• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

চাঁদনির বিয়ে

March 1, 2015 admin Leave a Comment

১৫ ফেব্রুয়ারি, সুরাইয়া, সাতঘরা, মহেশতলা#

আমার ছোটো মেয়েটার বিয়ে হল গেল-শনিবারে। একেবারে হঠাৎ করে সব হয়ে গেল। তার আগে মেয়ের জন্য একটা পাত্র দেখেছিলাম। ওরা রেজিস্টিরি আর পানচিনি করতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এখন একটু দাঁড়াও। পানচিনি হয়ে গেলে তো আর মেয়ে লোকের বাড়ি কাজ করতে পারবে না। তার ওপর আমাকে চল্লিশ হাজার টাকা আর খাট আলমারি সব দিতে হবে। অত টাকা আমি তখন কোথায় পাব? একে তো দেনায় ডুবে রয়েছি। আমি বললাম, রোসো, ঈদ বাদ আমি যা কিছু করব। আর ইদিক-উদিক লোকে ভাঙানি দিয়েছে, সুরাইয়ার মেয়ে, ও তো লোকের বাড়ি বাসন ধোয়ার জুঠা কাজ করে, ওর সঙ্গে কার বিয়ে হবে!

মেয়ের নাম চাঁদনি। বড়োটার নাম রীণা, মেজোটার রেণু। বড়ো নাম ইস্কুলে লিখতে অসুবিধা হবে বলে এই নামগুলো দেওয়া হয়েছিল। ছেলের নাম ওর বাবার নামে, কোরবান আলি মল্লিক। আগের পাত্রের বাড়িতে কথাবার্তার মধ্যে এই ছেলেটার সম্বন্ধ এসে গেল। আমার বোন ঘটকালি করেছে। ওর সঙ্গে এই ছেলের কথা হয়েছিল। ওরা পাত্রী খুঁজছিল। আমার বোন বলল, ‘আমার বোনঝি আছে, দেখতে শুনতে ভালো, তোমরা দেখতে পার।’ ওরা জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘মেয়ে লেখাপড়া জানে?’ বোন বলল, ‘হ্যাঁ, কেলাস নাইন অবধি ইস্কুলে পড়েছে আর কোরান পড়েছে পুরো।’ প্রথমে চাঁদনি পড়ত রবীন্দ্রনগর ইস্কুলে। ওখানে কেলাস ফাইভে নিল না। ফোর থেকে ফাইভে ওঠার সময় বলল, তোমার মেয়ের নাম ওঠেনি, তোমাকে আড়াইশো টাকা দিতে হবে। যারা টাকা দিল, তাদের ভর্তি হয়ে গেল। আমি আর কী করব? কানখুলিতে ভর্তি করলাম। আর আমাদের পাড়াতে মোক্তারের বউ কোরান পড়িয়েছে। একটা পয়সাও নেয়নি, ইনকামের ধান্দা ছিল না, সে মেয়ে নেকির জন্য পড়াত। চাঁদনির বিয়ে হচ্ছে জেনে সেই বউটা আমাদের ঘরে এসে ওকে একটা নতুন কোরান আর নামাজপটি দিয়ে গেল। সে না পড়ালে কত যে পয়সা লাগত! ওই তো এক-একজন পাড়ায় এসে মেয়েদের পড়ায়, কায়দার জন্য হপ্তায় পঞ্চাশ টাকা, আমপারা সত্তর টাকা আর কোরান একশো টাকা করে নেয়। আমি কি দিতে পারতাম? কী কষ্ট করে যে মেয়েটা লেখাপড়া শিখেছে! ছোটো থাকতে চুলের ফিতে হাতে নিয়ে ইস্কুলে দৌড়াত, কেলাসে বসে চুল বাঁধত। রাতে শাড়িটার কুচি করে রেখে দিত আর সকালে উঠে কোনোমতে কোমরে জড়িয়ে আর ঘাড়ের ওপর আঁচলটা ফেলে দৌড় লাগাত। কী করব? আমি এদিকে কাজে বেরিয়ে আসি সকাল সকাল।

