- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

সকালের ডাউন রানাঘাট লোকালে ‘জয় শ্রীরাম’ / ‘ভারতমাতা কী জয়’ গর্জন আর শোনা যাচ্ছে না

অজয় বিশ্বাস, কলকাতা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।#
হাওড়া স্টেশন থেকে পাঠানো ছবিটি তুলেছেন সাদির আলি

মাসে একবার দু-বার বাড়ি (নদীয়া জেলা) থেকে কলকাতা আসি ট্রেনে। সকালের দিকের রানাঘাট লোকালই বেশি ধরা হয়। লকডাউনের আগে প্রায় বছর দুয়েক ধরে দেখছিলাম, শ্যামনগর ছাড়ালেই নিত্যযাত্রীদের একটা অংশ থেকে সজোর আওয়াজ উঠত — “বলো বলো জয় শিব শম্ভু কী …”। বেশ কয়েকজন গলা মিলাত। এই স্লোগানের পর্ব শেষ হত “জয় শ্রীরাম” এবং “ভারত মাতাকি জয়” স্লোগান দিয়ে। একবার আমি সন্তর্পনে ভিড়ের মধ্যে থেকে স্লোগান যে তুলছিল, তার ছবিও তুলে নিয়েছিলাম। লকডাউনের পরে দু’বার সেই রানাঘাট লোকালেই এলাম কলকাতা। সামনের ভেন্ডারের আগের ও পরের কামরায়। কিন্তু শ্যামনগর পেরোতেই সেই গর্জন আর শুনতে পেলাম না। ট্রেনে নিত্যযাত্রীদের ভিড় সকালের দিকে বেশ ভালোই। লকডাউনের আগের মতোই। বেশিরভাগেরই মুখে মাস্ক। শীতের সকাল। তবে নিত্যযাত্রী পুরুষদের নিজেদের মধ্যে টিপ্পনি, ইয়ার্কি এবং কামারাদারিতে কামরা উষ্ণ। কিন্তু লকডাউনের আগে যেভাবে নানা রাজনৈতিক ইস্যু তর্কের বিষয় হয়ে উঠত, এবং অবধারিতভাবে যে আলোচনা মুসলিমবিদ্বেষী পাকিস্তানবিদ্বেষী চেহারা নিত — তা কিন্তু এই দু-দিনে নজরে এল না। কামরার লাউডস্পিকারে আগে গান বা বাজনা বাজত। কোনো কোনো সময় পরের স্টেশনের অ্যানাউন্সমেন্টও হত। এখন তার জায়গা নিয়ে অমিতাভ বচ্চনের ভারী গলায় হিন্দিতে করোনার সতর্কবাণী। “যবতক দাবাই নেহি, তবতক ঢিলাই নেহি” পাল্টে এখন যেটা বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে — ভ্যাকসিন এসে গেছে, তবু মুখোশ পরে থাকতে হবে। দেখলাম, নিত্যযাত্রীরা বিরক্ত এই ঘোষণায়। অনেক নিত্যযাত্রীই সকালের ট্রেনে উঠে একটু ঘুমিয়ে নেয়। মিঠে গান হলে তাদের ঘুম তোফা হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে অমিতাভ বচ্চনের গলার আওয়াজ তাদের পক্ষে বেশ বিরক্তিকর। কেউ কেউ বলছে — বচ্চনের পরিবারের সবাই তো করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে ও এত বড় বড় কথা বলছে কেন? সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিজীবন তার বিজ্ঞাপণে প্রভাব ফেলছে, তার বিজ্ঞাপণের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে। আদানির ফরচুন তেলের বিজ্ঞাপণদাতা ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলির হার্টে ব্লক ধরা পরার পরও এরকম হয়েছে শুনেছিলাম। কামরার লাউডস্পিকারে করোনা সতর্কবাণী ছাড়াও আরেকটা সতর্কবাণী বাজছিল — রেলের চাকরি ঘুষ দিয়ে পাওয়া যায় না। যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়। ইত্যাদি। তাতে দেখলাম একজন নিত্যযাত্রী যুবক বিরক্ত হয়ে স্বগতোক্তি করল — ধুর, সব বেচে দিচ্ছে। আবার চাকরি! সব মিলিয়ে ডাউন রানাঘাট লোকালের পরিবেশে একটা বদল নজরে এল।