শমীক সরকার, ৩০ আগস্ট, কলকাতা#
দিনেদুপুরে দেশের মাটিতে দ্রোণ বিমান, অর্থাৎ মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইংরেজিতে আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল বা ইউএভি) ব্যবহার করা শুরু করেছে ভারত সরকার। আপাতত তা ব্যবহার করা হচ্ছে নজরদারির জন্য। গত ১৫ আগস্ট কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে বক্সি স্টেডিয়ামে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবস পালন অনুষ্ঠানে এই দ্রোণ দিয়ে আকাশপথে নজরদারি চালানো হয় এবং তার ছবি তথ্য কন্ট্রোল রুমে পর্দায় দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, একবছর আগে শ্রীনগর থেকে প্রকাশিত একটি কাশ্মীরি দৈনিক দাবি করেছিল, কাশ্মীর সীমান্তের ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ বরাবর দ্রোণ দিয়ে নজরদারি শুরু হয়েছে। প্রতি সন্ধ্যেবেলা মানসবাল আর্মি বেস থেকে দ্রোণ আকাশে ওড়ে এবং বান্দিপোরা ও কুপওয়ারার সীমান্ত বরাবর তা জীবন্ত কোনো কিছুর চলাফেরা হচ্ছে কি না তা নজর করে বলে পত্রিকাটিকে জানিয়েছিল এক আর্মি আধিকারিক। পরে সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অফিসার জে এস ব্রার।
মধ্য ভারতের নকশাল উপদ্রুত বলে চিহ্নিত অঞ্চলে নজরদারির জন্য দ্রোণ ব্যবহার করার সরকারি পরিকল্পনা অনেকদিনের। এক বছর আগে ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট লোকসভাতে একটি প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছিলেন, নকশাল উপদ্রুত অঞ্চলে দ্রোণ ব্যবহার করে নজরদারির পরিকল্পনা আছে, কিন্তু কবে থেকে তা শুরু হবে বলা যাচ্ছে না।
ভারত সরকার দ্রোণ বানানোও শুরু করে দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদী এবং নকশাল দমনের কাজে ব্যবহারের জন্য ভারত সরকার দিন ও রাতে এবং প্রতিকূল আবহাওয়াতে নজরদারি চালানোর জন্য দ্রোণ বিমান রুস্তম-২ বানাচ্ছে। এর আগে ২০০৬-৭ সাল থেকেই আরেক ধরনের দ্রোণ লক্ষ্য-১ বানানো শুরু করেছে ভারত সরকার, যার তিরিশটি বানিয়ে এরই মধ্যে সেনাবাহিনীকে দিয়েও দেওয়া হয়েছে। একেকটি লক্ষ্য-১ বানাতে খরচ হয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী এম এম পাল্লাম রাজু এবছরের মে মাসে লোকসভায় এইসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে ১৯৯৯ সাল থেকে ১২টি নিশান্ত নামের দ্রোণ ব্যবহার করেছিল ভারত সরকার, কিন্তু সেগুলি ছিল অতিকায়।
গত ২৯ আগস্ট প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, কাশ্মীরের উধমপুর আর্মি বেস-এর জন্য ২০টি ‘ছোটো দ্রোণ’ কেনা হচ্ছে, যেগুলির একেকটির ওজন হবে দশ কেজির কম।
প্রসঙ্গত আমেরিকা তার নিজের দেশে অনেকদিন ধরেই দ্রোণ ব্যবহার করে গোপন নজরদারি চালাচ্ছে। এই তথ্য ফাঁস হয় যখন মার্কিন তথ্য অধিকার সংস্থা ‘ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন’-এর একটি মামলার জবাবে এবছর জানুয়ারি মাসে মার্কিন সরকার জানায়, ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এই দ্রোণ নজরদারি চালাচ্ছে আমেরিকা জুড়ে। সম্প্রতি আমেরিকা এক ধরনের ‘ক্ষুদ্র দ্রোণ’ ব্যবহার করছে, যা রাতের অন্ধকারে এমনকী বাড়ির জানলার বাইরে উড়ে এলেও ঘরের ভেতরের কেউ জানতে পারবে না। এই দ্রোণ এমনকী মানুষের মুখ চিনতে পারে, হাতের ছাপের ছবি তুলতে পারে এবং অবশ্যই গুলি চালাতে পারে।
এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শতাধিক মার্কিন সংস্থা দ্রোণ নজরদারি নিয়ে আইন করার দাবি তুলেছে, কারণ দ্রোণ ব্যবহার মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভঙ্গ করছে।
Leave a Reply