মহম্মদবাজার থানা এলাকার আদিবাসী নেতা সুনীল সোরেনের জবান, টেলিফোনে কথা বলেছেন শ্রীমান চক্রবর্তী, ১৪ মে #
অবৈধ জমি হস্তান্তর
প্রথমত, আমরা জানতে চাই কিভাবে আদিবাসীদের হাত থেকে জমি হস্তান্তরিত হয়েছে। এই জমি হস্তান্তর কিন্তু আজকের কথা নয়, ৩৫ বছর আগের কথা। তখন যেভাবে জমি দেওয়া হয়েছিল খাদানের জন্য তা পুরোপুরি সরকারি নিয়ম মেনে হয়নি। আদিবাসীদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সামান্য কিছু টাকা ঠেকিয়ে দিয়ে জমি নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গ্রামের মধ্যে খাদান
মাইনিং-এর নিয়ম অনুযায়ী গ্রাম থেকে খাদানের দূরত্ব হবে কমপক্ষে ২০০ মিটার। তালবাঁধ প্রভৃতি জায়গায় যে খাদানগুলো আছে সেগুলো ক্রমশ আদিবাসীদের গ্রামগুলো গ্রাস করে নিয়েছে। এই যে আইনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে খাদান করে ফেলা, এর বিরুদ্ধেও আমাদের প্রতিবাদ।
আদিবাসীদের জন্য কোনও পরিষেবা নেই
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে ন্যূনতম পরিষেবাগুলো লাগে, যেমন রাস্তা বা পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত প্রভৃতির দিকে সেভাবে নজর দেওয়া হয় নি। আদিবাসীদের পশুদের মতো রেখে দেওয়া হয়েছে। ওটা এত বড়ো শিল্পাঞ্চল, ওখানে তো শ্রমজীবী মানুষ অনেক, ওখানে তো শ্রমজীবী হাসপাতালের দরকার ছিল, তা কিন্তু হয়নি।
খাদান মালিকদের প্রশ্রয়ে দুষ্কৃতিরাজ চলছে
ওখানে এই পাথর শিল্পের সুবাদে বহিরাগত দুষ্কৃতিরা ওখানে গিয়ে আদিবাসী মহিলাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালায়। ওখানে যে শ্রমিকরা কাজ করে, তাদের কোনও আইডেনটিটি কার্ড নেই। কেউ মারা গেলে তার লাশ গুম করে দেওয়া হয়। ওখানে একটা দুষ্কৃতিরাজ চলছে। এইসবের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। আজকাল আদিবাসী গ্রামের ছেলেরা সকালে উঠে স্কুলে যায় না, কারণ সে সকালে উঠে দেখে, গ্রামে মদ বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা পয়সা ওড়ে ওখানে। ছেলেরা মস্তানি করে এই খাদান মালিকের কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করে, ওই মালিকের কাছ থেকে আরও ৫০ টাকা আদায় করে। আদিবাসীদের নেশা করার অভ্যাস আছে, এই মদ-সংস্কৃতির দৌলতে তারা আরও নেশার বশ হয়ে যাচ্ছে। অনেক আদিবাসী বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এই আদিবাসীরা এতদিন কোনও প্রতিবাদ করত না, কিন্তু আজ প্রতিবাদ করছে। কারণ আজ খাদান মালিকদের প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা দুষ্কৃতিরা আদিবাসী মেয়েদের ইজ্জতে হাত দিয়ে।
খাদানের ধূলোয় ঢেকে গেছে চাষ
আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে ওখানে যেটুকু চাষযোগ্য জমি ছিল এবং সবচেয়ে বড়ো কথা বনাঞ্চল ছিল। আদিবাসীরা সেগুলোর সাহায্যেই বেঁচেছিল। সেইগুলো এখন প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। খাদানের পাশের জঙ্গল নষ্ট হতে বসেছে। সত্তরের দশকের প্রথম দিকে সরকার যখন খাদানগুলোর লাইসেন্স দেয়, তখন হয়ত পাঁচটা গ্রামে একটা একটা খাদান ছিল, এখন একশ’টা খাদান।
আদিবাসীরা ওখানে শেষ হয়ে যাচ্ছে, খাদান মালিকরা ওখানে আধিপত্য করছে। খাদান মালিকদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, তাদের কথা পুলিশ শোনে, রাজনৈতিক নেতারা শোনে। আদিবাসীরা গরিব, কী করবে?
এখনও আদিবাসীরা চাষ করে বাঁচতে পারে। কিন্তু দূষণের জন্য পারছে না। সবসময় ধূলো উড়ছে। আমরা দাবি করেছি, অবৈধ খাদান বন্ধ করতে হবে। খাদান মালিক হয়ত একটা খাদানের লাইসেন্স পেল, তাই দিয়ে দশটা খাদান খুলে ফেলল। এর ফলে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
Leave a Reply