- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

এই কোভিডকালই কি জনস্বাস্থ্য সেবার দাবীগুলি জোরদার করে তোলার ঠিক সময় নয়?

উত্তান বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা। ২৫ অক্টোবর, ২০২০।#
কলকাতার বাইপাসের ধারে একটি পাড়া মেট্রোপলিটন। সেখানে একজন ডাক্তারবাবুর বাড়ির সাথে আমার যোগাযোগ আজ প্রায় পনের বছর ধরে। একবার বাইপাসেরই ধারে ঝাঁ চকচকে সবচেয়ে ভাল একটি কর্পোরেট হাসপাতাল ওনার ভুল চিকিৎসা করেছিল। তার মধ্যে অনাচার ছিল। এই মেডিক্যাল নেগ্লিজেন্সের কেসটি নিয়ে সেসময়ে দারুণভাবে ইনভেস্টিগেট করি। স্টোরি করি একটা টেলিভিশন মিডিয়া মারফৎ। পরে ডাক্তারবাবু মারা যান। সেই চিকিৎসা বিভ্রাটেই। চিকিৎসা অনাচারেই। কর্পোরেট হাসপাতালটি আমার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। সেই মামলা টেঁকে নি। যাইহোক সেই ডাক্তার বাবুর তিন কন্যা। বড় কন্যার বিয়ে হয়ে গেছিল আগেই। মেজ কন্যা আর ছোট কন্যা অবিবাহিত। ছোট কন্যাকে আমি প্রথম যখন দেখেছিলাম তখন তার বয়স ছিল ঊনিশ। আজ তার বয়স চৌত্রিশ। এই মেয়েটির গত দু’হাজার এগার সাল থেকে একটি অটো ইম্যুউন রোগ ধরা পড়ে – রোগটির নাম SLE (Systemic Lupus Erytheometosus)। এই অসুখটি মারাত্মক অসুখ। ধরা পড়ার প্রথম দিন থেকে একেবারে ঠিকঠাক চিকিৎসা না পড়লে খুব খারাপ অবস্থা হবে। আর এই অসুখটি সারে না। কিন্তু মেয়েটির ক্ষেত্রে আমার মনে হয় ঠিকমতন চিকিৎসা হয়নি। বহু ডাক্তার বহুরকম এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। মেয়েটির এবছরেই গত মে মাসে একটি স্ট্রোক ( cerebro vascular arrest বা CVA) হয় , ডানদিকটা পুরোটা পড়ে যায় ও কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ির লোকেরা ভেবেছিল কোভিড আবহ থেকে সময়টা একটু স্বাভাবিক হয়ে গেলে ভেলোরে নিয়ে যাবে। কিন্তু গত ৭ই অক্টোবর মেয়েটির প্রচন্ড একটি কনভালশন(খিঁচুনি) হয় , ওকে বাইপাসেরই ধারে আরেকটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অবস্থার অবনতিতে ভেন্টিলেটর দিতে হয়। দুদিন পরে তারা জানালেন যে এই পেশেন্টের হার্ট ছাড়া সব কিছুই প্রায় অকেজো হয়ে গেছে , মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর হয়ে গেছে , কোমায় চলে গেছে । ব্রেইন ডেথ হয়ে গেছে।
কাজেই একে বাড়িতে নিয়ে যান – এখানে রেখে কোনদিনই পেশেন্ট আর ফিরবে (reversible) না। উল্টে প্রতিদিন এক লক্ষেরও বেশী টাকা খরচ হয়ে যাবে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখুন। বাড়ির লোকেরা তাই করলো। কিন্তু যেটা বলবার জন্য এতক্ষণ এতকিছু লিখলাম যে পাড়ায় একটাও জিপি ডাক্তার পাওয়া গেল না যে বাড়িতে এসে পেশেন্টটাকে একটু দেখে যাবে। আমি জানলাম ও হাসপাতালে কোন কোন ডাক্তারবাবুর চিকিৎসাধীন ছিল। ভাগ্যক্রমে একজন ডাক্তারবাবু আমার ভীষণ চেনা বেরিয়ে গেল। এটাও জানা গেলো সেই ডাক্তারবাবুর ছোটবেলায় তার স্যার ছিলেন পেশেন্টের প্রয়াত বাবা। তাকেই বললাম,
– তুমি একজন তোমার কোন পিজি স্টুডেন্টকে পাঠাও না প্লিজ, পেশেন্টটাকে যাতে বাড়িতে একটু দেখে আসে।
ও উত্তর দিলো-
দেখছি। আমার এক ছাত্রকে বলছি।
অবশেষে তারই এক পোস্টগ্রাজুয়েট ছাত্রকে পাঠানো হলো । সেই ছাত্রটি এল। দেখল। কিছু নিদান দিল। নেব্যুলাইজ করতে বলল। সেটা গতকাল। ছেলেটি একটাও পয়সা নিল না তার ফি হিসেবে।
আজ সকালে মেয়েটি মারা যায়। আমাকে বাড়ির লোক ফোন করে জানাল।
আমি তাই সবার আগে সেই হাসপাতালের পরিচিত বন্ধু ডাক্তারকেই প্রথমে ফোন করি। ওনাকে জানাই যে তার ছাত্রটি আরেকবার এসে দেখে যদি একটা ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিয়ে যায় ….। উনি বললেন,
