কুশল বসু, কলকাতা, ১৫ ডিসেম্বর, সংবাদসূত্র উইকিপিডিয়া#
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ সিঙ্গাপুরে ৪০ বছর পর একটি স্বতস্ফুর্ত, বড়োসরো শ্রমিক বিক্ষোভ হয়ে গেল ৮ ডিসেম্বর। ক্রুদ্ধ দক্ষিণ ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকরা জ্বালিয়ে দিল পাঁচটি পুলিশের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স, ভাঙচুর করল আরও তিরিশটি।
৫৪ লক্ষ মানুষের এই দ্বীপভূমিটিতে প্রতি ছ’জনে একজন মিলিওনেয়ার। ছোট্ট দেশটি বাণিজ্যের পীঠস্থান, কিন্তু সারা পৃথিবীর মতো এই দেশটিতেও অর্থনীতিতে স্থায়ী সঙ্কট ঘনিয়ে উঠেছে আজ বেশ কয়েক বছর ধরেই। তার ফলশ্রুতিতে সে দেশে অভিবাসী শ্রমিকদের ভাগানোর দাবিও উঠছে। উল্লেখ করা যায়, এশিয়ার আর একটি ধনী বাণিজ্য-নির্ভর দেশ সৌদি আরব থেকে অভিবাসী শ্রমিক ভাগানোর উদ্যোগ সরকারিভাবে শুরু হয়ে গেছে। চলতি পুঁজি ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ‘ভিবাসী শ্রমিক’, সেই তাদের ভাগানোর দাবি ও উদ্যোগের মধ্যে দিয়েই সঙ্কটের গভীরতা এবং উলটপুরাণ টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ।
যাই হোক, সিঙ্গাপুর নদীর ধারে চায়না টাউনের কাছেই রয়েছে সিঙ্গাপুরে অভিবাসী দক্ষিণ ভারতীয়দের পুরনো পাড়া, ‘লিটল ইন্ডিয়া’। দক্ষিণ ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকরা বলে ‘টেক্কা’। বহুদিন আগে এখানে শাস্তিপ্রাপ্ত দক্ষিণ ভারতীয়দের রাখা হতো, ধীরে ধীরে এটা হয়ে ওঠে দক্ষিণ ভারতীয় শ্রমিকদের মহল্লা। তবে জাতি দাঙ্গা আটকানোর জন্য সিঙ্গাপুর সরকার দক্ষিণ ভারতীয় শ্রমিকদের ছোট্ট দেশটার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দিলে কী হবে, প্রতি রবিবার ছুটির দিন গোটা দেশের দক্ষিণ ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকরা চলে আসে ‘টেক্কা’তে, মদ খায়, মৌজ মস্তি করে।
৮ ডিসেম্বর রবিবারও তারা এসেছিল। রাতের দিকে তাদেরকে নিজেদের বাসস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাইভেট বাস চলে। এরকমই একটি বাসে উঠে ঝামেলা জুড়েছিল মদে চুর হয়ে থাকা ৩৩ বছর বয়সী নির্মাণ শিল্প শ্রমিক, জাতিতে তামিল, শক্তিভেল কুমারাভেলু। বাস কন্ডাক্টর ঠেলে নামিয়ে দেয় তাকে। তারপর বাস চালাতেই বাসের চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় কুমারাভেলু। ব্যস্, এই ঘটনা আগুন জ্বালিয়ে দেয় টেক্কা-য় উপস্থিত কয়েকশ’ দক্ষিণ ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকদের মনে। দু-ঘন্টা জুড়ে তান্ডব চালিয়ে যাওয়ার পর তাদের নিয়ন্ত্রণে আনে সিঙ্গাপুর আর্মির গোর্খা ব্রিগেড। জনা পঁচিশেক ভারতীয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ‘দাঙ্গা’ না হয়, তার জন্য টেক্কা-তে মদ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে মদ-মাং-মোচ্ছবের স্বর্গরাজ্য সিঙ্গাপুরের সরকার।
Leave a Reply