জিতেন নন্দী, ১৪ সেপ্টেম্বর, আকড়া, বেড়ারবাগান#
আকড়ার নিগৃহীতা মেয়েটি এখন আগের তুলনায় সুস্থ হয়ে উঠেছে। ওকে গাড়ি থেকে বাইরে ঠেলে রাস্তায় ফেলে দেওয়ায় হাঁটুতে ভালোরকম চোট লেগেছিল, ঘা হয়েছিল। আকড়ায় ডাক্তার পি ইসলামকে দেখিয়ে সেটা অনেকখানি সেরে এসেছে। নিগ্রহের পর প্রথম যখন হাসপাতালে আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তখন ওর আতঙ্কের জের কাটেনি, কথাবার্তা ছিল কিছুটা অসংলগ্ন। এমনিতেই বাইশ বছরের যে কোনো মেয়ের তুলনায় এই মেয়েটি কিছুটা শিশুসুলভ, সরল — যাকে লোকে বলে বোকাসোকা আর কথাবার্তা একটু এলোমেলো। তায় সে দুই ছেলের মা, স্বামী পরিত্যক্তা, অথচ স্বভাবে তেমন কাঠিন্য নেই। যাই হোক, এদিন ওর সঙ্গে আরও কিছুটা কথা হল। — জিতেন নন্দী।
আমার বিয়ে হয়েছিল নাসির খানের সঙ্গে চার বছর আগে। বগা নোয়াপাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়ে ছিলাম স্বামীর সঙ্গে। ও হল লাভলি স্টোর্সের চাচাতো ভাই। আমার মামারা ওকে কারবার করে দিয়েছিল। প্রথম বাচ্চাটা যখন হল, মসলিমা বিবি বিইয়েছিল। তার এখন তিন বছর। তারপর সে কারবারের পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেল। শুনলাম মেমানপুরে পালিয়েছে। তখন আমার পেটে আর একটা বাচ্চা। একা ওই ঘরে কী করে থাকব? মা নিজে গিয়ে আমায় এখানে নিয়ে এল। ছোটো ছেলেটাকে মা নিজেই বিইয়েছে। এখন শুনি সে চন্দননগরের দিকে কোথায় দরজির কাজ করে। সে আবার বিয়েও করেছে আর একটা।
শুনছি সফিক ধরা পড়েছে দিল্লি থেকে। ওখানে নাকি ওর বোনের বাড়ি, বউও আছে। এখন তো সব শুনতে পাচ্ছি। লোকে বলছে, ওর বউ নাকি দিল্লিতে মেয়ে বিক্রি করে। ‘বিয়ে করব’ বলে নিয়ে যায় এখান থেকে। ওরা মেয়ে পাচার করে। এখানে সফিকের ঘর ভাঙিপাড়ার কিলখানায়। ঘরে ওর মা, ভাবী আছে। পরশুদিন মা গিয়ে মহেশতলা থানায় দেখে এসেছে, সফিক লকআপে ছিল। পুলিশ ওর ওপর খুব চাপ দিচ্ছে। বলছে, তোর জন্য আমাদের বদনাম হয়ে যাচ্ছে। তারপর ওকে নাকি এমন মারধোর করেছে যে বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। আমার কাছে রঙ নাম্বারে ফোন আসত, ভালোবাসার কথা বলত, কে করত আমি জানি না। যাই হোক, সফিককে আমি ছাড়ব না। ওর শাস্তি হতেই হবে। ওর ফাঁসি আমি চাই না। আমার ছেলে দুটোর খারাপ (অমঙ্গল) হবে। তবে আমার ছেলে দুটোকে নিয়ে আমি কোথায় থাকব? ওদের ছেড়ে রেখে আমি তো কোনো কাজেও যেতে পারব না। এদিকে আমার ভাইরা ঘরে থাকতে দিতে চায় না, বকাবকি করে। বলে, ‘তোর জন্য আমরা বাইরে মুখ দেখাতে পারি না’। আমি কী করব? সারাজীবন আমার ছেলেদের খাওয়ানোর খরচা সফিককে দিতে হবে আর থাকার জন্য ঘর করে দিতে হবে। আমার ছোটো দুটো ভাই কালামদের ওখানে কাপড়ে প্রিন্টিংয়ের কাজ করে। একশো টাকা রোজ। এছাড়া আমাদের এখন কোনো রোজগার নেই। সফিক যদি আমায় বিয়ে করতে চায়, আমি কখনো ওকে চাই না। ওরকম ছেলের সঙ্গে আমি ঘর করতে পারব না। ছি!
আমাকে আলিপুর কোর্টে ম্যাডাম নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে সব জিজ্ঞেস করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি পুলিশ?’ বলে, ‘আমি পুলিশ না।’ সে বলল, ‘তুই ভয় করিসনি।’ আমি বলি, ‘তুমি তাহলে কী?’
— আমাকে চিনিস?
— তুমি জজ। আমি তো জজ কোনটা তাও জানি না, কাকে জজ বলে!
— তুমি কী চাও?
আমি সব বললাম, কী হয়েছিল।
— আমাকে কোনো আশ্রয় করে দেবে না তোমরা? মরব নাকি? আমার ভাইরা থাকতে দিতে চায় না। আমার দুটো ছোটো ছোটো বাচ্চা। আমি কী করে খাব? এদের কি কোনো শাস্তি নেই?
— শাস্তি নিশ্চয় পাবে।
Leave a Reply