– আপনি ফোন করে দেখতে পারেন, তবে আমাদের হাসপাতালের পিজিটি স্টুডেন্টরা প্রাইভেট সার্টিফিকেট দিতে পারে না।
পিজিটি ডাক্তারটিকে এবার ফোন করলাম। ও বলল – আমার ওয়ার্ড ডিউটি আছে, জানিনা যেতে পারবো কিনা – এটা – সেটা – এসব।
(প্রসঙ্গত বলে রাখি হাসপাতালে থাকবার সময়ে মেয়েটির কোভিড পজিটিভ হয়নি। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।)
ফোন করলাম আমার এক দাদা-বন্ধু ডাক্তারকেও। উনি এককালে কলকাতার সবচেয়ে নামী শিক্ষালয়-হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ও সেখানকার আইটিইউ ইনচার্জ ছিলেন। উনি বললেন – কেউ নেই ? একটাও জেনারেল ফিজিশিয়ান বাড়িতে আসবেন না?
 আমি জানালাম , পাড়াটা এমনই যে একটাও ডাক্তার বাড়িতে আসে না, আসবে না – এক। আর এটা কোভিড কাল – দুই। আর এই কেস তো শুনে আরোই আসবে না কারণ কেসটা জটিল অসুখ, যা সচরাচর এরা চিকিৎসা করে না বা হয়তো জানেও না – তিন।
অগত্যা, আমার সেই বন্ধু দাদা বললেন –
– তুমি যখন বলছ তখন কাউকে পাঠিয়ে দাও আমার গল্ফগ্রীনের বাড়িতে, আমি ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেব। কিন্তু কাউকে তো ডেথটা কনফার্ম করতে হবে !
-সেটা কে করবে ? আমি বললাম।
– শুনুন ডেথ কনফার্ম করতে গেলে তো কোনো ডাক্তারকেই লাগবে ; আর সেই ডাক্তারই যদি পাওয়া যেতো তাহলে সে-ই তো সার্টিফিকেট লিখে দিতে পারতো ! কিন্তু কনফার্ম কে করবে!
উনি বললেন –
– তুমি নিজে গিয়ে ডেথ কনফার্ম করো। চোখের কর্ণিয়া রিফ্লেক্সটা চেক করো।
কর্ণিয়া রিফ্লেক্স চেক করার ব্যাপারটা আমার এক অগ্রজা বান্ধবী ডাক্তার একটু আগেই ফোনে বলে দিয়েছিলেন। সেই বান্ধবী বললেন যে –
– একটা তুলো সলতের মতো সরু করে পাকাবে। একটু ছুঁচলো করে ছুঁচলো দিকটা রুগির চোখের পাতা ফাঁক করে চোখের কালো মণিটাতে খোঁচা দেবে। তাতেও যদি রিফ্লেক্স এ্যাকশন (প্রতিবর্তক্রিয়া) না পাওয়া যায় তাহলে বুঝবে পেশেন্ট মারা গেছে।
ওদিকে সেই হাসপাতালটির আমার পরিচিত ডাক্তারবাবু আমাকে জানালেন উনিও ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিতে পারেন, তবে কাউকে তো রুগিটি সত্যিই মারা গেছে কিনা এটা কনফার্মড জানাতে হবে ! কারণ যখন রোগী ভর্তি ছিলো তখন ডাক্তারদের টিমে ইনিও ছিলেন।
আমি অগত্যা বেরিয়ে পড়লাম বেলা সাড়ে এগারটা নাগাদ।
একটা উবের ভাড়া করে সোজা মেট্রোপলিটান। যে মর্মান্তিক দৃশ্য বাড়ির লোকেরা সাতদিন ধরে যুঝেছিল, যে ডিপ কোমায় পেশেন্টের ব্রেইন ডেথ হয়ে গেছে তবুও কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর হয়নি – বিদেশের অনেক জায়গাতেই ব্রেইন ডেথ বা সেরিব্রোকর্টিক্যাল ডেথকে অনেকক্ষেত্রেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয়ে থাকে। যাইহোক এই মর্মান্তিকতা থেকে মুক্তি পেলো বাড়ির লোক। ওনাদের বাড়িতেই এক আয়া সমাজকর্মী ছিলেন, তিনি তার পরিচিত এক ডাক্তারকে ডেকে এনে তারা ইতিমধ্যেই একটা মোটা টাকার বিনিময়ে(১৫০০ টাকা) একটা ডেথ সার্টিফিকেট লিখিয়ে নিলেন।
আমি ওদের বাড়িতে পৌঁছে দেখতে চাইলাম সেটা। দেখলাম সেটা এক হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের লেখা ডেথ সার্টিফিকেট। তাও তার কোয়ালিফিকেশন দেখলাম DMS । বলে রাখি DMS কোয়ালিফিকেশন টা একটা ৪০ বছর আগেকার কোয়ালিফিকেশন। এখন DMS হয়না । এখন হয় BHMS(Bachelor in homoeopathic medicine and surgery ) DMS টা diploma qualification ছিল। তাও এককালে। এটাও ঠিক আছে – ধরে নিলাম। কিন্তু সার্টিফিকেটে আরেকটা কথা লেখা ছাপানো ছিল। “Registered Pharmacist” এই কথাটা। আমি মেজ মেয়েকে বললাম –
-কোন শ্মশানে নিয়ে যাবে?