ছেলে হঠাৎ করে দেখতে এল আমার মেয়েকে। আমি তখন তিমিরদার বাড়িতে এত কাচার কাজ নিয়ে বসে আছি। ওনার বউ বলল, ‘তুমি সব রাখো, এক্ষুনি ঘরে যাও।’ মেয়েকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে পছন্দ করে ওর বাবার হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে কথা পাকা করে গেল। ছেলেটা দেখতে শুনতে ভালো। মারোয়ারিদের গদিতে খাতা লেখে বড়োবাজারে। তিন ভাই ওরা। এক ভাই সেলাইয়ের কাজ করে। আর মেজোজন কেউ মারা গেলে গোসল করানোর কাজ করে আর একটা স্টেশনারি দোকান আছে। দোকানটা ওর বাপের ছিল। এখন ওই চালায়। আমার জামাই হল বড়ো। আকড়া মাগুরায় ডাক্তারপাড়ায় ওদের বাড়ি। সেখেনে গিয়ে দেখে এসেছি, কী সুন্দর সাজিয়ে রেখেছে গো ঘরদোর। মায়ের ঘরে কালার টিভি আবার জামাইয়ের ঘরে দেয়ালের টিভি। তার আবার গাছপালার খুব শখ। বাড়ির সামনে কত ফুলের টব একেবারে সারি দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। লঙ্কা গাছ, কালোজাম আর কত কী! আমার মামার বাড়ি তো আকড়ায়। ওরা এই ছেলের কথা শুনে বলেছে, সুরাইয়া তুমি চোখ বুজ্জে মেয়েকে এই ঘরে দিতে পার।

আসলে বিয়েটা হল কী করে বলো তো? রবিবারে ইজতেমা ছিল আকড়ায়। ওইদিনে ৪১টা বিয়ে হয়েছে ওখানে বিনা পণে। ৪১ জন ছেলে, আমার জামাই, আবার কেউ মুর্শিদাবাদে থাকে, আর সব কোত্থেকে না এয়েছে, সবার বিয়ে হল ইজতেমার স্টেজের ওপর। শনিবার আমার মেয়ের রেজিস্টিরি হল। ওদের বাড়ি থেকে ১৫টা লোক এসেছিল। আমাকে মোট সাতজনের কাপড় কিনে দিতে হয়েছে। ছেলের বাবা মা তিন ছেলে আর দিদি। লোকজন খাওয়ানো সব নিয়ে আমার বারো হাজার টাকা খরচ হল। আমাদের একটা ঘড়ি আর সোনার আংটি দিতে হয় আর শোয়ার বালিশ বিছানা কম্বল। চন্দবাবুর বউ বলেছে বিছানাপত্র কিনে দেবে। আমাকে বলল, ‘তুমি বালিশ দুটো অর্ডার দিয়ে এসো।’ আমি বাদবাকি সব কিনে দেব।

পরের দিন মেয়েকে আমাদের ঘরে রেখে ওর বাবা আর ভাইরা গেল ইজতেমায়। ওখেনে স্টেজের ওপর সব ছেলেগুলোকে বসিয়েছে। আর আরব থেকে খুব বড়ো একজন ইমাম এয়েছিলেন। তিনি ওদের কলেমা পড়ালেন। ওর বাবাকে যখন জিজ্ঞেস করল, মেয়ে এই বিয়েতে রাজি তো? ওর বাবা ‘হ্যাঁ’ বলল। এইভাবে একটা একটা করে ৪১টা বিয়ে হল। সক্কলে এসে বলল, সুরাইয়া, অন্য বিয়েতে তো ঘরের ক-টা লোক সাক্ষী থাকে, তোমার মেয়ের বিয়েতে কোটি লোক সাক্ষী হয়েছে।

আমি কোত্থেকে কী করব? মাথার ওপর এত দেনা। এই তো ক-দিন আগে দুপুরবেলা ঘরে গেছি, মেয়েটা খিদের জন্য কাঁদছে, চ্ছ্রমা আমায় কিছু খেতে দাও’ কী দেব! ভাতের সঙ্গে এতটুকু ডাল তরকারিও দিতে পারিনি। যে ক-টা টাকা এতগুলো বাড়িতে কাজ করে পাই, তা হাতে নিয়ে প্রথমে দেনার টাকা মেটাই। তারপর ঘরে আর ক-টা টাকা নিয়ে যেতে পারি যে ওদের খাওয়াব? মেয়েটা আমার ঘরে খিদের জন্য খুব কষ্ট পেয়েছে। সবাই বলছে, তোমার মেয়ের যে এত ভালো বিয়ে হয়েছে, নিশ্চয় ওর বাবা আর নয়তো মা কোনো ভালো কাজ করেছে জীবনে, তারই ফল।

সংস্কৃতি আকড়া, ইজতেমা, গণবিবাহ, মহেশতলা

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in