সঞ্জয় ঘোষ, জয়নগর-মজিলপুর, ২৮ জানুয়ারি#
পাশের ছবিটি কৃষ্ণা হালদারের (২৩)। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাথুরাপুর থানার পূর্ব রানাঘাটা গ্রামে। মাত্র কয়েকদিন আগে (যেদিন এই ছবিটি তোলা হয়েছে সেদিনই) সে ফিরেছে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি থেকে বাড়িতে। সেখানে অনুষ্ঠিত ৪৯তম ন্যাশনাল ক্রস কান্ট্রি দৌড়ে সে তৃতীয় স্থান পেয়েছে। এই নিয়ে পরপর তিনবার সে জাতীয় স্তরে তৃতীয় হল। কিন্তু মনে তার একটুও আনন্দ নেই। তার এখনকার কোচ নিত্যানন্দ গায়েন জানালেন, কৃষ্ণা বলছে, কাগজে খবর আর ছবি দিয়ে কী হবে, আমার এখনই চাকরি চাই, নাহলে আমি বাঁচবো না।
কৃষ্ণার বাবা দীনবন্ধু হালদার (৬০) আগাম টাকা নিয়ে চাষ বাস করেন। নিজেদের কোনো চাষের জমি নেই, জানালেন মা করুণা হালদার (৪৬)। আর কিছু মনিহারি জিনিস নিয়ে নতুনহাটে বসেন। ক্রস কান্ট্রি দৌড়ে ৮ কিলোমিটার দৌড়তে হয়। দারুণ পরিশ্রম। কী খায় সে? তার বড়ো বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ১৮ বছর বয়সের ছোট ভাইটারও বিয়ে হয়ে গেছে। সে কিছুই করে না। ৫ জনের সংসার চলে শুধু বাবার সামান্য আয়ে। ভাত আর ডাল ছাড়া কী খাবে সে? এইরকম পরিশ্রমসাধ্য দৌড়ের পর দরকার হয় মাংস ডিম প্রভৃতি পুষ্টিকর খাদ্য। পুরনো কালচে হয়ে যাওয়া খড়ে ছাওয়া এক চিলতে মাটির কুটিরেব সামনে দাঁড়িয়ে তার মার করুণ চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। ‘মা বাবা না হলেই ভালো হত আমাদের। মেয়েকে খেতে দিতে পারিনা, সকলে বলে, মেয়ে ভালো দৌড়য়। একটু দেখো।ওইতো আর কী খেতে দেবো ভাত ডাল ছাড়া? একটু ফল বা একটু হরলিক্স যে দেবো, টাকা কোথায়?’
নিত্যানন্দ বলছিল, কয়েক বছর আগে কৃষ্ণা ভিবজিওর বলে একটা চিটফান্ড কোম্পানির এজেন্ট হয়ে কিছুদিন কাজ করেছিলো। ২০১১ তে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।যারা টাকা জমা রেখেছিল, তারা এখন কৃষ্ণাকে চাপ দিচ্ছে টাকা ফেরতের জন্য। কোনো জায়গায় দৌড় প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলে তা বিক্রি করে ধার কিছুটা শোধ করার চেষ্টা করে। তাকে তিন লক্ষ টাকা শোধ করতে হবে। কী করে পারবে? কোনো সহায়তা না পেলে?
Leave a Reply