২৪ জুলাই, জিতেন নন্দী, রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা#
মহেশতলা পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের লাগোয়া আকড়া ফটকের গঙ্গার ধারে রয়েছে অনেকগুলি ইটভাটা। ইটভাটার আশেপাশে বেশ কটি বস্তি রয়েছে। এগুলো সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। কিন্তু আমাদের পুর বা নাগরিক জীবনের সঙ্গে নানান সম্পর্কে এগুলি যুক্ত। এই বর্ষায় যখন আকাশ ফুটো হয়ে জল ঝরে চলেছে, তখন এখানকার নয়াবস্তির মানুষ জলকষ্টে ভুগছে। আমি যখন ওখানে পৌঁছালাম, বৃষ্টি পড়ছে। একটা নতুন চাপাকল বসানো হয়েছে বটে। কিন্তু জল উঠছে না। তার হাতলটা সরিয়ে রাখা হয়েছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাইটট্র্যাকের স্কুলঘরটা খুলে দেওয়া হল। আলাপ হল বাসিন্দা লীলাদেবী, হোসেনারা বেগম, ৭নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কমিটির প্রতিনিধি চেঙ্গিজ আর রাইটট্র্যাকের কর্মী আশা সামন্তের সঙ্গে।
লীলাদেবী নয়াবস্তিতে ২৫-৩০ বছর আছেন। হোসেনারা বেগম বিয়ে হয়ে এখানে এসেছিলেন ২০ বছর আগে। ওঁর বাপের বাড়ি বজবজে। দুজনেই বাঙালি মেয়ে, স্বামীরা বিহারি। চেঙ্গিজ ছোটোবেলা থেকে এখানে আছেন, আগে লালপোলে থাকতেন। বললেন, ‘একখানা ঘর ছিল। আমরা তিনচার ভাই, কী করব? এখানে এসে ঘর করলাম।’
ওঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চারমাস আগে মার্চ নাগাদ এই কলটা পুরসভা থেকে বসানো হয়েছে। কলটা বসানোর পর যখন পাম্প করা হল, জল উঠল না। তখন পুরসভায় রিপোর্ট করা হল। ওরা বলল, যা হবে (পঞ্চায়েত) নির্বাচনের পর। রাইটট্র্যাক থেকে পুরসভাকে চিঠি লিখে জানানো হয়েছিল। পুরসভা একইদিনে একটা ষোলোবিঘায় আর একটা নয়াবস্তিতে বসিয়েছে। জল যখন উঠল না, তখন মিস্ত্রিকে ফোন করা হয়েছিল। মিস্ত্রি এসেছিল, সে বলল, এই পাইপ তুলে নতুন লাইন বসাতে হবে। সামনে একটা টাইমকল আছে, সেটা ভাঙা, জল ওঠে না। নয়াবস্তিতে কোনো কলই নেই। লোকে গঙ্গার জল খায় আর নয়তো ইটভাটা থেকে জল আনতে হয়। ইটভাটাগুলোতে চাপাকল আছে।
হোসেনারা বেগম বললেন, ‘পানির জন্য আমরা অভিযোগ জানিয়েছিলাম। জলের জন্য আমাদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। অনেক যুদ্ধ করে কলটা আমরা বসালাম। রাস্তাঘাট আমাদের চলার মতো নয়। এই দুটোই আমাদের সবথেকে বড়ো কষ্ট। কোনখানে গেলে আমাদের হক আমরা পাব বুঝতে পারছিলাম না। রাইটট্র্যাক থেকে আমাদের দেখিয়েছে, এইভাবে এইভাবে করলে তোমরা হক পাবে।’
আট-দশটা পায়খানার জন্য রাইটট্র্যাক থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিছু লোক এখানে আপত্তি করে। ব্রিকবোর্ড জায়গা দেয়নি। এটা ব্রিকবোর্ডের জায়গা। তাই পায়খানা হল না। তৃণমূল আসার পর অবশ্য বছরখানেক হল দুটো পায়খানা হয়েছে। যেখানে ওরা আগে করতে দেয়নি, সেখানেই হয়েছে এই দুটো। ভাটা-মালিকেরা তৃণমূলের সাপোর্টার।
চেঙ্গিজ বলেন, ‘নয়াবস্তিতে চারশো ঘর। একটা পায়খানা করবে বলে দিয়ে ওরা চলে যাচ্ছিল। আমি বললাম, আমাদের এখানে পায়খানা লাগবে না। আপনি এক কাজ করুন, ওই পায়খানা অন্য জায়গায় বসিয়ে দিন। আমাদের মেয়েদের জঙ্গলে যাওয়া অভ্যেস আছে। আমরা এখানে রাজনীতি করতে এসেছি, মা-বোনেদের খিস্তি খেতে আসিনি। তাও তো জলের জন্য কথা শুনতে হচ্ছে। তারপর দুটো পায়খানা তৈরি হল।’
চেঙ্গিজ আরও বলেন, ‘তিন ইঞ্চি পাইপ, তিনশো মিটার জুড়ে চেঞ্জ করতে হবে, তবে জল আসবে। খাটালের মুখ পর্যন্ত কমপ্লিট পাইপ এসে গেছে। ১নং আর ৫নং বস্তি বাকি আছে। ধানখেতির ভেতরে ১৭নং বস্তি, নতুন বস্তি আর ১নং বস্তিতে জলের সমস্যা। বাকি কোনো জায়গায় জলের সমস্যা নেই।’
আকড়া ফটকের সর্বোদয় স্কুলেও বাচ্চাদের জলের কষ্ট। এটা হিন্দি স্কুল। এখানে নয়াবস্তির বাচ্চারা পড়ে। এখানে জল দিচ্ছে না। বাচ্চারা পড়ছে। দিদিমণিরা বলছে, আমরা কী করব? আমাদের জল নেই। ওরা পার্টি অফিসে জানিয়েছে, এমএলএ-কেও জানিয়েছে। স্কুলের বাইরে একটা টাইমকল আছে। ওখানে দিনে দুবার টাইমে জল আসে। চাপাকল নেই। স্কুলে একটা বাথরুম আছে, সেখানে টিচারদের জন্য জল তুলে রাখে। সরকার থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেই।
বাঙালি ছেলেমেয়েরা পড়ে নবরত্ন স্কুলে। চাপাকল আছে ওই স্কুলে। ক্লাস ফোর পর্যন্ত বাচ্চারা এইসব বস্তি থেকে এই দুটো স্কুলে যায়।
Leave a Reply