল#
এটা আমার প্রথম আজমের তথা রাজস্থান যাত্রা নয়। আগে বহুবার আজমের এসেছি, ঠিক কতোবার বলতে পারবোনা। মনে হয় দশ/বারো বার হতে পারে। প্রথম সেই ১৯৮৩’তে, তারপর ত্রিশ বছরে কতোবার হল সঠিক হিসেব নেই।
এই যাত্রার আগে গত ফেব্রুয়ারীতে কনফার্মড্ টিকেট বাতিল করতে হল পারিবারিক অসুবিধার কারণে। আমার জীবন-সঙ্গিনী যেতে পারছিল না পারিবারিক ঝামেলায়, আর আমি যেতে ভীষণই আগ্রহী ছিলাম। তাই মনে মনে সঙ্গী খুঁজছিলাম। ছেলে হঠাৎ একদিন বলল ‘বাবু কাকা(আমার মেজ কাকার ছোট ছেলে) তোমার সঙ্গে যেতে পারে, আমায় জিজ্ঞেস করছিল তুমি আজমীরে যাবে?’ আমি তো এক কথায় রাজি। পরদিনই টিকেট রিজার্ভ করতে গেলাম। বাবু বলল ‘মেজদা আরও একজন সাথে যাবে। তোর বৌ না তো?’- আমি জিজ্ঞেস করলাম। ফ্যামিলি নিয়ে কোথাও যেতে একটু ঝামেলা হয়, আমি চাইছিলাম দু/তিন পুরুষ হলে ঝাড়া হাত-পা বিন্দাস ঘোরা যাবে। আমাকে বাবু আশ্বস্ত করে জানাল যে, আমাদের পাশের বাড়ির একটা ছেলে আমাদের সাথে যেতে ইচ্ছুক। আসলে সাধারন ভাবে আজমেরে সবাই ফ্যামিলি নিয়েই যেতে চায়। ওটা ভারতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান বলে গণ্য করা হয়, তাই পূণ্য অর্জনে একসঙ্গে যাওয়া অনেকে শ্রেয় বলে মনে করে। সে যাই হোক, তিনজনের যাওয়ার টিকেট কনফার্মড হল কিন্তু রিটার্ণ টিকেট হল ওয়েটিং লিস্ট এক’শ এর উপর। ভাবলাম ওটা ঠিক হয়ে যাবে। আগের বারও এমনটাই হয়েছিল। নেটওয়ার্ক সব সময় ঠিক না থাকলে বুকিং ওয়েটিং লিস্টে চলে যায়। কে জানতো ঐ ওয়েটিং লিস্টটাই আমাদের ভোগাবে। দোল-হোলি-গুড ফ্রাইডে মিলিয়ে তিন দিনের ছুটি, সঙ্গে শনিবার আর রোববার মিলিয়ে হল পাঁচদিন। ওই ফাঁকেই ঘুরে আসতে হবে। দিন চারেক পর বাবুর মেজদা আর আমার দাদা ও আমাদের সাথে যাবে বলে জানিয়ে দিল। আবার যেতে হল রিজার্ভেশন করাতে। আমি গেলাম দাদার টিকিট আনতে আর বাবু পাঠালো আর একজনকে। ভাগ্যক্রমে বাবুর মেজদার সিট আমাদের কামরায় আমাদের পরের বার্থেই হল, কিন্তু দাদার সিট পড়ল একটা কামরা বাদ দিয়ে পরের কামরায়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাদার আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। দিন দশেক আগে বড় বৌদির শরীর খারাপ হল। সোনোগ্রাফে জানা গেল পাথর আছে। আর কি, দাদার যাত্রা বাতিল। শেষে চারজনই যার যার ব্যাগ গুছিয়ে চললাম আজমের-র উদ্দেশ্যে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারোটার আজমের এক্সপ্রেসের টিকেট ছিল। রাত ন’টা চল্লিশে সন্তোষপুর থেকে শিয়ালদা লোকালে চেপে বসলাম। সাড়ে দশটায় শেয়ালদা পৌঁছে শুনি আজমের এক্সপ্রেস আজ রাত সাড়ে এগারোটার পরিবর্তে রাত দেড়-টায় ছাড়বে। অথচ আসার আগে সন্ধ্যায় নেট সার্চ করে জেনেছি গাড়ি আজ সঠিক সময়েই ছাড়বে। হারামজাদারা আগে এটা ঘোষণা করলে রাতের খাবারটা বাড়িতে আরাম করে খেয়ে পরের ট্রেনে আসতাম। আমি তবু দুটো হাত-রুটি একটু মুরগির মাংস ঝোল দিয়ে খেয়ে এসেছি বাকিরা ঐ সন্ধ্যার চা জলখাবারটাই খেয়ে এসেছে। কি আর করা যাবে। স্টেশনে চাদর পেতে বসে পড়লাম ‘খাজা বাবা কি মেহেরবানি’- বলে।
Leave a Reply