• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

শ্রমজীবী মায়ের তিন মেয়েকে মানুষ করার কথা

December 17, 2013 admin Leave a Comment

পারুল দাস, ঢাকুরিয়া, ১৩ ডিসেম্বর#

parul-web

আমার মেয়েদের মধ্যে বড়োটার বয়স তখন আট বছর, মেজোটার চার বছর, আর ছোটোটার তখন ছ-মাস। এই অবস্থায় আমার বর চলে যায় আমাকে ছেড়ে। এমতাবস্থায় আমি লোকের বাড়ি রান্না টান্না করে সংসার চালিয়েছি। এখনও এভাবেই চলছে। আমি প্রথম থেকেই এখানে, ঢাকুরিয়া রেললাইনের ধারে ঝুপড়িতে থাকি।
প্রথমে আমি তিন জায়গায় কাজ করতুম। একটা বাড়িতে বাচ্চা দেখার কাজ। আরও দুটো বাড়িতে রান্না। যে বাড়িতে বাচ্চা দেখার কাজ করতাম, সে বাড়ির দুই ছেলেই আমার হাতে মানুষ। যে বাড়িতে বাচ্চা দেখার কাজ করতাম, সে বাড়ির সমস্ত কাজ করতাম। বাচ্চাদের বাবা-মা অফিস যেত। এইভাবে পনেরো বছর চলেছে। পনেরো বছর এভাবে চলার পর চলে গেলাম এখান থেকে। এখন শুধু রান্নার কাজ করি।
আমার বড়ো মেয়ে দেবশ্রী হায়ার সেকেন্ডারি পাশ। মেজোটা অর্চনা, মাথা ভালো ছিল, কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষাটা দিল না। ছোটোটা জয়শ্রী, এখন এগারো ক্লাসে পড়ছে। এই কিছুদিন আগে বড়ো মেয়ের বিয়ে হল। আরও দুটো বাকি আছে। আমার বড়ো মেয়ে কল সেন্টারে চাকরি করে। রাসবিহারীর দিকে। মেজো মেয়ে যাদবপুর এইটবি-তে একটি দোকানে কাজ করে। সে ইন্টারনেট চালাতেও শিখে নিয়েছে।
আমার বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে যেত।  তখন বাড়িতে রান্না চাপাতাম। মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়ত। ঘুম থেকে টেনে তুলে ওদের খাওয়াতাম। সারা দিন কাজ করতাম, ওই জল ঢালা ভাত থাকত। রান্না হতো একবারই। দিনের বেলা ছোটো দুই মেয়েকে বেঁধে রেখে কাজে যেতাম। বড়ো মেয়েটা একটু বড়ো ছিল। দিনের বেলা বাচ্চা দেখার কাজের ফাঁকে কয়েক মুহুর্তের জন্য আসতাম, এসে খাবার বেড়ে দিতাম। একটু দেখাশোনাও করতাম কখনও কখনও। কেউ হয়তো পায়খানা করে বসে আছে। কেউ কাঁদছে। \par
যে বাড়িতে আমি বাচ্চা দেখার কাজ করতাম, পনেরো বছর টানা করেছি তো। সেখানে দুটো বাচ্চা ছেলে, আমার বাড়িতে তিনটে বাচ্চা মেয়ে। এত মায়া পড়ে গেছিল যে কাজ ছেড়ে দেওয়ার পর আমার রাতে ঘুম আসতো না। চিন্তা তো, ছেলেগুলো খেলো তো ঠিকঠাক? আমি তখন ঠিক করি, আর বাচ্চা দেখার কাজ করব না।
স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, আবার বিয়ে করার কথা আমার একবারও মাথায় আসেনি। বাচ্চাদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। ভাবলাম, আমি যদি সরে যাই, ওরা মানুষ হবে না। সারা জীবন ওরা কাঁদবে। আমার কষ্টটা বড়ো নয়, ওরা যদি ভালো থাকে, সেটাই চেয়েছিলাম। নিজের কথা ভাবিনি। আমার ছোটোবেলায় খুব শখ ছিল পড়াশুনা করব। তো আমার বাবা মা খুব ছোটোবেলায় মারা গেছিল, তাই হয়নি। তো আমার সেই সাধটা মেয়েদের দিয়েই পূরণ করতে চেয়েছিলাম। বর চলে যাওয়ার পর ভাবলাম, সে চলে গেছে, এবার আমিও যদি চলে যাই, তাহলে মেয়েদের কী হবে? ওরা তো অনাথ হয়ে যাবে।
আমার বাপের বাড়ি জয়নগরের কাছে, বহরু বলে একটা জায়গায়। ছোটোবেলায় আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার কারণে আমি কাকাদের কাছে থাকতাম। আমার দিদি দাদা মামাদের কাছে থাকত। ছোটো বোনটা একেবারেই ছোটো ছিল, দিদার কাছে থাকত। কাকারা আমার বিয়ে দিল। আমার তখন ১৪ বছর বয়স। কাকা চাকরি করত। যখন রিটায়ার করল, আমাকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হল আর কি। তখন আমরা দেশে থাকতাম। বিয়ের পর পাঁচবছর দেশে ছিলাম।
দেশে আমাদের মুড়ির ব্যবসা ছিল। চাল কিনে মুড়ি বানানোর। প্রথমে আমার একটা ছেলে হয়েছিল। মারা যায়। তারপর আমাকে কলকাতায় নিয়ে চলে এল। সেটা ১৯৮৪ সাল। আমার এখানে আসার একমাসের মাথায় ইন্দিরা গান্ধী মারা গেল। আমার স্বামী চলে যায় একানব্বই সালে।
