রাজীব দত্ত, আকড়া, মহেশতলা, ১৬ আগস্ট#

চন্দনবাড়িতে একটা গাড়ি ছেড়ে দিল ভোরবেলা। প্রচুর গাড়ি পরপর যাচ্ছে। প্রবেশপথের সামনে দেখানোর জন্যকলকাতা থেকে তৈরি করা আমার তিনখানা পাস ছিল। মেডিকাল রিপোর্ট-টিপোর্ট থাকে ওর মধ্যে। তিনটে কপির মধ্যে ওরা একটা নিয়ে নিল। একটা কপি হচ্ছে, আমরা ঢুকছি, তার মানে উপত্যকার ভিতরে কতজন লোক আছে, তার একটা হিসেব ওদের কাছে থাকল। একটা কপি আমার কাছে থাকবে, কারণ পথের মাঝে যদি চেক করে, তাহলে আমাকে দেখাতে হবে। তৃতীয় কপিটা মোবাইল ব্যবহারের জন্য থাকে। বিরাট লাইন। আমাদের জিনিসপত্র চেক করা হল। ঢোকার লোকের কোটা তো নির্দিষ্ট। তবে গতকাল ঢোকার কথা ছিল, আসতে পারেনি, সেরকম লোকেদের ক্ষেত্রে ওরা কিছুটা বিবেচনা করে। কিন্তু পরেরদিনের যাত্রী কোনোমতেই ঢুকে যেতে পারবে না।
আমাদের বলা হয়েছিল, প্লাস্টিক নিয়ে ঢুকতে পারবে না। ব্যাপারটা আমার পছন্দ, পাহাড়ে আমি কখনো প্লাস্টিক ফেলি না। কিন্তু পাহাড়ে গেলে ব্যাগের ভিতর দরকারি সমস্ত জিনিস আমরা প্লাস্টিকে মুড়ে রাখি যাতে বৃষ্টি হলে আমি নিজে ভিজলেও ব্যাগের জামাকাপড়গুলো শুকনো থাকে। চেকিংয়ে আমার স্যাকটা নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়ে বস্তে মে কেয়া হ্যায়?’ আমি বললাম, আগে কখনো অমরনাথে আসিনি, সব নিয়ে চলে এসেছি। বেশিরভাগ লোক দেখছি, দু-একটা জামাকাপড় নিয়ে চলে এসেছে। খাবার থেকে আরম্ভ করে টিফিন কেরিয়ার সব নিয়ে এসেছি। ও বলল, ‘জাননা চাহিয়ে না? যো ভি হো …।’ যাই হোক ছেড়ে দিল, স্যাক খুলে চেক করল না।
অমরনাথের উপত্যকাকে কেন্দ্র করে ওদিকে বালতাল গেট থেকে শুরু করে এদিকে চন্দনবাড়ির গেট পর্যন্ত দায়িত্বে আছে, বিহার রেজিমেন্ট, বিএসএফ-এর ১৬, ৮০ আর ৬৮ ব্যাটেলিয়ন, এরা আধাসামরিক বাহিনী; এছাড়া রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ আর শ্রীঅমরনাথজী শ্রাইন বোর্ড — তাদের নিজস্ব সিকিউরিটি সিস্টেম আছে — সরকারি সংস্থা কিন্তু স্বশাসিত। এদের ওপর নিরাপত্তার দায়িত্ব। রাস্তায় শারীরিক তল্লাশি করে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। শ্রাইন বোর্ড শুধু গুহার সামনেটা রক্ষণাবেক্ষণ করে। ওখানে আবার শ্রাইন বোর্ডের ক্ষমতা এত বেশি, এমনকী সেনাবাহিনীও বোধহয় নাক গলাতে পারবে না।
আমরা দুজন হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটার মুখেই পড়ল একটা জমাট বরফের এলাকা, সেটাকে হ্রদ বলা যাবে না। বলে রাখা ভালো, প্রতিবছর যাত্রাটা হয় আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে শ্রাবণ পূর্ণিমা। কিন্তু এই একমাসে যাত্রাটা সম্পূর্ণ করা যাচ্ছিল না। শ্রাইন বোর্ড কিছু তিথি-টিথি মেনে যাত্রাকে এগিয়ে আনে, যেমন এবছর চল্লিশ দিন করা হয়েছে। অমরনাথ প্রায় ১৩,৮০০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে। আর যে গিরিপথ পার হয়ে যেতে হয়, সেটা প্রায় ১৪,৮৭০ ফুট উচ্চতায়। কারণ উত্তর গোলার্ধে এইসময় উষ্ণতার কারণে বরফ কম থাকে। ফলে অমরনাথ যাওয়া এইসময় সহজ হয়। তবে এইসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করলেও যাত্রাপথের সৌন্দর্য এতটুকু খর্ব হয় না। প্রাকৃতিকভাবে অমরনাথ যাত্রার ব্যাপারটা আমার অসাধারণ লেগেছে। তবে কোনোটাই অলৌকিক নয়।
যাই হোক, সাড়ে ন-হাজার ফুট থেকে হাঁটা শুরু করেছি, প্রথমেই টানা দেড়হাজার ফুট চড়াই। যেখানে উঠলাম, জায়গাটার নাম পিসু টপ। আমাদের পাশ দিয়ে পিলপিল করে ঘোড়া উঠছে। ঘোড়ার সঙ্গে একজন করে লোক আছে। সত্যিই এদের বেঁচে থাকতে গেলে এই ঘোড়া নিয়ে যাওয়াটা অপরিহার্য, সারা বছর এই আয়ের ওপর এরা বেঁচে থাকে। কত লোক উঠছে? একটা হিসেব দেওয়া যেতে পারে। কলকাতা শহরের পাঁচটা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের শাখা, জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্ক আর ইয়েস ব্যাঙ্ক অমরনাথ যাত্রার প্রবেশের অনুমোদন দিতে পারে। যাত্রার প্রবেশ হয় দুটো পথে, বালতাল আর চন্দনবাড়ি। প্রতিদিন প্রতি পথে দশজন করে লোক ছাড়তে পারে এক-একটা ব্যাঙ্ক। আমরা ২৫ তারিখের প্রবেশ-অনুমোদন পেয়েছিলাম। এইসব যোগ করলে আমার আন্দাজ এক-একটা রুটে হাঁটা শুরু করছে দশ থেকে বারো হাজার লোক। এছাড়া সরাসরি জম্মু থেকে এসেও এন্ট্রি-পারমিট পাওয়া যায়। আর একটা হিসেব পেয়েছি, ১৭০০ ঘোড়াওয়ালা আর ৫০০ ডুলি আছে। সামনে পিছনে পিলপিল করে লোক উঠছে। প্রথমদিন অনেক লোক পায়ে হেঁটে ওঠার চেষ্টা করে। প্রথমদিন মোট রাস্তাটা ১১ কিলোমিটার। পাহাড়ে অবশ্য কিলোমিটার দিয়ে রাস্তার দুর্গমতা বোঝা যায় না। পাহাড়ে চলাফেরার হিসেবটা অন্যরকম, সমতলের মতো নয়।

পিসু টপ থেকে রাস্তাটা মোটামুটি সমতলে হাঁটা। একটা চড়াইয়ে উঠে একটু বিশ্রাম চাই। সামনেই বিরাট এক ভাণ্ডারা। একটু চা-জলখাবার খেয়ে ফের হাঁটা দিলাম। ভাণ্ডারাতে এক প্যাকেট ছোলাভাজা দিয়েছিল, খেতে খেতে হাঁটছি। একজন স্থানীয় বাচ্চা, বোধহয় কোনো ঘোড়াওয়ালার ছেলে, হাত বাড়িয়ে বলল, ‘বাবু চানা দো’। একটু ঝাঁঝিয়ে বললাম, ‘ভাণ্ডারা মে দে রহা হ্যায় সবকো। ভিখ কিঁউ মাঙ্গতা হ্যায়?’ বাচ্চাটা মাথা নিচু করে বলল, ‘হামে নহী দেতা’। বিশ্বাস হল না। একজন ঘোড়াওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম। বলল, ‘জী সাব, হামে নহী দেতা। উয়ো কেয়া হ্যায়, হাম মুসলমান হ্যায় না। তো একসাথ …’ এক মুহূর্ত চোখটা ঝাপসা হয়ে এল। কেমন যেন লাগল। মাথা নামিয়ে হাঁটা দিলাম।
