• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

নেপালের জৈবচাষির জীবন : নবগ্রামের আলোচনা

January 7, 2015 admin Leave a Comment

২৫-২৭ ডিসেম্বর বর্ধমান জেলার নবগ্রামে একসঙ্গে সময় কাটাতে এসেছিলেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০-২২ জন মানুষ, সঙ্গে ছিলেন এই গ্রামেরই ৫-৭ জন। গান-বাজনা, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া আর গল্প-গুজবের পাশাপাশি সদ্য নেপাল থেকে আগত নৃতাত্ব্বিক স্টিফেন মাইকসেল নেপালের এক চাষির খেতে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার গল্প শোনালেন। প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে কথাবার্তা চলে। স্টিফেন মাইকসেলের বক্তব্যের মাঝে মাঝে সকলের সুবিধার্থে দেবাশিস সেনগুপ্ত বাংলায় তরজমা করে দেন#

নবগ্রামে ওয়র্ট এফএম রেডিও হাতে স্টিফেন মাইকসেল-এর ছবি তুলেছেন জিতেন নন্দী।
নবগ্রামে ওয়র্ট এফএম রেডিও হাতে স্টিফেন মাইকসেল-এর ছবি তুলেছেন জিতেন নন্দী।

ছয় বছর আগে এক চাষির সঙ্গে কথা শুরু হয়েছিল আমার ‘ওয়ার্ট’ কমিউনিটি রেডিও-র জন্য সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে। নাম চন্দ্রপ্রসাদ অধিকারী। এখন ওঁর বয়স ছাপ্পান্ন। চিতওয়ান জেলায় নারায়ণঘাট অঞ্চলে ফুলবাড়ি গ্রামে এই চাষ হচ্ছে। সেই চাষি বলেছিলেন যে তিনি অনেক বছর ধরে রাসায়নিক ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চাষ করে আসছিলেন। ষোলো বছর সেইভাবে চলল, ক্রমে খেতের মাটিটা জমাট বেঁধে গিয়ে নিষ্প্রাণ ও বিষাক্ত হয়ে আসছিল আর তাঁর হাতেও সেই বিষের প্রভাবে চামড়ার অসুখ দেখা দিয়েছিল। সময়টা ছিল ২৩ বছর আগেকার, যখন তিনি জৈব চাষ শুরু করলেন। তিনি মাছের পুকুর তৈরি করেছেন। কেঁচো-কৃমির চাষ করছেন (ভার্মিকালচার)।এই খেতে মানুষের মলও ব্যবহার হচ্ছে। সমস্ত কিছু রি-সাইকেল করা অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার করা এই চাষের একটা মূল বিষয়। এক হেক্টর (= ৭.৫ বিঘা) জমিতে চাষ করা হচ্ছে।
চাষের যে ব্যবস্থা এখন ওখানে চলছে, তার অনেকগুলো চমৎকার দিক রয়েছে। একটা হচ্ছে, গোবর আর মানুষের বর্জ্য থেকে যা পাওয়া যায় সেগুলোকে চ্যানেল করে এক জায়গায় নিয়ে গ্যাস তৈরি করা হচ্ছে। সেখান থেকে যেটা বের হচ্ছে তাকে মাঠের মধ্যে চালিয়ে দেওয়া হয় আর বাড়তি অংশটা পড়ছে গিয়ে একটা পরিখার মধ্যে, যেখানে মাছ রাখা হয়। সেটা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সেই মাছ ছেড়ে দেওয়া হয় ধান খেতের মাঝে ছোটো গর্তের মধ্যে। মাছগুলো বড়ো হয় আর সেই ধান খেতের মধ্যেই চলে বেড়ায়। যখন জল কমে যায় তখন ওই মাঝখানের গর্তের মধ্যে এসে মাছগুলো জড়ো হয়। শোনা গেছে, এরকম ব্যবস্থা চীনে হাজার বছর ধরে চলছে। এত মাছ হয় যে ক্রেতাদের লাইন পড়ে যায় সেই মাছ কেনার জন্য।
পরিখা তৈরি করার আর একটা উদ্দেশ্য রয়েছে, যেখানে কৃমি-কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হচ্ছে, সেখানে বেজি বা পোকামাকড় যাতে ওগুলো খেয়ে না ফেলে, তাদের বাঁচানোর জন্য পরিখাটা একটা আড়ালের কাজ করে। বর্ষার সময় ধান হয়েছে, অল্প জলের মধ্যে তরকারি হয়েছে আর শুখা সময়ে পাশাপাশি সারিতে এমন ধরনের গাছপালা বা বীজ লাগানো হচ্ছে যাতে পোকামাকড় অনিষ্ট না করতে পারে বা একটা উদ্ভিদ আর একটাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। এগুলো পরীক্ষা করে দেখে নির্ণয় করা হয়েছে।
