কলকাতার ডালহৌসি অঞ্চলে টেলিফোন ভবনের সামনের ফুটপাতে হংকং ব্যাঙ্কের গায়ে পত্র-পত্রিকার কেনাবেচা বহুদিনের। সারা বছর রোদ-ঝড়-জল উপেক্ষা করে এই স্টলগুলিকে চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু মানুষ। ডালহৌসি অঞ্চলের পত্র-পত্রিকা পাঠকদেরও তাঁদের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। অনীক পত্রিকার সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তীর মৃত্যুর খবর পেয়ে এখানকার লিট্ল ম্যাগাজিন বিক্রেতা অজিত পোদ্দার এবং অমর কোলে দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, এখানে চল্লিশ বছরের ওপর এই পত্রিকা বিক্রি হচ্ছে। দীপঙ্কর চক্রবর্তীর মৃত্যুতে এঁরা নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানালেন।#
অজিত পোদ্দার, ২৮ জানুয়ারি
এই পত্রিকায় পরস্পর-বিরোধী মত ও পথ নিয়ে দীপঙ্করবাবু আলোচনা করেছেন। যেগুলো আলোচনা করলে বন্ধু-বিচ্ছেদ হতে পারে সেটাও তিনি করেছেন। সেটা করেছেন ভালোর জন্য। তিনি কারো চোখ রাঙানির ধার ধারতেন না। তিনি নীতির ওপর দাঁড়িয়ে নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে কোনোদিনই ভয় পাননি। বিতর্ক হয়েছে। সেই বিতর্কও তিনি মেনে নিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে ওঁর চলে যাওয়া একটা দুঃখের ব্যাপার। এরকম একজন মানুষ তৈরি হতে বহু সময় লাগে। আমার জানাশুনার মধ্যে যারা পত্রিকা চালায়, এরকম লোক কমই পেয়েছি। তাই আমরা আজ খুবই মর্মাহত।
অনীক পত্রিকার বিতর্কের ঢেউ এখানেও এসেছে। আমরাও একটা পক্ষ নিয়েছি এবং কাস্টমারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবসময় তো একমত হওয়া যায় না। পুরোনোদিনের বিতর্ক, আমাদেরও চিন্তায় ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতি পূরণ হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা কিছু হয়তো মেনেও নিয়েছি।
সত্তরের দশকের শেষদিকে আমি একবার ওঁর মুর্শিদাবাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের চিঠি দিয়েছিলেন, তোমরা বই নিতে এসো। আমরা গেলাম। তিনি বললেন, ‘ভালো হয়েছে তোমরা এসেছ। এই বইগুলো নিয়ে ডিস্ট্রিবিউট করো।’ খুবই সিরিয়াস বই। সেগুলোর তখন খুবই প্রয়োজন ছিল। সেই বই তখন কলকাতাতেও পাওয়া যেত না। মানুষ তখন ওই বইগুলো পড়তে চাইছিল এবং আমরা তাদের এনে দিতে পেরেছিলাম।
আজ যদি এই পত্রিকা না চালানো যায় একটা বিরাট শূন্যতা তৈরি হবে। আমরা চাইব সেরকম লোক এগিয়ে আসুক এবং এই পত্রিকা পরিচালনা করুক। যে দায়বদ্ধতা দীপঙ্করবাবুর ছিল, সেটা যদি কিছু লোক পালন করে, আমরা খুব খুশি হব।
অমর কোলে
লিট্ল ম্যাগাজিনের সূত্রেই আমি খবর পেলাম। খুবই খারাপ লাগছে। একটা স্ট্যান্ডার্ড ম্যাগাজিন। সুনাম আছে ম্যাগাজিনটার, সবাই জানে। আমাদের এই স্টলের বয়স ৪৫-৪৬ বছর। আমার আগে দুটো দাদা ১৫ বছর করে চালিয়েছে। তারপর আমি প্রায় ১৫-১৬ বছর চালাচ্ছি। আমার আগে চালিয়েছেন আমার দাদা দীনবন্ধু কোলে। তার আগে চম্পকদা বলে একজন ছিলেন। আমাদের কাছে সবরকম পত্রিকার পাঠক আছে। অনীক পত্রিকার ভালো পাঠক আছে। তারা নিয়ে যায় মাসে মাসে নিয়মিত। যে সংখ্যাটা ভালো লাগে আমিও কিছুটা পড়ি। যাঁরা অনীক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁরা নিশ্চয় এটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
Leave a Reply