অনেক দূর থেকে শেষনাগ হ্রদটা দেখা যায়। শেষনাগ হল লিডার নদীর উৎস। খুব সুন্দর একটা হ্রদ। শেষনাগের পিছনে তিনটে পাহাড়-চূড়া আছে। ওরা বলে, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর। আসলে একটা হিমবাহ, যেটা ক্রমশ পিছনে সরে গেছে, সেখানে যে গর্তটা তৈরি হয়েছে, সেটাই শেষনাগ হ্রদ। এরকম হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হওয়া হ্রদ হিমালয়ে প্রচুর আছে। সকাল সাড়ে আটটায় যাত্রা শুরু করে আমরা শেষনাগে পৌঁছালাম বিকেল চারটে নাগাদ। মাঝে বসেছি, খেয়েছি। পিসু টপ থেকে শুরু করে সর্বত্র ভাণ্ডারা, সেখানে সবই, এমনকী পনির কাবাব-টাবাব পাওয়া যায়। আমি সাধারণত দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খেতাম। কারণ ওগুলো হজম করা সহজ। ভাণ্ডারাগুলো চালায় রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ আর গুজরাত, মূলত এই ছ-টা রাজ্যের সংস্থা। নামগুলো এরকম — ভোলে সেবা সমিতি, শ্রী সেবক দিল্লি, বিশাল ভাণ্ডারা। এইসময়টা এরা আসে। মানুষকে চল্লিশ দিন ধরে এত খাওয়ানোর জন্য যে বিপুল টাকার দরকার, তত টাকা মনে হয় এই সংস্থাগুলোর নেই। উৎসটা আলাদা, এগুলো সেই টাকা ঢালার মুখ। কালো টাকাকে সাদা করার ব্যাপার থাকতেই পারে। কিন্তু এরকম ধারণাও হয়তো অর্থদাতাদের আছে যে আমি অনেক পাপ করছি, এগুলো করলে নরকযাত্রা থেকে মুক্তি পাব! যাই হোক, বিস্তর খাওয়াদাওয়া হল। সন্ধ্যা পাঁচটায় পৌঁছালাম শেষনাগ ক্যাম্প এরিয়ায়। আমার সঙ্গী বাবাই একটু অবসন্ন হয়ে পড়েছে। ও নিয়মিত সিগারেট খায়। এমনিতে কিছু হয় না, কিন্তু ওপরের দিকে উঠলে সমস্যাটা বোঝা যায়।
একটা তাঁবু পাওয়া গেল। যে জায়গাটায় থাকতে দেওয়া হয়েছে, প্রোটেক্টেড এরিয়া, তার চারপাশে সিআরপিএফ-এর পাহারা। যাত্রীদের রাত্রিকালীন নিরাপত্তা পুরোটাই সিআরপিএফ দেখে। শ-দেড়েক তাঁবু রয়েছে। এক-একটাতে আটজন তো থাকতেই পারে। তাহলে মোট হাজার-বারোশো যাত্রী থাকছে এই পয়েন্টটাতে। এরকম আরও পয়েন্ট রয়েছে। সব মিলিয়ে দশ-বারো হাজার লোক থাকছে। ভাণ্ডারাগুলো এই তাঁবু এলাকার বাইরে। সেখানে দোকান-টোকানও আছে। কিন্তু কাঁটাতারের সীমানার মধ্যে ওসব কিছুই নেই।
মনটা একটু খারাপ ছিল। বিকেলের দিকে মেঘ, আমি ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না। রাত দুটো নাগাদ বাইরে বেরিয়ে দেখি একদম পরিষ্কার আকাশ। পাহাড়ের চূড়াগুলো দেখা যাচ্ছে। ছবি তুললাম।

