২০ আগস্ট, জিতেন নন্দী, নিমকমহল, কলকাতা#
খবরটা পেয়েছি গতকাল। আজ নিমকমহল রোড আর সার্কুলার গার্ডেনরীচের ক্রসিংয়ে এলাম। এই জায়গাটাকে সকলে বলে সিগারেট কলের মোড়। মোড়ের মাথায় একদিকে একটা বড়ো গোডাউন। একদিকে প্রাইভেট বাসের টাইমকিপারের গুমটি। সিগারেট কলের ফুটে মোটর পার্টসের দোকান, পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান, খৈনির দোকান আর বেশ কয়েকটা চায়ের দোকান। আর রয়েছে একটা গুমটির পাশে ট্রাফিক সার্জেন্টদের একটা ঠেক। রাস্তার ওপর বাস আর অন্য যানবাহনের চেয়েও বেশি চলছে লম্বা লম্বা বিশাল ট্রেলার আর কন্টেনার-বাহক ট্রাকের আসা-যাওয়া। ঠিক মোড়ের মুখ থেকেই বিএনআর-এর দিকে ঘুরে যাচ্ছে কেউ কেউ, কেউ বা সোজা হাইড রোড মোড়ের দিকে এগোচ্ছে। নিমকমহল রোডের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু ট্রেলার, তাদের চালক আর হেল্পাররা এদিক-ওদিকে জটলা করছে।
ডিউটিরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের এক এক করে জিজ্ঞেস করলাম দুর্ঘটনাটার কথা। সকলেই বললেন, তাঁরা মঙ্গলবার ওইসময় ডিউটিতে ছিলেন না। বাসের টাইমকিপারও বললেন, তিনি ওইসময় ডিউটিতে ছিলেন না। পিছনে একটা পেট্রলপাম্প। তার কাঁচঘেরা চেম্বারে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। ওঁরা ঘটনাটা দূর থেকে দেখেছেন, শুনেছেন। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখেননি, সেরকম আগ্রহ ওঁদের নেই। এক চায়ের দোকানি বললেন, তিনিও দূর থেকে ঘটনাটা দেখেছেন। লোকটা বিকেল চারটে নাগাদ সাইকেলে চেপে হাইড রোড মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। ক্রসিংয়ের মুখে ঘোরবার সময় একটা দশ-চাকার ট্রেলার ওঁকে একেবারে পিষে দেয়। ওইরকম মর্মান্তিক ব্যাপারটা সামনে গিয়ে দেখবার ইচ্ছে তাঁর হয়নি। ট্রাফিক সার্জেন্টদের ঠেকের পাশে একজন আমার প্রশ্নের জবাবে ওঁর মোবাইলে তোলা মৃত রাজেন্দ্র কুমার সাওয়ের প্যান কার্ডের ছবিটা দেখালেন। গোডাউনের গেটের সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করতে উনি ভিতরে আরও কয়েকজনের সঙ্গে আমায় পরিচয় করালেন। একজন বললেন, এরকম দুর্ঘটনা প্রায়শই হচ্ছে। গত একমাসের মধ্যে তিনজন এইভাবে মারা গেছে। সপ্তাহ খানেক আগেই সিকলেনের কাছে একটা চলন্ত ট্রেলারের নিচে ঢুকে যায় দুজন আরোহী সহ একটি মোটরবাইক। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই দুজনের। আর একজন মারা গেছে সিগারেট কলের সামনে। বোঝা গেল যে এই মোড়টা বেশ খতরনাক। কারণ মেটিয়াবুরুজ থেকে পোর্টের গেটের সামনে একটা টার্নিং, আবার নিমকমহলের মোড়ে আর একটা। অত বড়ো ট্রেলার বা কন্টেনার ঘোরার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তা কিন্তু থাকে না ওরা। ভোর থেকে ট্রেলার ছাড়তে থাকে। সকাল ছটায় কারখানাগুলোতে মর্নিং শিফট ডিউটি। তখনই ঝাঁকে ঝাঁকে ট্রেলার আর কন্টেনার বেরিয়ে পড়ে। পাশাপাশি দুটো, এমনকী তিনটে ট্রেলার চালিয়ে দেয়। ফাঁক দিয়ে বেরোনো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবু দরকারে সেই ঝুঁকি নিয়েই লোকে পায়ে হেঁটে, সাইকেলে বা মোটর বাইকে গলে বেরোতে চেষ্টা করে। এটা রোজকার ঘটনা। আজ অবশ্য দেখতে পাচ্ছি, ট্রাফিক সার্জেন্টরা ট্রেলারের চালকদের সঙ্গে বেশ চেঁচিয়ে হম্বিতম্বি করছেন। ৪৮ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার জন্যই কি এই তৎপরতা।
প্রায় সকলের মধ্যেই একটা নির্লিপ্ততা। এরকম তো হয়ই, আর হবেও! অনেকেই আমাকে বলছিলেন যে আপনি থানায় যান। আমি কাছেই ওয়েস্ট পোর্ট পুলিশ স্টেশনে গেলাম। ওখানকার দায়িত্বরত এসআই আমাকে বললেন, ‘ওইদিন ওইসময় ডিউটিতে ছিলেন গৌতম রায়। তিনি এখন থানায় নেই। আপনি ফোন করে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ — কেন? আপনাদের রেকর্ড দেখে একটু বলুন। ওঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বললেন, ‘আসলে কেসটা ফ্যাটাল তো। ওটা লালবাজারে চলে গেছে। এই ধরনের কেস এখানে থাকে না।’ বেশ! আমি থানার ফোন নাম্বার নিয়ে চলে এলাম।
Leave a Reply