• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

‘তা এখানেই তো চৌদ্দ হাত বাঘ মারা হয়েছে; তখন হিন্দুস্তান পাকিস্তান হয়নি’

August 19, 2015 admin Leave a Comment

সোমনাথ চৌধুরি, কোচবিহার, ১৬ আগস্ট#

গত ৩১ জুলাই মধ্যরাত ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহলে বসবাসকারী মানুষদের মুক্তির রাত। দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে অন্যদেশ পরিবৃত হয়ে নিজভূমে পরবাসীর মতো জীবনযাপন করতে হয়েছে তাদের। এইভাবে বেঁচে থাকাটা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে — এই অঞ্চলের মানুষরা সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দিনের পর দিন তারা হয়েছে শোষণের শিকার। ছিটমহলের আশেপাশের মূল ভূখণ্ডের মানুষজন জেনে গিয়েছিল ‘ওই অঞ্চলে কম পয়সায় শ্রমিক পাওয়া যায়’। কাজেই পোয়াতুর কুঠি, মশালডাঙ্গা বা করলা ছিটের  আশেপাশের ভারতীয় ভূখণ্ডে তারা কাজ করতে আসত ন্যূনতম মজুরিতে। কখনও আবার পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের সেই মজুরি থেকেও বঞ্চিত করা হত। ১ আগস্ট রাত ১২টা বেজে ০১ মিনিটে মশালডাঙ্গা ছিটে ভারতীয় পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশি ৫২টি ছিট ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ও ভারতীয় ১১১টি ছিট বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে ছিটমহল অঞ্চলের বিলুপ্তি ঘটাল। ২ আগস্ট রওনা দিলাম পোয়াতুরকুঠির দিকে। সেখানে থাকে আমার বন্ধু রহমান। কিন্তু সেদিন তার এমএ পরীক্ষা ছিল, সে আলিপুরদুয়ারে চলে গিয়েছে। বাইকে আমি আর চুমকি প্রথমে পৌঁছোলাম দিনহাটা হয়ে সাহেবগঞ্জ হয়ে বামনহাটে রামজীবনের বাড়িতে। সেখান থেকে তিনজনে রওনা দিলাম পোয়াতুরকুঠির দিকে। যার স্থানীয় নাম গয়াবাড়ি। তা সেখানে ঢুকতেই সামনে একটা বাঁশের তোরন, স্বাধীনতা উপলক্ষে অনুষ্ঠানের জন্যে বানানো হয়েছিল । চারিদিকে সবুজ জমি আর মাঝে মাঝে বাড়িঘর। জিজ্ঞাসা করে পৌঁছোলাম প্রবীণ নাগরিক মনসুর আলি মিঞার বাড়িতে। সেখানেই বাঁশের মাচাতে বসে কথাবার্তা শুরু হল।

মনসুর আলি মিঞার ছবি তুলেছেন সোমনাথ চৌধুরি।
মনসুর আলি মিঞার ছবি তুলেছেন সোমনাথ চৌধুরি।