সকালে শেষনাগ থেকে রওনা দিলাম। আজ আর অত লোক হাঁটবে না। গতকাল হেঁটে মোটামুটি দম শেষ হয়ে গেছে। প্রচুর লোক ফোন করে জানাচ্ছে, তারা কোথায় আছে। আমরা সাড়ে এগারো হাজার ফুট ওপরে রয়েছি, হেঁটে উঠতে হবে আরও তিন হাজার ফুটের কাছাকাছি। সেখানেও তাঁবু আছে। পথে দেখা হল, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের লোকেদের সঙ্গে। ওদের গায়ে একটা লাল জ্যাকেট থাকে, ওটা দেখলে চেনা যায়। ওদের সঙ্গে প্রচুর আড্ডা হল। ওরা কিন্তু অন্য ফোর্সের মতো নয়, যাত্রীদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল। ওয়ারবালে পৌঁছালাম। খাওয়াদাওয়া হল। এই রাস্তার সবচেয়ে উঁচু যে গিরিপথ, নাম মহাগুনাস। স্বাভাবিক নিয়মেই ওটার নাম করা হয়েছে গনেশ টপ। পুরোটাই বরফে ঢাকা। আমরা পৌঁছালাম। ততক্ষণে বাবাই খেল দেখাতে শুরু করেছে! প্রায় পনেরো হাজার ফুট উচ্চতা, এখানে বেশিক্ষণ থাকলে সমস্যা বাড়বে। আমাদের নামতেই হবে। বাবাই বসে পড়েছে। এখানে আটকে গেলে মুশকিল। সব জায়গায় একটা করে মেডিকাল ক্যাম্প আছে। অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানে ঢুকিয়ে দেবে। আমি ওকে তাড়া লাগিয়ে নামতে শুরু করলাম।
নামছি, নিচে পাঁচটা নদীর সঙ্গম, পঞ্চতরণি, আট কিলোমিটার দূরে। আমি ঝড়ের বেগে দু-কিলোমিটার নেমে পৌঁছালাম পোশপাথিরি বলে একটা জায়গায়। যাত্রাপথের সবচেয়ে বড়ো ভাণ্ডারাটা এখানে, তারপর পঞ্চতরণি পর্যন্ত আর কোনো ভাণ্ডারা নেই। প্রচুর খাওয়ার ব্যবস্থা, মটর পোলাও থেকে শুরু করে ভেজ বিরিয়ানি পর্যন্ত সব পাওয়া যাচ্ছে। খাওয়ার পর দেখছি বাবাই তখনও আসছে না। আমি খানিকটা এগিয়ে গেলাম। বাবাই এল। ব্যাগ-ট্যাগ ধরে নিয়ে বসলাম। ও বলল, প্রচণ্ড মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে, বমি পাচ্ছে। পাহাড়ের এই রোগটা আমি চিনি। মেডিকাল ক্যাম্পে গেলাম। মেডিকাল অফিসার বাবাইকে ভালো করে দেখে নিয়ে প্যারাসিটামল দিলেন। আমি তো জানি, ওর দরকার ডায়ামক্স। সেটা বলতেই জানা গেল, স্টকে আর চারটে মাত্র ডায়ামক্স আছে। সকাল থেকে চাহিদা মেটাতে পুরো স্টক খালি হয়ে গেছে। যাই হোক, অনুরোধ করে একটা পাওয়া গেল।
ওষুধটা খাওয়ার পর কিছু সময় না যেতেই বাবাই বলতে শুরু করল, আমি আর পারছি না, আমাকে এখানে রেখে তুই চলে যা। পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে এইসব ডায়ালগের সঙ্গে আমি পরিচিত। ঠিক আছে, কিছুক্ষণ বসলাম। ওর ব্যাগটার ওজন ২০-২২ কেজি, সেটা বয়ে নিয়ে যাওয়া ওর পক্ষে অসম্ভব। ঘোড়া ও কিছুতেই নেবে না। এইভাবে আরও এক কিলোমটার উঠে ও একেবারে শুয়ে পড়ল। বমি হল। একটা লোক ডেকে বাবাইয়ের লাগেজটা দিলাম। দরাদরি করে চারশো টাকায় রফা হল। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম, আস্তে আস্তে। ওদিকে লোকটা পিঠে ব্যাগটা নিয়ে ছুটতে শুরু করেছে। বাবাই বলল, ণ্ণআরে, ও তো চলে যাচ্ছে’। আমি ডেকে নাম জিজ্ঞেস করতে বলল, ণ্ণজাভেদ, পঞ্চতরণি পুলকে পাস মিলেঙ্গে’। ধরেই নিয়েছে পুলটা আমি চিনি! নিজের প্রতি গভীর বিশ্বাস, আমার অবিশ্বাসকে পাত্তাই দিল না।
