• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

বক্সা পাহাড়ে লোসার পরবে (দ্বিতীয় পর্ব )

April 29, 2012 admin Leave a Comment

পরদিন সকালে বের হতে একটু দেরিই হয়ে গেল। পাহাড়ে সকাল সকাল হাঁটতে বেরিয়ে পড়লে হাঁটার ক্লান্তি পেয়ে বসে না। তবু যাত্রার প্রস্তুতি আর প্রাতরাশ সারতেই এই বিলম্ব।
বক্সা ফোর্টের কাছে সদর বাজার এলাকায় লোসার উৎসবের কোনো আমেজ নেই। আমরা বক্সা দুয়ার থেকে তাই হেঁটে চললাম উৎসবের উৎসের দিকে। তাসি গাঁও হয়ে রোভার্স পয়েন্ট, অর্থাৎ এই এলাকার সবচেয়ে উঁচু শিখরে উঠব। তারপর লেপচা খা হয়ে আবার বক্সা দুয়ারে ফিরে আসা। একটি কমবয়েসি নেপালি ছেলে আমাদের পথ দেখাচ্ছে। দেখা হল টিকারাম সিং-এর সঙ্গে। মোঙ্গর উপজাতির শেষ বিশুদ্ধ মানুষ। বাকি পনেরো-কুড়ি ঘর মোঙ্গর পরিবার দীর্ঘকায় অন্য উপজাতির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে বাঁধা পড়ে নিজেদের পিগমি উপজাতি সুলভ উচ্চতা বাড়িয়ে নিয়েছেন। কিছুটা হাঁটতেই রাস্তার ডানদিকে বক্সা দুয়ার পোস্ট অফিস। এখনো এখানে রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে। একটানা পাহাড় ভাঙার ক্লান্তি চেপে বসলেই ঘাসে ঢাকা পাহাড়ি রাস্তায় সটান শুয়ে পড়ে জিরিয়ে নিচ্ছিলাম সবাই। পথ চলতে যে সব মানুষের সাথে দেখা হচ্ছিল, প্রত্যেকেই প্রাণখোলা হাসিতে আর যেন-অনেক-চেনা আন্তরিকতায় কথা বলছিল। আমাদের কী কী সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে ভেবে বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিচ্ছিল। আর একটু এগোতেই হঠাৎ কানে এল সমবেত গান বাজনা। গিটার বাজছে কোরাসের তালে। পাহাড়ি যে কাঠের বাড়ি থেকে সুর ভেসে আসছে সঙ্কোচ কাটিয়ে ঢুকে পড়লাম তার উঠোনে। গিয়ে দেখি একদল কিশোর কিশোরী কোনো একটা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাই মিলে একটা প্রাণোচ্ছল সুরে গাইছে একটা প্রকৃতির গান — ‘ধরতি সাজালে প্রভু, নদী নালা সে / আকাশ সাজালে প্রভু চাঁদ তারে সে …’। ওরা আরও সবুজ, আরও নদী, আরও আকাশ চায়। 


