তমাল ভৌমিক, কলকাতা, ১০ নভেম্বর#
কসবার নিম্নবিত্ত এলাকার শিশু কিশোরদের সংগঠিত করে চারুচেতনা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রায় দুই দশক। চারুচেতনার বার্ষিক উৎসব হল ১০ নভেম্বর ২০১৩ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন ভবনে। শুরুতে শিল্পকলা নিয়ে আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণের পরে প্রথমে হল রবীন্দ্রনাথের নটীর পূজা-র বাছাই অংশ। বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর নাচ গান অভিনয় বেশ ভালো।
পরের নাটকের নাম ‘বহুব্রীহি’। সুকান্তর ‘হে সূর্য শীতের সূর্য …’ কবিতাটি দিয়ে শুরু করে, মধ্যে জীবনানন্দর কবিতা ও শেষে সুধীন্দ্রনাথ দত্তর ‘উটপাখি’-র কয়েক লাইন, আর বেশিটাই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’র কিছু অংশ — এই দিয়ে একটা কোলাজ তৈরি করেছেন নবেন্দু সেনগুপ্ত, নাটক পরিচালনা করেছেন সুশান্ত দাস। নাটকে একটা ধাতব মইকে ব্যবহার করা হয়েছে মঞ্চসজ্জার প্রায় একমাত্র উপকরণ হিসেবে। নাটকের মাঝখানে পর্দায় প্রোজেক্টরের সাহায্যে জলছবির ব্যবহার — তাতে গঙ্গার তীর, ব্যস্ত কলকাতার নানা টুকরো ছবি ও বস্তিবাসী শিশুদের ছবি আঁকা, খেলাধূলো করার দৃশ্যের পেছনে আবহসঙ্গীতের নানা যন্ত্রে রাগরাগিনীর টুকরো। নাটকটাতে ‘মাইগ্রেশন’ অর্থাৎ কাজের জন্য গ্রামের লোকের শহরে চলে আসা, আবার শহরের বৈভব ও বিত্তর নির্মম ধাক্কায় শহর থেকে ছিটকে গিয়ে মানুষের হারিয়ে যাওয়া — এই বিষয়টাকেই ধরতে চাওয়া হয়েছে।
কেমন হয়েছে নাটকটা — এই প্রসঙ্গে তিনজন দর্শকের প্রতিক্রিয়া বলছি। এক যুবক হলের ভেতরেই নাটক চলাকালীন চেঁচিয়ে বলেছেন, ‘ওরে বোর হয়ে যাচ্ছে’। আমার পাশে বসা এক মহিলা বলেছেন, ‘নাটকটা ট্যান হয়ে গেছে’ — মানে বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। নাটকের শেষে একজন প্রৌঢ় প্রৌঢ়াকে জোর গলায় বলেছেন, ‘বেশ বলিষ্ঠ প্রযোজনা বলো’। প্রৌঢ়া মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলছেন।
আমার নিজের কাছে নাটকের মধ্যে রক্তকরবীর অংশটা খুব ভালো লেগেছে। নটীর পূজার যে মেয়েটি নটীর অভিনয় করেছিল, সে এই নাটকে রক্তকরবীর ‘নন্দিনী’র অভিনয় করেছে সাবলীলভাবে। বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে, ফাগুলাল, চন্দ্রা ও বিশুপাগলার ভূমিকায় যারা অভিনয় করেছে। এই নাটকটার শারীরিক অভিনয় এক বড়ো সম্পদ। তবে সবচেয়ে বড়ো পাওনা হল, ‘বস্তির ছেলে-মেয়ে’ বলে যাদেরকে আমরা একটু দূরে সরিয়ে রাখি, তাদের মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতির সম্ভাবনা খুঁজে বার করতে পারার এই উদ্যোগ।
Leave a Reply