গুটগুট করে হেঁটে বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় দুজনে পঞ্চতরণি পৌঁছালাম। আকাশে তখনও ভালো রোদ্দুর। একটা বিরাট মাঠ, শয়ে শয়ে তাঁবু পড়েছে, হেলিকপ্টার উঠছে আর নামছে, মাথার ওপর চক্কর দিচ্ছে। একটা বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতি, প্রকৃতিকে একদম বলাৎকার করা হচ্ছে বলা চলে। এখানে জাভেদ কোথায়! পাঁচটা নদী নেমেছে, সেখানে পুল, কোথায় জাভেদ! যথারীতি ব্যাগটা পাওয়া গেল না। বাবাইয়ের মনটা খারাপ। ওপরে গেলাম, একটা লোক জিজ্ঞেস করল, ণ্ণঠ্যাহরনা হ্যায়?’ এর নাম আলতাফ। ওকে জানালাম, সামান পাওয়া যাচ্ছে না। এবার শুরু হল আর একপ্রস্থ ঝামেলা। সিকিউরিটি বলল, ণ্ণআপ নে উসকো সামান দে দিয়া, উসকা আইডি কার্ড নেহি রাখ্খা?’ এটা হল যাত্রাপথের দস্তুর। আমার জানা ছিল না। পাহাড়ে লোককে সাধারণত বিশ্বাস করি।
আলতাফক বললাম, ণ্ণইসকো পহেলে শুলা দো’। ওরা কাহাবা নামে একটা পানীয় তৈরি করে, পাতা-টাতা দিয়ে বেশ খানিকটা ফুটিয়ে তৈরি হয়। আমরা খেলাম। খেয়ে গেলাম অ্যানাউন্সমেন্ট ক্যাম্পাসে। ণ্ণজাভেদ পিঠঠুওয়ালা, কহি ভি হো তো সামান লেকে আ যাও’ বলে ঘোষণা করা হল। কিন্তু তাতে কাজ হল না। সন্ধ্যাবেলা জাভেদ নিজেই ওখানে এল। ও বলল, ণ্ণহাম তো আপহি কো ঢুন্ড রহা থা’। আসলে ও ভেবেছে, আমরা অসুস্থ লোক, নামতে অনেক সময় লাগবে। ওর বোনের দোকান আছে পথে, সেখানে গিয়ে ও খাওয়াদাওয়া করে এখানে এসেছে। ও জিনিসপত্র দিয়ে চলে গেল। বাবাই খুশি হয়ে ওকে পাঁচশো টাকাই দিল আর যে লোকটা অ্যানাউন্স করেছে, তাকেও দুশো টাকা দিয়ে দিল। এই লোকটা বলল, ণ্ণআপ হামারে এঁহা ঠহর যাও’। আমি বললাম, আলতাফকে আমরা কথা দিয়েছি। তাছাড়া ও আমাদের সহযোগিতা করেছে, এখানে নিয়ে এসেছে। আলতাফ বলল, না ঠিক আছে, তোমরা এখানেই থেকে যাও। আমরা আলতাফের ওখানে এলাম। আমি বললাম, ণ্ণআমরা কাল অমরনাথ ঘুরে আবার এখানে আসব।’ শুনে ও বলল, ণ্ণকল ফির আওগে?’ ও আমাদের না থাকার পক্ষে বাচ্চাদের মতো যুক্তি দিতে শুরু করল। পরে বুঝলাম, পরশুদিন ঈদ, ও তাঁবু গুটিয়ে দিয়ে চলে যাবে পহেলগাঁও। কিন্তু আমরা অতিথি, ও এটাও বলতে পারছে না যে তোমরা এলে আমি বাড়ি যেতে পারব না। আমি ওকে আশ্বস্ত করলাম, ণ্ণঠিক হ্যায়, কল সুবে সুবে নিকল পড়েঙ্গে’।
লাগেজটা গুছিয়ে নিলাম। লাগেজটা আলতাফের কাছে রাখলে ওর চাপ হবে। তাহলে কাল ফিরে যেখানে থাকব, সেখানে লাগেজ রেখে যাব। ভোরবেলা পাঁচটায় উঠে আলতাফকে তিনশো টাকা দিলাম। ও খুব খুশি, ওর ঠিকানা দিল। আলতাফ বেশ ভালো ছেলে। আমরা গেলাম পারভেজের কাছে, যে অ্যানাউন্স করেছিল। ওর কাছে লাগেজ রাখলাম। আজ অমরনাথ দর্শন সেরে সন্ধ্যার আগে এখানেই ফিরে আসব। ক্রমশ
Leave a Reply