• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

‘কিন্তু ও কেন অমন করবে, ও তো আমায় রেখেছে, নাকি?’

June 13, 2013 admin Leave a Comment

অমিতাভ সেন, কলকাতা, ১ জুন#

চলতে চলতে দেখি, শুনি। সিনেমার মত। টুকরো ছবি, সংলাপ। সবটা মিলিয়ে একটা গোছানো গল্পও নয়। সন্ধ্যের শুরুতে চৌরঙ্গী রোডে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সামনে ফুটপাথের চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়ে দেখলাম দু’জন দোকানদার দুধের ডেকচির সরায় তিন ভাঁড় চা সাজিয়ে ণ্ণও দাদা ও দাদা বলে ডাকাডাকি করছে’। ফুটপাথের রাস্তার দিক ঘেঁষে দোকান, উল্টোদিকে ব্যাঙ্কের বিল্ডিংয়ের নীচে চায়ের অর্ডার যারা দিয়েছে, তারা সদ্য নামা অন্ধকারে গুলতানি করছে। অফিস ফেরত তিন যুবক ও এক যুবতী। সকলের হাতে মোবাইল, কাঁধে ব্যাগ – কাঁধে মানে পিঠে, দুইদিকে ফিতে লাগানো – যেমন আমরা স্কুলে নিয়ে যেতাম।আমার বয়সের চোখে দোষ আছে – এখনও প্রথম দর্শনেই ওরকম ব্যাগ দেখলে আমার ব্যাগের বাহককে শিশু মনে হয়। ওদিকে যুবকরা যুবতীকে ঘিরে এতই ব্যস্ত যে দোকানদার দুজনের ডাক কানেই নিচ্ছে না। দোকানদার দুজনও ওই যুবকদেরই বয়সী – তারা ওই যুবতীর দিকে ইশারা করে নিজেদের মধ্যে মুখ টিপে হাসছে। চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। একজন যুবক যুবতীকে বলল, ‘সুমনা কে ডেকে নেব, ওর মোবাইল নাম্বার বল্‌। নম্বর পেয়ে সে যুবক মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়তেই যুবতী আরেক যুবককে বলল ‘তুই আমায় চাটছিলে কেন বলতো’। প্রশ্নকারী যুবক আত্মরক্ষার স্বরে বলে ণ্ণামি তোকে চাটলাম কখন্‌? ধ্যাৎ, তুই বুঝতে পারিসনি। আবার আমার বয়সের কানে লাগলো – যদিও আমি জেনে গেছি – ‘চাটা মানে আমাদের সময়ের বোর করা’।

সন্ধ্যের শেষের দিকে যুবক যুবতীদের স্থান – কাল – পাত্র সব পাল্টে গেল। আগে ওটা ছিল চৌরঙ্গী রোডের উত্তর প্রান্ত, এখন দক্ষিণ প্রান্ত। এই দৃশ্যেও চাওয়ালা নেই। ব্যঙ্ক অফ ইণ্ডিয়ার জায়গা নিয়েছে পি.সি.চন্দ জুয়েলার্স। তার ভিতর এত লম্বা লাইন পড়েছে যে বাইরে গুণে গুণে তিরিশ জন বন্ধ দরজায় দারোয়ানের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে – দেখলেই মনে পড়ে যাবে কাগজে লিখছে সোনার দাম হঠাৎ প্রতি ভরিতে ৩৩ হাজার থেকে ২৬ গাহার টাকায় নেমে গিয়েছে।আমার যুবক-যুবতীরা এই লাইন থেকে একটু দূরেই সোনার চেয়ে অনেক দামী একটা নীল প্লাস্টিকের টুকরো ফুটপাথে বিছিয়ে বসে গেছে। ওটাই ওদের ঘর-বাড়ী, ওর ওপর ছালায় বাঁধা ওদের গোটা সংসারের পাশে চটের কাঁথায় ওদের নবজাতক সদ্য ঘুমিয়েছে। তার গায়ে এক হাত দিয়ে চাপড়াতে চাপড়াতে আরেকহাত তুলে যুবতী মা এক যুবকের দিকে নির্দেশ করে পাশে বসা আরেক যুবকে সালিশ মানছে, ‘সে বলছে আমি মানছি, কিন্তু ও কেন অমন করবে, ও তো আমায় রেখেছে, নাকি?’ তার কণ্ঠস্বরের তীব্রতায় এবং বক্তব্যের অভিঘাতে সোনার দোকানের লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা উচ্চকিত হয়ে এদিকে চাইছে। আমি এই নাটকীয় সংলাপের সামনে আর দাঁড়াইওনা। অনুমান করে নিই এর আগের দৃশ্যে এই যুবতী আরেক যুবতীকে বলেছিল ওই যুবককে দেখিয়েই, “ ও আমায় নেবে বলেছে”। চলতে চলতে এটুকু অনুমান করে নেওয়া যায়। ‘রাখা’ ‘নেওয়া’ এইসব শব্দগুলো কোনো মহিলা সম্পর্কে শুনতে খারাপ লাগলেও এটা আমাদের নীচের মহলের দস্তুর। উপরের মহলে সোনার জেল্লা লেগে ভাষার কিছু হেরফের হয়।

