সংবাদমন্থন প্রতিবেদন। শান্তিপুর। ২১ জুলাই, ২০২০। #
প্রায় আটচল্লিশ ঘন্টা আগে চিকিৎসারত দু’জন ডাক্তারের সোয়াব টেস্ট অনলাইনে হলুদ তকমা অর্থাৎ পেন্ডিং দেখানোয় তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হসপিটাল। যদিও হাসপাতাল সুপার ড. জয়ন্ত বিশ্বাস আজ জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর তথা C.M.O.H. এর নির্দেশেই তিনি হাসপাতাল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন।
গতকাল সুপার সাহেবের সাথে কথা বলার পর শান্তিপুরের কিছু সমাজ-সক্রিয় মানুষ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন আজ প্রথমে শান্তিপুর পৌরসভা ও রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অজয় দে’কে অনুরোধ করা হবে হাসপাতাল খোলা না গেলে পৌর অঞ্চলের তিনটি পুরক্লিনিকের পরিকাঠামো ও পরিষেবার সময় বাড়ানোর জন্য। কিন্তু আজ ২১শে জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবস পালনের তোড়জোড়ের ভেতর অজয়বাবুকে ধরাছোঁয়ার মধ্যে পাওয়া যায়নি। ওদিকে হাসপাতালে দুপুর থেকে মূল দরজার সামনে একটি অস্থায়ী আপৎকালীন চিকিৎসার জন্য টেবিল পাতা হয়। হাসপাতাল সুপার ড. বিশ্বাসের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, আমরা তো পরিষেবা দিতেই চাই। কিন্তু যারা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আলোড়ন তোলার চেষ্টা করছেন, তারা যদি এতই শান্তিপুর দরদী হয়ে থাকেন, একবার এসে নিজেদের প্রেসারটা মাপিয়ে যান না। তিনি আরো বলেন, জেলার মধ্যে একমাত্র শান্তিপুরেই তার নেতৃত্বে কোনো পরিযায়ী শ্রমিককে হাসপাতালে না এনে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গুলোতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে তাদের করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে এনেছেন। তার মতে, রোগটা তো খুবই ছোঁয়াচে। আজ পরিষেবা বন্ধ বলে লোকে যেমন আমার দিকে আঙুল তুলছেন, ডাক্তারদের মাধ্যমে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলেও তো তারা আমায় ছেড়ে দেবেন না। ড. বিশ্বাসের থেকে জানা গেল প্রায় দেড়শজন ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-গ্রুপ ডি কর্মী নিয়ে শান্তিপুর হাসপাতাল চলে। ডাক্তার আছেন ষোলোজন। তার মধ্যে একজন ড. জানা প্রথম করোনা পজিটিভ ধরা পড়েন। পরে আরো দুজনের রিপোর্ট পেন্ডিং দেখায়। তাদের রিপোর্ট পজিটিভ হলে সংস্পর্শে আসা বেশিরভাগ চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরই করোনা পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করে আজ তিরিশ জনের সোয়াব নমুনা পাঠানোর বন্দোবস্ত হয়েছে। যেখানে একদিনে দশজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আজ হাসপাতাল চত্বর স্যানিটাইজ করার কাজ শুরু হয়েছে। গ্রুপ ডি কর্মীদেরও ছুটি দেওয়া হয়েছে সংক্রমণের আশঙ্কায়। বাইরে থেকে দুজন কর্মী এনে স্যানিটাইজেশনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমাদের অসুস্থ ডাক্তার যেখানে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগেও কলকাতার কোনো হাসপাতালে বেড পাচ্ছেন না, সেখানে সাধারণ মানুষের গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলে কী অবস্থা হবে ভেবে দেখুন। আজ দুপুরে জরুরী পরিষেবা শুরু হলেও তিনি শান্তিপুরবাসীকে অনুরোধ করেন, খুব দরকার না পড়লে তারা যেন হাসপাতালে না আসেন।
গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক হাসপাতালগুলির বেহাল অবস্থার কথা জানানো হলে ড. বিশ্বাস বলেন, ওখানে তো আমরা ডাক্তার পাঠাই না। তাই বলতে পারবনা। ওটা ব্লক অফিসের ব্যাপার। আগামীকাল এই গ্রামীণ হাসপাতালগুলির স্বাস্থ্যোন্নতি ও পৌর ক্লিনিকগুলির পরিষেবাবৃদ্ধির দাবীতে শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের কাছে দাবীদাওয়া জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে পত্রিকার তরফ থেকে। পাশাপাশি শিশু বৃদ্ধ ও প্রসূতি মহিলাদের চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে হাসপাতালের সমস্ত পরিষেবা যত দ্রুত শুরু করা যায় সে ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করা হবে লাগাতার।
কিছু নাগরিক মনে করিয়ে দেন, শান্তিপুর শহরের গা দিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বেহাল রাস্তায় দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ফলে জরুরী পরিষেবার নামে মন ভোলানো প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কতদিন চলবে? যেখানে হাসপাতাল সুপার স্বয়ং জানালেন, দেড়শ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীর সকলের কোভিড পরীক্ষা ও রিপোর্ট হাতে পাওয়া বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
Leave a Reply