- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

পাঁচ মাস ছুরি কাঁচি তে সান দেওয়া বন্ধ থাকলেও মাথায় সান দেওয়া চলছে নিরন্তর

করোনার বাজারে কাজ হারানো মানুষের কাজের খোঁজে স্কেচ আঁকছেন সুমিত দাস

সুমিত দাস। শান্তিপুর। ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০।#

সমীর শেঠের লেখা কবিতা। ‘মুহূর্ত জোনাকি’ কাব্যগ্রন্থ থেকে।

পাথরের বুকে ঘষা খেয়ে খস খস শব্দের সাথে সমানে আগুনের ফুলকি ছুটছে। আশির কোঠায় ধাক্কা দেওয়া মানুষটা একমনে বঁটিতে ধার দিয়ে চলেছেন। গোবিন্দপুর প্রমোদ নগর থেকে আলো না ওঠা ভোরে সাইকেলে পৌঁছে যান শান্তিপুর স্টেশানে। গন্তব্য কখনো হবিবপুর,পায়রাডাঙ্গা থেকে বিধাননগর, মেদিনীপুর।আশ্চর্য হই। আমার গোল গোল চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন আমি পুরীতেও গেছি বারো বার। ওখানে তো বাঙালি হোটেল প্রচুর আছে ছুরি কাঁচি বঁটিতে ধার দিতে হয়। পয়সাটাও ভালো পাওয়া যায়।

একাই যান ?

– না কখনো পরিবারকেও নিয়ে যাই।

সমীর শেঠের ছবি এঁকেছেন সুমিত
পরিবার বলতে তো আপনি আর জ্যেঠিমা ?
– হ্যাঁ। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়ি বলতেই সমীরদার বাড়ির ছবিটা ভেসে ওঠে। টালির চাল,মাটির দাওয়া উঠোন জুড়ে গন্ধরাজ, বেলি, লিলি ফুলের গাছ। সামান্য অথচ সব পরিপাটি। বাড়িটা দেখলেই আঁকতে ইচ্ছা করে।
কয়েক বছর আগে কথা যখন সমীরদা কে চিনতাম না তখন বুড়োদা পরিচয় করিয়ে দেয়। বলে সুমিত ওনাকে চেনো ? উনি সমীর শেঠ, একজন কবি। ‘এবং জ্যোতি’ নামে একটা পত্রিকা করেন।
ধীর স্থির মানুষটা উসখুস করতে থাকেন বুঝতে পারি। কারণ টা ধরতে পারিনা। জানতে চাই কবিতার প্রতি ভালোবাসা কীভাবে জন্মালো ? ওরিয়েন্টাল স্কুল যখন কাঁসারী পাড়ায় ছিলো তখন ঐ স্কুলে আমরা পড়তাম। বন্ধুদের সাথে কবিতা কবিতা খেলতাম।হাতে লেখা পত্রিকাও করেছি। মোটামুটি এভাবেই কবিতার সাথে জড়িয়ে পরেছি। আরো কিছুক্ষন কথা বলার ইচ্ছে রয়েছে আমার। সমীরদা সাইকেলের হ্যান্ডেলে রাখা একটা ব্যাগের ভেতর বইখাতার মাঝখান থেকে একটা পাতলা বই বের করে দিয়ে বলেন, আমাকে নিয়ে একটা বই হয়েছে, এতে আমার সম্পর্কে সব তথ্য পাবে। বইটির নাম ‘এবং জ্যোতি এবং সমীর শেঠ’।

ট্রেন বন্ধ পাঁচ মাস। সমীরদা বাড়িতে বসে। কোন মতে দিন গুজরান করছেন। এখন অবশ্য সাইকেলে করে বিস্কুট, চানাচুর, চিড়ে ভাজা, বাদাম ভাজা ইত্যাদি ফেরি করছেন। বুঝতে পারি মানুষটাকে আর বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখা উচিত হবে না। দৃঢ়চেতা, জেদি ঋজু মানুষ টা উঠে দাঁড়িয়ে বলেন বৃষ্টি এলে মালগুলো পৌঁছতে পারবো না। সাইকেলে ওঠেন। হ্যান্ডেলের ব্যাগটাতে চোখ পরায় বুঝতে পারি পাঁচ মাস ছুরি কাঁচি তে সান দেওয়া বন্ধ থাকলেও মাথায় সান দেওয়া চলছে নিরন্তর।


আমি বেশ ভালো আছি

আমি বেশ ভালো আছি!

 

ঘরে চাল বাড়ন্ত হলে বৌকে বলি – জল বেশি দিয়ে ফেন ভাত রাঁধতে,

ভাগাভাগি খেয়ে তা ভরপেট জল খেতে খেতে বড় ক’রে ঢেকুর তুলি।

…………


সমীর শেঠের একটি কবিতার অংশ।