মনসুর আলি মিঞার কথা :
আমার জন্ম ১৯৩১ সালে। দাদুর নামে ১৯৩১-৩২ সালে জমি খতিয়ানভুক্ত হয়েছে, সেই সময়ে সরকারি জোতদার ছিলেন কোচবিহার রাজ্যের পাথরসন নিবাসী মোঃ সাহারুদ্দিন সরকার। এরপর ১৯৪৪ সালে দাদু মারা যান। তখন এই অঞ্চল ছিল সব জঙ্গল। বাঘ হাঁ করে আসত আমরা চোখে দেখেছি। সকালে উঠে শুনি কার ছাগল নিয়ে গেছে, কার বাছুর নিয়ে গেছে। দিনের হাটবাজার বিকেলেই শেষ, কেউ যদি রাতে বেরোয় তবে ৭জন, ১০ জন, ১২ জন বাঁশের চোঙায় মশাল বানিয়ে। বাঁশের চোঙা দিয়ে দোকান করছে, নিজের চোখে দেখা। আর ছিল ঠগাবাতি বড়ো বড়ো দোকানে। তা এই সন্ধ্যে হলেই দেখত কি ভকর ভকর (বোঁটকা) গন্ধ ছুটছে। তখন সব টিনের আওয়াজ করছে, মশাল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাঘ আগুন দেখে ভয় পায়। তা এইভাবে জীবনযাপন করছি। আবার বাজার থেকে ফেরার সময়ে ৭-৮ জন একসাথে আসছি কারণ ছিনতাইকারিও আছে। তা এখানেই তো ১৪ হাত বাঘ মারা হয়েছে। তখন হিন্দুস্তান পাকিস্তান হয়নি। রামখানা থেকে শিকারি আসছে বন্দুক নিয়ে। খুঁজতে খুঁজতে পশ্চিমদিকে গিয়ে বাঘের দেখা পেয়ে গুলি করছে। গুলি লাগছে বাঘের পেছনের পায়ে। পরে বাঘ এসে এই পাশের পালবাড়ির এখানে ছিল। বাঘ লুকিয়েছে ঢিবির পেছনে। সন্ধ্যা হয়ে গেল তখন তো আর কিছু হল না। সকালে সব ছুটেছে বাঘ মারা দেখতে । তো এর মধ্যে একজন একটা সরকি নিয়ে গেছে পেছন দিয়ে। গিয়ে ঢিবির পেছন দিয়ে বাঘের মাথায় দিছে এক বাড়ি। বাড়ি গিয়ে পড়ছে ঢিবির সাইডে। আর বাঘ হাঁ করে উঠছে। সব লোক দৌড়, গাছে যারা ছিল সব নামিয়া দৌড়। রাস্তায় ছিল হ্যাটো (ওখানকার একজন মানুষ) , ওকে রাস্তায় ফেলিয়া ওর ওপর দিয়ে সব দৌড় দিছে। পরে শিকারি আসিয়া বাঘের মাথায় গুলি করে মারছে। এখন তো বাচ্চারা বাঘ, হাতি এইসব দেখে ছবিতে।
ইতিপুর্বে বাবা লালমণিরহাট ও রংপুর জেলার মধ্যে জমি রেজিস্টার করেন। বাবা প্রাইমারি পড়াশোনা করেছেন বামনহাটের ফুলবাড়িতে আর ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন কুড়িগ্রামে। এখান থেকে পাশ করে তিনি জয়মণিরহাটে ইউনিয়ন বোর্ডের কেরানি ছিলেন। আমি দক্ষিণ লাউচাপড়ায় প্রাইমারি পড়াশোনা আরম্ভ করি। মোগল আমলে আমরা তামার পয়সা দিয়ে খেলছি এবং পয়সাগুলি বাতিল হয়ে যায় ইংরেজ আমলে, তখন ১ আনা, ২ আনা, ৪ আনা, ৮ আনা আর রূপার টাকাও ছিল। কাগজের ১ টাকা, ২ টাকা, ৫টাকা, ১০ টাকা আর ১০০ টাকার নোটও ছিল। স্বাধীনতার পূর্বে সূর্য্যের মধ্যে চাঁদ তারা নিশান জোড়া দেখা যায়। সূর্য্য উদিত হওয়ার সময়ে চাঁদ তারা দুলছিল। কিছুদিনের মধ্যেই চাঁদ তারা দৃশ্যের ফলস্বরূপ হয়ে ওঠে ভারত বিভাজন।
ইতিহাস থেকে জানা যায় পালবংশের পতনের পর কামতাপুর রাজ্য স্বাধীন ছিল। ১৮৯৪ সালে হোসেন শাহ কামতাপুর রাজাকে বিতাড়িত করে রাজ্য দখল করেন। ১৫১৯ সালে বিশ্বসিংহ পুনরায় রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি কোচবিহারের শক্তিশালী ও প্রভাবশালী রাজা ছিলেন। সে সময়ে রাজারা প্রতিবেশি রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন। আবার কোচবিহার রাজাদের সঙ্গে রংপুরের রাজা দাবা ও পাশা খেলায় বাজি ধরতেন। সে তো আর আমাদের মতো খেলা না যে এক কাপ চা খাওয়াইয়া দিলেই হবে — এ হল রাজাদের খেলা। যাঁরা খেলায় হারতেন তাঁরা জয়ী রাজাকে একটা তালুক লিখে দিতেন। পরবর্তীকালে ইংরেজদের রাজত্ব শুরু হয়। সেই সময়ে ছোটো ছোটো রাজারা সন্ধিবদ্ধ করে রাজ্য চালাতেন। কিছুদিনের মধ্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়। ইতিমধ্যে ১৯৪৬ সালে আমাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়। তখন প্রশাসন পেয়েছি। ৭ দিন পর আসামি ধরা পরে, কুড়িগ্রাম আদালতে বিচারে ২ মাস জেল হয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সেই দিন থেকে দুই দেশের মধ্যে নানা সমস্যা হিংসার বীজ সৃষ্টি হয়। কোচবিহার রাজ্য স্বাধীন ছিল। ১৯৪৯ সালের ২৮ আগস্ট রাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হলেন আর রংপুরের রাজা পাকিস্তানকে সমর্থন করেন। সেই দিন থেকে দুই দেশের এই জায়গাগুলি ছিটমহলে পরিণত হয়। এই মানুষগুলি হয়ে পড়ল নাগরিক পরিচয়হীন। নিজভূমে পরবাসী। এখানে হাইস্কুল বলতে চৌধুরিহাট বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির ১৯৫৫ সালে স্থাপিত হয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে মিথ্যাকে আশ্রয় করে সাকিন ভারতের ঠিকানা দিয়ে ভর্তি হই। তারপর সেখান থেকেই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি।
১৯৫৮ সালে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে নেহেরু-নুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, কিন্তু বাস্তবায়িত হয় না। ১৯৬৬ সালের ১৪ এপ্রিল আমাদের বাড়িতে আবার ডাকাতি হয় এবং ৫ রাউন্ড গুলি চলে। ৯ জন আহত হয় তার মধ্যে ৩ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কোচবিহারের এম. জে. এন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তারবাবু ঠিকানা জানতে চাইলে বাবা পোয়াতুরকুঠির ঠিকানা বলেন, সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় বন্দি হয়ে যান। ১৮ দিন চিকিৎসার পর থানা তারপর কোর্টের বিচার। পাসপোর্ট আইনে ৫ টাকা জরিমানা বা ৭ দিনের জেলের সাজা ঘোষিত হয়। তিনজন ১৫ টাকা দেওয়ার পর আসামি খালাস হয় আমরা বাড়ি আসি।
[বোঝার সুবিধের জন্যে কিছু ভাষাগত পরিবর্তন করা হয়েছে]
(চলবে)

মানবাধিকার কোচবিহার, ছিটমহল, পোয়াতুর কুঠি, মশালডাঙা

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in