শুধু মাঠেই নয়, বাড়ির চারপাশে একটু জঙ্গল মতো রয়েছে, সেখানে নেপালের নানা জায়গা থেকে নানা বীজ এনে লাগানো হয়েছে। কোনোটা ফল, অন্য কোনো গাছ যার পাতা হয়তো চাষের কাজে লাগছে এবং ওষধি গাছগাছড়াও রয়েছে।
দু-ধরনের জৈব চাষ রয়েছে। শুধু যে এই খেতের মতো করেই জৈব চাষ হচ্ছে, তা নয়। আর একটা ধরন রয়েছে, যেখানে ব্যবসায়িক জৈব চাষ হচ্ছে ফ্যাকট্রি সিস্টেমে। শহরে বিষ আর রাসায়নিক মুক্ত চাষ ও ফসলের একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। তারা বেশি দামেও জৈব-খাদ্য কিনতে প্রস্তুত। অর্গানিক ম্যাটার, যেমন মাটি বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে। হল্যান্ড থেকে মাটি (কম্পোস্ট) আসছে সিকিমে।
স্থানীয় প্রজাতির যে ধানগুলো হারিয়ে গিয়েছিল, সেরকম ৬৮ ধরনের চাল তিনি তাঁর খেতে ফিরিয়ে এনেছেন। আমার স্ত্রী একটা ছোটো দানার চাল দেখে বলেছিলেন যে নেপালে গ্রামের ঘরে এই চাল রান্না হলে দূর থেকে তার সুবাস পাওয়া যেত। এখন এই জমিতে সেই ধান হচ্ছে, যখন তা রান্না হচ্ছে, সেই সুবাস কিন্তু তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। আফশোসের কথা হল, ২৩ বছর ধরে রাসায়নিক প্রয়োগ না করা সত্ত্বেও এইসব চালের আলাদা আলাদা সুবাস আর বৈশিষ্ট্যগুলো পুরোপুরি ফিরে পাওয়া যায়নি। তিনি বললেন, মনসান্টোর মতো কোম্পানিগুলো বলে, জিন থেকেই সবকিছু পাওয়া যায়। অতএব জিন-ব্যাঙ্ক করলেই বৈচিত্র্য রক্ষা হবে। বাসমতী চালের পেটেন্ট করে ব্যবসা আর রপ্তানি হচ্ছে বটে, কিন্তু মাটি আর পরিবেশের সঙ্গেও ধানের বাস আর চরিত্রের সম্বন্ধ রয়েছে। কোনো জৈব বস্তুর জিন নামক বিষয়টাকে পরিবেশ আর চাষিসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা ভুল।
এই খেতে ওঁর সঙ্গে কিছু কাজের লোক আছে, এছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক এসে কাজ করে যাচ্ছে। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড অপারচুনিটিজ ইন অর্গানিক ফার্মিং’–এর অধীনে নেপাল এবং বিদেশ থেকেও লোক এসে এখানে কাজ করছে। স্বেচ্ছা-কর্মী যারা এসে কাজ করছে, তাদের শ্রমটা পাওয়া যাচ্ছে। নাহলে দৈনিক ৫ ডলার মজুরি দিতে হত। চাষের ধরনটাই এরকম যে তার খরচ খুব বেশি হয় না। এছাড়া জঙ্গলের নানান কিছু, যেমন মধু ইত্যাদি, সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে। এইভাবে চাষের বাড়তি খরচ বা লোকসানটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যে চাষ এখানে হয় তা বেশ নিবিড়। শীতের সময় আলু, ভুট্টা আর নানান সবজি হয়। বর্ষার সময় ধান তো হয়ই। ফলে জমিটা খালি পড়ে থাকে না।
জৈব চাষের ব্যাপারটা হল একটা জীবনধারা। ১২৯টা চাষের খেতে জৈব চাষ হচ্ছে। এখানে যারা কাজ করছে, তাদের মধ্যে যোগাযোগ, আদানপ্রদান রয়েছে। একটা চাষিদের কো-অপারেটিভ গড়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে কাছের শহরাঞ্চলে এখানকার জৈব-খাদ্য বিক্রি করা হচ্ছে। যারা নতুন করে ভাবছে সেই চাষিরা জমিটাকে চারভাগে ভাগ করে নিয়ে একটা অংশে প্রথমে এই পদ্ধতিতে চাষ করল। প্রথম বছরে হয়তো লাভজনক তেমন কিছু হল না, কিন্তু একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হল যে এইভাবে হতে পারে। তারপর যখন ওই অংশটাতে ফসল ঠিকমতো হল, তখন আস্তে আস্তে বাকি অংশগুলোতে জৈব চাষ করে এগোনো হয়েছে।