মোটামুটি তিন কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে একটা উঁচু পাহাড়ের মাথায় উঠতেই চোখে পড়ল, পাশের একটা উপত্যকায় তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা চলছে। কানে ভেসে এল পাহাড়ের খাদ প্লাবিত করে উঠে আসা উপজাতি ভাষায় গান। পাহাড়ি পথে একটা মোড় ঘুরতেই হঠাৎ দৃশ্যপট বদলে গেল। একটা পাহাড়ের প্রায় সমতল চূড়ায় শামিয়ানা টাঙিয়ে তাসি গাঁও সাজিয়েছে তার লোসার উদযাপনের আবহ। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলো মেতে ওঠে এই লোসার বা ডুকপা ভাষায় ‘দাওয়া দাংপা’ অর্থাৎ নববর্ষ উদ্‌যাপনে। ভুটানি উপজাতি গোষ্ঠীর পঞ্জিকা অনুসারে, এই ‘ছেঁ’ বা নতুন বছরের শুরু। উৎসব প্রায় সপ্তাহব্যাপী। একমাত্র তুলনীয় আমাদের শারদ উৎসবের মেজাজের সাথে। তাসি গাঁওয়ে প্রবেশ করতেই স্থানীয় মানুষেরা সাদর অভ্যর্থনা জানালো। একপাশে মঞ্চ বেঁধে বসার আয়োজন। অন্যদিকে পাহাড়ের একটা ঢাল থেকে অন্তত তিনশো মিটার দূরে পাহাড়ের আর একটা ঢালে চলছে লক্ষ্যভেদের তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ পথ হাঁটার ক্লান্তিতে পাহাড়ের চূড়ায় এই উৎসব প্রাঙ্গণে বসে পড়লাম সকলে, একটু জিরোতে আর অনেকটাই উৎসবের আনন্দের অংশীদার হতে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ভাব বিনিময় করার সাথে সাথে পাহাড়ের কোলে ওই বর্ণময় উৎসবের প্রাকৃতিক পটভূমি আমাকে বিহ্বল করে দিল। কী নিপুন তুলির আঁচড়ে প্রকৃতি এখানে সাজিয়েছে তার অপার সৌন্দর্যের পশরা, তা নিখুঁত ভাবে ভাষায় ফুটিয়ে তোলা সাধ্যের অতীত। দীর্ঘকায় সরলবর্গীয় বৃক্ষের সারি মাথা তুলেছে অতলস্পর্শী খাদ থেকে। কত ভিন্ন ভিন্ন রঙের খেলায় গাছগাছালি সেজেছে যেন লোসার-এরই আমেজে। ফেব্রুয়ারির রৌদ্রোজ্জ্বল নীল আকাশ সবুজ উপচে ভেসে যাচ্ছিল আরও দূরের পাহাড়গুলোর মাথায়। স্থানীয় মানুষের পায়ে চলা পথের পাশে পাশে গড়ে উঠেছে যেসব জনপদ তা এখনো ভীষণরকম নিষ্কলুশ। প্রাকৃতিক। যন্ত্রদানবের থাবা আঁচড়ও কাটতে পারেনি এইসব প্রান্তিক জনপদে। গ্রামের মহিলারা পরেছে ঝলমলে চড়া রঙের ঐতিহ্যবাহী ‘বকু’। পুরুষদের পরনে ভারি রঙ ঢিলে ঢালা ‘খু’। পুরুষদের অনেকেই অংশ নিয়েছে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায়। তাদের হাতে দেখলাম দীর্ঘ ধনুক আর লোহার ফলার তির।
একজন প্রবীণ ডুকপা মানুষ আমাদের তাঁর কাঠের দোতলার ঘরে নিয়ে গেলেন। ঠাকুর ঘর। পূর্বদিকে একাধিক অচেনা দেবতার ছবি। সামনে রকমারি পাহাড়ি ফল উৎসর্গ করে রাখা। সবচাইতে আকর্ষণীয় মনে হল, ‘তোম’ দেবী হিসেবে পূজিত মাখনের মণ্ড দিয়ে তৈরি কোনো মানবীয় অবয়বহীন এক দেবী। মোটামুটি দু-আড়াই মাস আগে থেকে এই মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। ঘরের এক পাশে লোহার তার থেকে ঝুলছে লম্বা লম্বা কুকুরের মাংসের ফালি। মাসখানেক আগে থেকেই উৎসবের প্রস্তুতিতে এই মাংস, ডুকপা ভাষায় ‘সিকাম’, সংরক্ষিত হতে থাকে। ঘরের মধ্যে হঠাৎ নজরে পড়ে উপজাতীয় দেবতার চরণে সাজানো তির। যা পুজো শেষে প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত হবে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে সারা দিনভর নাচ গান আর নানারকম প্রতিযোগিতামূলক খেলার শেষে মহিলারা গ্রামের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান মঞ্চে যে যার সাধ্যমত খাবার এনে এনে জড় করে। অনুষ্ঠান শেষে পুরুষরা সম্মিলিতভাবে সে সব খাবার খেলেও, মহিলারা কিন্তু তা খাবে না। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা আমাদের প্রচুর খাদ্য পানীয় সাজিয়ে দিল। আমরা ক’জন অত সমস্ত শেষ করে উঠতে পারব না। সে কথায় কান দিল না কেউই। পাহাড়ি পানীয়ের স্বাদ নিতে নিতে আমরা হঠাৎ প্রাণের আবেগে গাইতে শুরু করলাম ওদের অনুরোধে। আমাদের ক্যামেরার সামনে তিনজন ডুকপা পুরুষ নির্দ্বিধায় পরিবেশন করে গেল সম্মিলিত উপজাতির নাচ। প্রাণ মন ভরে তাসি গাঁওয়ের আতিথেয়তা গায়ে মেখে বিদায় নিলাম আবার আসব এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
আবার চড়াই উৎরাই পথ। তাসি গাঁও থেকে লেপচা খা যাবার পাহাড়ি পথ আমাদের মতো সমতলের মানুষের কাছে বেশ বিপজ্জনক আর রোমহর্ষক। ছোটো ছোটো পাথরের কুচির পাহাড়ি ঢালু রাস্তা বেয়ে নামতে দলের অনেকেই হাঁপিয়ে উঠল। পথে এক একটি বাঁকে বার বার দাঁড়িয়ে পড়ে অনেক দূর দিগন্তে অন্য সব গ্রাম উঁকি দিচ্ছিল। আমরা বলাবলি করছিলাম, বক্সা পাহাড়ের এমন অপার সৌন্দর্য এখনও কতটা অনাবিষ্কৃত পড়ে আছে। কিছু কিছু দুর্গম জায়গায় দেখলাম, দিব্বি গড়ে উঠেছে দু-তিন ঘর বসতি। জীবিকা মূলত স্কোয়াশ আর আদা চাষ। বেলা তিনটে নাগাদ লেপচা খা পৌঁছলাম। তাসি গাঁও থেকে অনেক বেশি সম্পন্ন গ্রাম। কিন্তু শহুরে স্বাচ্ছন্দ্যের কিছু কিছু অনুপ্রবেশ বড়ো চোখে ঠেকল। যে কোনো মনাস্টারির সামনে দেখা ধর্মীয় স্তম্ভগুলোর মতো গ্রামের কেন্দ্রস্থলে একটা স্তম্ভ (স্থানীয় ভাষায় ‘ছেতে’) চোখে পড়ল। উৎসব প্রাঙ্গণের এক প্রান্তে পবিত্র স্তম্ভটির ঠিক পেছনেই রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ ফুট চওড়া পাহাড়ের একটা ধারালো প্রান্ত। ওটাই ভিউ পয়েন্ট। সেখানকার কাঠের বেঞ্চগুলোতে বসে বসে চোখ জুড়িয়ে গেল তিনদিকের অবাধ সবুজ আর নীলের সমারোহে। মনে হচ্ছিল, দিব্বি এটার নাম হতে পারে স্বর্গের ‘শেষ স্টেশন’।
মনে হল, প্রকৃতিকে অক্ষুন্ন রেখে এখানে যেভাবে পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনা ছিল, তা নিয়ে এখনও কেউ ভাবেননি। লেপচা খা তে দেখা হল সমতল থেকে আসা এক ফটোগ্রাফি ক্লাবের উৎসাহী সদস্যদের সঙ্গে। শুনলাম প্রত্যেক বছরই তারা আসে এই উৎসবের বর্ণময় মুহূর্তগুলোকে ফ্রেমবন্দী করার জন্য। বেলা পড়ে আসতেই ফিরতি পথে হাঁটা। রাস্তা এবারে অনেকটা সহজ। গল্পে গানে হাঁটতে হাঁটতে যখন ফোর্টের কাছে এসে পৌঁছলাম, তখন পাহাড়ের পেছনে সূর্য নামছে।
ক্রমশ

রামজীবন ভৌমিক ও স্নেহাশিস দত্ত চৌধুরি, কোচবিহার, ২৯ এপ্রিল, ছবি লেখকের

সংস্কৃতি পরব, পাহাড়ি, ভ্রমণ

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in