- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

তাঁতী এমনিতে ভালো কিন্তু অভিমান বিশাল

১২টি তাঁতই বন্ধ লকডাউনে। কারখানাদার ঝুলে পড়লেন বাড়ির বাতাবিলেবু গাছে

বাবর আলী। বাগদিয়া, শান্তিপুর। ২৯ অগাস্ট, ২০২০।#

শান্তিপুর ব্লকের আড়বান্দি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগদিয়া গ্রামের বাসিন্দা খোকন দেবনাথ। বয়স ৬০/৬২ বছর। পেশায় তিনি ছিলেন একজন তাঁতের কারখানাদার। ১০/১২টি তাঁত চালাতেন। সপ্তাহের কাপড় মহাজন বাড়িতে দিয়ে আসতেন। সেই কাপড় বিক্রির টাকায় এই দশ বারোটি পরিবার এবং তার নিজের পরিবার চলতো। তার সাথে নিজে ড্রামও হাঁটতেন। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু আকস্মিক লকডাউনের ফলে কাপড়ের হাট বন্ধ হয়ে যায়, মহাজন কাপড় নেওয়া বন্ধ করে দেয়, বন্ধ হয়ে যায় বাইরে থেকে সুতো আসা। স্থানীয় দোকানেও সুতোর আকাল শুরু হয়ে যায়। একদিকে সুতোর অভাব, অন্যদিকে কাপড় বিক্রি বন্ধ হবার ফলে খোকন দেবনাথের তাঁত বন্ধ হয়ে যায়। তাঁতিরা অসুবিধার মধ্যে পড়ে যায়। নিজের তাঁতি অর্থাভাবে নানা সমস্যায় দিন কাটাচ্ছেন, তাই দেখে ধার দেনা করে নিজের থেকে তাদের সামান্য সাহায্যের চেষ্টাও প্রথম দিকে হয়তো করেন। কিন্তু লকডাউনের বহর ক্রমশ বাড়তেই থাকে। তাতে সমস্যা তীব্র হতে থাকে খোকন দেবনাথের। মানসিকভাবে চরম চাপে পড়ে যান। নিজের হাতে তৈরি করা ব্যবসা, ছোটো হলেও তো নিজের কর্মক্ষেত্র গড়ে নিয়েছিলেন এর মধ্যে। কাজের জন্য তো আর হন্যে হয়ে এদেশ সেদেশ করতে হয় না। সেই ব্যবসাটায় শেষ হয়ে গেল। একটা বিপন্নতা, অস্তিত্বহীনতার যন্ত্রণায় ভিতরে ভিতরে ছটফট করতে থাকেন। তারপর ২৮ আগস্ট রাতে নিজেকে শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিবেশিরা সকাল ৫টার সময় দেখেন বাড়ির সামনের বাতাবিলেবু গাছে খোকন দেবনাথের মৃতদেহ ঝুলছে। থানায় খবর দেওয়া হয়, কিন্তু পুলিশও আসে নি। ডোম এসে মৃতদেহ নিয়ে মর্গে নিয়ে যায়।


সারাদেশে মার্কেট বন্ধ। বিক্রি নেই। মহাজন সুতো দিচ্ছে না। তাঁতীরা টাকা দাও বলে বিরক্ত করছে মহাজনদের। মজুরী পড়ে গেছে। হ্যান্ডলুমের ৫০০ টাকার মজুরী কমে এসেছে দেড়শ'তে। মহাজনের কোনো দায় নেই। সুতোও দিচ্ছেনা, পটিও নিচ্ছেনা। পটি তো তাঁতীর, মহাজনের কোনো লস নেই। ফুলিয়ার ৬ টি সমিতির একটি 'স্বামীজী তন্তুবায় সমবায় সমিতি'। ২০ জন সদস্য। সত্তরটি তাঁত। এখন মাত্র তিনজন তাঁতীর খাতা চালু আছে। জানালেন ওই সমিতিরই সদস্য রাজেন বসাক।
সারাদেশে মার্কেট বন্ধ। বিক্রি নেই। মহাজন সুতো দিচ্ছে না। তাঁতীরা টাকা দাও বলে বিরক্ত করছে মহাজনদের। মজুরী পড়ে গেছে। হ্যান্ডলুমের ৫০০ টাকার মজুরী কমে এসেছে দেড়শ’তে। মহাজনের কোনো দায় নেই। সুতোও দিচ্ছেনা, পটিও নিচ্ছেনা। পটি তো তাঁতীর, মহাজনের কোনো লস নেই। ফুলিয়ার ৬ টি সমিতির একটি  ‘স্বামীজী তন্তুবায় সমবায় সমিতি’। ২০ জন সদস্য। সত্তরটি তাঁত। এখন মাত্র তিনজন তাঁতীর খাতা চালু আছে। জানালেন ওই সমিতিরই সদস্য রাজেন বসাক। -সংবাদমন্থন প্রতিবেদন। ছবি- ধীমান বসাকের সৌজন্যে।

বাবা, মা আগেই মারা গেছেন। স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। একটা ছেলে ছিল, কয়েকবছর আগে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় সেও মারা যায়। বাড়িতে ছিল খোকন দেবনাথের একমাত্র মেয়ে মুনমুন দাস। তিনি বিবাহিত হলেও বাবার দেখভালের জন্য বাবার কাছেই থাকতেন। তিনি জানান, “বাবা ভালোই ছিল কাজ কাম নিয়ে। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে বাবা ক্রমশ বদলে যেতে থাকে। কারোর সাথে তেমন কথা বলত না। ধার দেনা ছিল, কিন্তু সেটা খুব বেশি নয়। এরকমটা হবে কেউ বুঝতে পারিনি।” মৃত খোকন দেবনাথের ভাইপোর স্ত্রী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষজনেরও অভিমত ” লকডাউনের ফলে তাঁত বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের চাপ, দুশ্চিন্তায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। হয়তো লকডাউন না হলে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না।”