এখানে একটা বাচ্চাদের স্কুল আছে। আর একটা প্রতিবন্ধীদের স্কুলও আছে। কিন্তু সেখানে সরকারি শিক্ষায় তো জৈব চাষের উল্টোপথে হাঁটা। গ্রামের সমাজজীবন থেকে ছেলেমেয়েদের একটা একটা করে ছেঁকে তুলে দূরে বিচ্ছিন্ন জীবনে সরিয়ে নিয়ে যায় এই শিক্ষা। পিছনে গ্রামে পড়ে থাকে ছোটোরা, মেয়েরা আর বয়স্করা। কাজ করতে সমর্থ যুবক-যুবতীরা শিক্ষার বলে বলীয়ান হয়ে বাইরে চলে যায়। নেপাল এই পথে প্রচুর মজুর রপ্তানি করে। লোকে অনেক গল্প বলে। যেমন, গ্রামের একজন ছেলে এইভাবে লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হয়ে ম্যাসাচুসেটস-এ চলে গেছে। তাহলে দেখা গেল, যার পিছনে সরকার এত অর্থ ব্যয় করল, তার কাছ থেকে কিছুই পেল না সমাজ। আর যাদের পিছনে কিছুই সরকারি ব্যয় নেই, তারা গ্রামকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
এই চাষি অনেকদিন আগে নিজে কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামে সাধারণ অসুখ-বিসুখের চিকিৎসা করতেন। যখন গ্রামে সরকারি চিকিৎসালয় ছিল না, তখন তিনিই ছিলেন গ্রামের জীবন্ত এক চিকিৎসা-কেন্দ্র। লোকে এখনও ওঁর কাছে আসে এবং তাঁর এতটাই আগ্রহ এই বিষয়ে যে তিনি লোককে দেখে তাঁর অসুখের ব্যাপারে বলে দিতেও পারেন। এক স্প্যানিশ স্বামী-স্ত্রীকে দেখেই বললেন, মনে হচ্ছে তোমাদের কিছু অসুবিধা রয়েছে? সত্যিই ওঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য ছিল।
প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠেন। সারাদিন এই চাষবাস নিয়ে অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলেন। কখনও সভা হচ্ছে গাছ-গাছড়ার রোগ নিয়ে, কখনও কথা হচ্ছে টাকাপয়সা ধার দেওয়া-নেওয়া নিয়ে। রাত এগারোটার সময়ও দেখা যায় যে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। আসলে সবাইকে নিয়ে চলা আর প্রচুর লোকের সমবেত উদ্যোগ ছাড়া এই জৈব চাষ সম্ভব নয়।
সাধারণভাবে নেপালে মানুষের ধর্ম হিন্দু, কিন্তু এই চাষির ধর্ম প্রকৃতি। সমাজটাও প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। প্রকৃতির সঙ্গে ওঁর ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। ওখানে যে পাখিরা আসে, যে সাপেরা আছে, তাদের দিকেও ওঁর নজর রয়েছে। ছোটোদের দেখিয়ে দেওয়া যাতে তারাও সমস্ত প্রকৃতি-জগতকে ভালোবাসতে শেখে।
নেপালে স্থানীয় তৃণমূল স্তরে সরকার বা পঞ্চায়েত বলে কিছু নেই। ফলে সরকারের সহযোগিতা, হস্তক্ষেপ বা ঝগড়া কোনোটাই তেমন নেই। চিতওয়ান জেলায় বড়ো জমির মালিক কিছু রয়েছে। কিছু দালাল বড়ো বড়ো প্রকল্পের হাওয়া তুলে বেশ কিছু জমি কিনে ফেলে। তারপর সেগুলো ছোটো ছোটো অংশে লোককে বিক্রি করে। তার ফলে না হয় চাষ, না হয় অন্য উৎপাদনশীল কোনো কাজ। কিছু টাকা কামানো হয়। এ নিয়ে কিছুটা সংঘাত হয়েছিল। আপাতত সেই আপদ গেছে।
এই চাষির খেত এখন অনেকের কাছেই একটা দেখার জিনিস।

কৃষি ও গ্রাম কীটনাশক, চিতওয়ান, জৈব চাষ, জৈব চাষি, নবগ্রাম, নেপাল, রাসায়নিক

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in