যা হয় হোক – আমি জাম্পকাট্‌ করি – মানে লাফ মেরে যুবক যুবতীদের এড়িয়ে বৃদ্ধদের দৃশ্যে ঢুকে পড়ি ৭ নং পদ্মপুকুর রোডে। এখন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন হচ্ছে। আজ ১২ মে। ৯ মে ২৫শে বৈশাখ থেকে সব জায়গায় রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস পালিত হচ্ছে। মহানগরীর প্রায় মাঝখানে এই একটা একতলা পুরোনো বাড়ীতে ভবানীপুর পদ্মপুকুর ব্রাহ্মসমাজের আহ্বয়ানে প্রায় ৫০-৬০ জন এসে উপস্থিত হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় উর্ধেক সংখ্যকই উদ্যোক্তা ও শিল্পী। বাড়ীটার সংস্কার হয়নি অনেকদিন। বাইরের থামওয়ালা বারান্দা পেরিয়ে বড়ো একটা হলঘর। রংচটা দেওয়ালে সূর্য্যমুখী- গোলাপ- রজনীগন্ধা সারাদিনের দাবদাহে শুকিয়ে গিয়েছে। উঁচু সিলিং থেকে লম্বা রডে টাঙানো পাখা চারটে শুধু মাঝখানটুকুতেই হাওয়া দিচ্ছি। প্লাস্টিকের চেয়ারে দর্শক আর সামনের নীচে মঞ্চে শিল্পীরা সব ঘাম মুছতে ব্যস্ত। হাতে ধরিয়ে দেওয়া অনুষ্ঠানপত্রে অনুপরী সন্ধ্যে ৬-৩০টাতেই শুরু হল প্রার্থনা দিয়ে। পাঁচ থেকে দশমিনিটে দুটো সংস্কৃত স্ত্রোত্রর মাঝখানে একবার রামমোহন আর রবীন্দ্রনাথ, আরেকবার পরম করুওণাময় জগদীশ্বরের নাম শোনা গেলো। তারপর থেকে আর একটা শব্দও সুরে ছাড়া উচ্চারিত হয়নি। যদিও অনুষ্ঠানসূচীতে গায়কদের নাম লেখাছিল, তবুও কারো নাম বা কোনো রকম ভূমিকা মন্তব্য কিছুই ঘোষণা নয় – শুধু দেড়ঘণ্টা ধরে গান। তবলা, বেহালা, খঞ্জনী, হারমোনিয়াম সহযোগে বিশ-পঁচিশটা গান – বেশীরভাগ সমবেত, কয়েকটি একক। মাইক আছে – অথচ কেউ কিছু বলতে আগ্রহী নন – এরকম আমি কখনও দেখিনি।

মাঝখানে ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হ’ল। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম গেটের কাছে আমগাছে কাঁচা আমগুলো প্রচণ্ড দুলছে। একজন বৃদ্ধ উঠে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বৃদ্ধ অবশ্য সবাই। হাতে গোনা তিনজন বাদে সকলেই বয়স পঞ্চাশ থেকে সত্তরের মধ্যে। দুজন লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছেন। পিছনের দিকে একজন মহিলা শিল্পীর একমাত্র ছেলে পাগল। ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’’ গান গাওয়ার সময় নেই চেনা মহিলার দিকে একবার চোখ পড়ল। তিনি চোখ বুঁজে গাইছেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সময়ও কোনো ঘোষণা নেই। ণ্ণানন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গাওয়ার সময় সবাই যখন উঠে দাঁড়ালো তখন বোঝা গেল এটাই সমাপ্তি।

আচ্ছা, ব্রাহ্মরাকি একটু অন্যরকম হয়। উঁহু আমার দিদি, যিনি এই অনুষ্ঠানের একজন গায়িকা, তিনি জানালেন, উপস্থিত শ্রোতা ও শিল্পীদের বেশীরভাগই হিন্দু। তা হোক বেশ ভালোই লাগলো। আমি ও আমার সঙ্গী অনেকগুলো সমবেত গানে গলা মিলিয়ে দিতে পারছিলাম, আশে পাশের অনেক শ্রোতাই জানে গানে গলা দিচ্ছিলো, ফলে সুর ভুল করলেও কেউ ধরার ছিলো না। শেষে আমের সরবত খেয়ে কেক-মিষ্টির প্যাকেট হাতে বাইরে এসে দেখি শহর বেশ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। যদুবাবুর বাজারের পিছনে পূর্বদিকের বস্তির দু’হাত চওড়া গলিতে সরু লম্বা গলা বাড়ীয়ে হ্যালজেন ল্যাম্পের বিরাট মাথাটা চোখ পিট পিট করে ভাবছে বৃষ্টিতে নাইট ডিউটি দেবে কিনা। তার নীচে বসে যারা রোজ সন্ধ্যেয় উকুন মারতে মারতে গল্প করে তারা গলিতে ঝোলানো লম্বা কাপড়গুলো গুটিয়ে নিয়ে কখন ঘরে গিয়ে ঢুকেছে। জলের স্রোত ড্রেনের ঝাঁঝরি উপচে গলি ভাসিয়ে রাস্তায় নেমেছে। হাওয়ায় ছিঁড়ে জারুল গাছের বেগুনী ফুল এসে রাধাচূড়ার হলুদ ফুলের সঙ্গে গলাগলি দুলতে দুলতে রাস্তার জলে ভেসে যাচ্ছে – হাবে ভাবে মনে হয়, এত গরমের পর বৃষ্টিতে ওরাও খুশী।

 

চলতে চলতে ওপর তলা, নিচু তলা, ফুটপাথবাসী, রবীন্দ্রজয়ন্তী

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in