১৩ জানুয়ারি, কৃষ্ণা সেন, রবীন্দ্রনগর#
৩১ ডিসেম্বর ২০১২ চলে গেলেন অন্নপূর্ণা মহারাণা, ছিয়ানব্বই বছর বয়সে। গত বৃহস্পতিবার ১০ জানুয়ারি ২০১৩ ছিল তাঁর শোকসভা এবং প্রার্থনা। আয়োজক ‘সর্বোদয় সমিতি’।
আমি কলকাতা থেকে কটকে এই প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে যাই। আমাদের সঙ্গে ওঁদের পরিবারের দীর্ঘদিনের আত্মীয়তা। আমার ঠাকুর্দা সত্যনারায়ণ সেনগুপ্ত থাকতেন কটকে। ওইসময় কটকে চৌধুরি পরিবারের বউ হয়ে এসেছিলেন রমা দেবী। তাঁর জ্যাঠামশাই ছিলেন মধুসূদন দাস, বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার। আর একজন ছিলেন দার্শনিক জিতেন মহান্তি। এঁরা স্বাধীনতার পর ‘সর্বোদয়’ নিয়ে কাজ করেছেন। ‘ভিজিল’ নামে তাঁদের একটা ইংরেজি পত্রিকা ছিল। সম্পাদনা করতেন প্রয়াত মনমোহন চৌধুরি।
গোপবন্ধু চৌধুরি ও রমা দেবীর মেয়ে ছিলেন অন্নপূর্ণা মহারাণা, ডাকনাম চুনিদি। ১৯১৭ সালে তাঁর জন্ম। সেইসময় আমার ঠাকুর্দার পরিবারের মেয়েরা, চৌধুরি পরিবারের মেয়েরা একসঙ্গে সত্যাগ্রহ করেছে। আমার পিসি মঙ্গলা সেন এবং অন্নপূর্ণা মহারাণা ছোটোবেলায় রুমা দেবীর তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। লবন সত্যাগ্রহে জেল হওয়ার পর মাত্র তেরো বছর বয়সের চুনিদিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চোদ্দ বছর বয়সে তিনি নিজের সমস্ত সোনার গয়না গান্ধীজিকে দান করেন। তিনি ছিলেন আজীবন প্রতিবাদী চরিত্রের। তাঁর মাস্টারমশাই শরৎচন্দ্র মহারাণাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তাঁর দুই ছেলে, জ্ঞানদেব আর কর্মদেব। আত্মজীবনী ‘অমৃত অনুভব’।
১০ জানুয়ারি সর্বধর্মসমন্বয় প্রার্থনাসভা সুন্দর হয়েছিল। একটা কথা প্রত্যেকেই বলেছেন, ওঁর আদর্শ ও জীবনধারার মধ্যে কোনো তফাত ছিল না। জগৎসিংহপুরে পস্কো বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে সর্বোদয়ের কর্মীরা অংশ নিয়েছে। সেই ব্যাপারেও তাঁর নেতৃত্বদায়ী ভূমিকা ছিল। অতীতে ভূদান আন্দোলনেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
Leave a Reply