তখন এই রেলধারের বস্তিতে লোক ছিল, কিন্তু সংখ্যায় কম। এখনকার মতো ডবল ডবল ঘর ছিল না। ফাঁকা ফাঁকা ছিল।
এখন আমি ছ-বাড়িতে রান্নার কাজ করি। তা নাহলে সংসার চালানো যায় না। আমি সারা মাস ধার করি, কিন্তু মাস শুরুতেই সব ধার শোধ করে দিই। মাইনে পেলেই দিয়ে দিই। অনেক দিন ধরে এভাবে চালাচ্ছি তো, মানুষের সঙ্গে চেনাজানা হয়ে গেছে। তাই অসুবিধা হয় না। পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমি সাহায্য পাইনি। বরং তারা বাঁকা চোখে তাকিয়েছে আমি একার হাতে তিনজন মেয়েকে মানুষ করছি দেখে, তাদের পড়াশুনা ছাড়িয়ে দিয়ে কোথাও কাজে দিয়ে দিচ্ছি না দেখে। সব মানুষের তো সহ্য হয় না।
বরং আমি যেখানে কাজ করি, সেই পাড়ার মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি। সেখানকার একটা মুদিখানার দোকান (রামের দোকান) থেকে আমি শুরু থেকে বাজার করি। ও আমাকে খুব সাহায্য করেছে, আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার বাড়ি অবধি বয়ে গিয়ে দোকানের বাজার দিয়ে এসেছে। আমরা সিদ্ধ ভাত খেতাম। আমার মেয়েরা বহুদিন মাছ, শাকসবজি চোখে দেখেনি। ডাল-ডিম-আলু-ভাত। সেদ্ধ। কখন বাজারে যাব? সময় কোথায়? তাছাড়া, এখন মাছ ভাত খেয়ে নিলাম, পরে কিছু নেই বলে ঘুরব, আমি এভাবে চলি না। মাসকাবারি কিনে নিতাম এগুলো।
আমাদের পাড়ায় মেয়েরা ছোটো বয়সে বিয়ে করে নেয়। কিন্তু আমার মেয়েরা তা করেনি। মায়ের দিকে তাকিয়ে বসে আছে, কবে মা বিয়ে দেবে। আমি চাইনি, আমার মতো কারোর হোক। আমি যতটা খাটতে পেরেছি, ওরা ততটা পারবে না। কিন্তু ওদেরও করে খেতে হবে। আমি ওদের সেইমতো গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যাতে ওরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। বিয়ে তো একবার হবে। পরে করলেও চলবে।
স্বামী চলে যাওয়ার পর আমার দাদা বলেছিল, তিনটে বাচ্চা নিয়ে কী করবি, চলে আয়। ভেবে দেখলাম, গিয়ে লাভ নেই। আজকে সে একা আছে, ঠিক আছে। কালকে সে বিয়ে করবে, তখন বউয়ের সাথে আমার বনবে না। আর তাছাড়া আমি সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে গিয়ে উঠলে আমার ইচ্ছামতো কিছুই করতে পারব না। আমারও তো স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু থাকতে পারে। তাই আমি দাদার কাছেও যাইনি, ভাসুররাও বলেছিল, তাদের কাছেও যাইনি। সেখানে গেলেও তো খেটেই খেতে হবে। তো খেটেই যখন খাব, তখন নিজের স্বাধীন মতো খাটি, খাই।
মনের জোর আমার খুব। মনের জোরেই আমি পারব না পারব না করেও পেরে যাচ্ছি। আর ভগবানেরও কৃপা আছে। দেখো, সৎপথে থাকলে একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিক ভগবান করে নেবে। আমি ২৩-২৪ বছরের একটা মেয়ে হিসেবে তিনটা বাচ্চা নিয়ে এতদূর টেনে আনলাম। ২৫ বছর চলছি রাস্তাতে একা। আমার ভয় বলে কোনো জিনিস ছিল না। নিজের পা যদি ঠিক থাকে, তাহলে কিছুই হবে না। সে যে যা বলে বলুক। আমি তো নিজে জানি আমি কী। তুমি আমাকে খারাপ বললে কী হবে, আমি কি খারাপ হয়ে গেলাম?
আমার নিজের কোনো খরচ প্রায় কোনোদিনই নেই। নেশাভাঙ করি না। কোনো সাজগোজ নেই। পুরুষের সমান খাটি। রাতে রান্না করেছি। তারপর কাচাকাচি করতে গেছি। যে যে বাড়িতে কাজ করি, পুজোতে একটা শাড়িও নিই না, সব টাকা নিই। সেটা জমিয়ে রাখি। এভাবে গুছিয়ে গুছিয়ে বড়ো মেয়েটার বিয়ে দিতে পারলাম। আমি যদি নিজের পেছনে খরচ করতাম, তাহলে হত না। এই টাকাতেই আমার শরীর খারাপ, মেয়েদের শরীর খারাপে ডাক্তার ওষুধ করেছি। তখন খাওয়াদাওয়া আরও সাধারণ হয়ে যেত। এদিকের খরচ ওদিকে টেনে দিতাম। আমি জানতাম, পারতে আমাকে হবেই।

শিল্প ও বাণিজ্য ঘরের কাজ, শ্রমিক

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in