জয়নাল আবেদিন, মশালডাঙ্গা(সাবেক ছিটমহল), কোচবিহার ১২ই জানুয়ারী,২০১৬#
২০১৫ সালের ৩১শে জুলাই এর আগে চিত্রটা ছিল একরকম। ভারতের ভেতরে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটের বাসিন্দারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মত মৌলিক অধিকার থেকে সরকারিভাবে বঞ্চিত ছিলেন। ছিটমহলবাসী হওয়ার কারণে তাঁদের কোনও ধরনের সরকারি পরিচয়পত্র না থাকায় নিজের ঠিকানা, নিজের বাবা-মায়ের পরিচয়ে স্কুলে বা কলেজে ভর্তি হতে পারতেন না। তবে ভারতের মূল ভূখণ্ডের কোনো গ্রামের ঠিকানা এবং মূল ভূখন্ডের কোনও পরিবারের দম্পতিকে নিজের বাবা-মার পরিচয় দিয়ে এতদিন তারা স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। আবার পাস করে দিনহাটা কলেজ, এমনকি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছেন। ব্যাপারটা অত সহজেও হয়নি।পরিচয়ের জন্যে সেই পরিবারটিকে টাকা দিতে হয়েছে।ছিটমহলের আসেপাশের গ্রামগুলিতে এই পরিচয় বিষয়টি প্রায় ব্যবসায়িক রূপ নিয়ে ফেলেছিল।
১লা আগষ্ট ২০১৫’র পর পুরো চিত্র পালটে গিয়েছে। এবার ছিটমহল বিনিময়ের পর তারা আতঙ্কিত, তাদের শিক্ষার সনদ আর ডিগ্রির বৈধতা আদৌ থাকবে কি-না তা নিয়ে। আমি যখন পড়াশোনা শুরু করি তখন স্কুলের খাতায় আমার ঠিকানা খোচাবাড়ি গ্রাম, দিনহাটা, কুচবিহার। এই ঠিকানা রেখেই আমি এখন পড়ছি দেওয়ানহাট কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে। আর এই ছিটের জাহাঙ্গীর আলম ও লাভলী খাতুন পড়ে নাজিরহাট হাইস্কুলে। এই ছিটের বর্তমানে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী এভাবেই আগে ভারতের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ভর্তি হয়েছেন। নলগ্রাম ছিটের রানী খাতুন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ নিয়ে এম.এ করছেন। বালাপুকুরির সন্তোষী রায় পড়ছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সাইবারসেলের অন্যতম সদস্য পোয়াতুরকুঠি ছিটের সাদ্দাম হোসেন এখন কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে এমএ করছেন। তিনি কথাপ্রসঙ্গে বলেন, “স্কুলে পড়াকালীন ঠিকানা দিয়েছিলাম খাটাবাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছি পাথরসন। এখন তো নিজের আসল ঠিকানা লিখতে পারব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পরিস্থিতির কারণে স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিথ্যে ঠিকানা দিতে বাধ্য হয়েছি। এবার কি আমার এসব সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে যাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা পরিবর্তন করতে গেলে আবার সমস্যা হবে কি-না তা বুঝতেপারছি না”। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির শীর্ষ নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “এতদিন বিনিময় না হলেও জীবন তো থেমে থাকেনি। ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ ভারত সরকার বললেও তা কতটা দেশজুড়ে বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে শিক্ষার হার এখন ৩৫ শতাংশ। ছিটমহলবাসী পরিচয় গোপন করেও শিক্ষা গ্রহণ করছেন। এখন যদি তা অবৈধ বলা হয় তা নিয়ে আন্দোলন হবে”।
Leave a Reply