– নিমতলা।
– নিমতলা তো কলকাতায়, সেটা বড়ো শ্মশান। সেখানে কলকাতা কর্পোরেশনের ডাক্তার থাকে। এ যদি , Registered Pharmacist বা DMS টা না বুঝতে পেরে তোমাদের ফিরিয়ে দেয় , যদি বেগড়বাই করে  তাহলে কোথায় যাবে? তখন কি মফঃস্বলের শ্মশানে যাবে যেখানে ডাক্তার appointed থাকে না ?
আমি সাথে সাথে আবার আমার বন্ধু ডাক্তারকে ফোন করলাম। ও ওই হাসপাতালে একজন নামকরা মেডিসিনের ডাক্তার যদিও। কিন্তু আমি ডেসপারেট ও নিরুপায়। ও ফোনে বলল আধার কার্ড সহ সব কিছু এমনকি হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের ডেথ সার্টিফিকেট সহ ওকে যেন তৎক্ষনাৎ হোয়াটসএ্যাপে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । ও জানালো –
– আমি কসবায় ওমুক জায়গায় থাকি। ঠিক দুপুর তিনটের সময়ে আমার ফ্ল্যাটের নীচে আসুন। আমি উপর থেকে নেমে এসে আপনাকে ডেথ সার্টিফিকেটটা লিখে আপনার হাতে দিয়ে দেব। তাছাড়া রোগীকে তো আমি দেখেছি যখন ও ডিপ কোমায় চলে গেল। আমিই আমার ছাত্রকে পাঠিয়েছিলাম।
ডাক্তার কথা মতন কাজ করলেন। ফিস নেবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। জানতাম উনি ফিস নেবেন না। ওদিকে আমার অগ্রজ দাদাবন্ধু ডাক্তার তার বাড়িতে একটা ডেথ সার্টিফিকেট লিখে ফেলেছেন। আমার অগ্রজাপ্রতিম বান্ধবী ডাক্তারও মফঃস্বলে চেম্বারে বেরোনোর আগেই তার হিন্দমোটরের বাড়িতে সকালেই ডেথ সার্টিফিকেট লিখে বাড়িতে রেখে গেছিলেন। আমরা কিন্তু আমার এই বন্ধু ডাক্তারবাবুরই ডেথ সার্টিফিকেটটা নিলাম কারণ পেশেন্টটিকে তিনি হাসপাতালে দেখেছিলেন, আর দ্বিতীয়ত, কসবা মেট্রোপলিটন এর চেয়ে টালিগঞ্জ বা হিন্দমোটরের তুলনায় অনেক কাছে।
গল্প শেষ।
বুঝলাম যে সমাজটা দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিন এরকমভাবেই অচেনা, নৃশংস, মর্মান্তিক। মানবতা নেই। থিকথিক করছে ডাক্তার যে পাড়াতে সেখানে ডাক্তার গত সাতদিনে একটাও পাওয়া গেল না, আজ ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেবার মতনও কাউকে পাওয়া গেল না। অসহায়তার কোন লব্জ বেরোচ্ছে না। এক নীরব দুঃখ। অপমান। বিপদ। ও জ্বালা। সর্বোপরি টেনশন।
কিন্তু এরপরেও পাঁচজন মানুষকে পেলাম। গতকালকের দেখে যাওয়া সেই পিজিটি ছাত্র ডাক্তারটি, আমার পরমবন্ধু ডাক্তারটি, আমার অগ্রজপ্রতিম ডাক্তার দাদাবন্ধু ও আমার সেই বান্ধবী ডাক্তার জন। আর  বাড়ির আয়া দিদিমনি।


শান্তিপুরের সূত্রাগড় চড়কতলায় খোকন ডাক্তারের চেম্বারের সামনে সপ্তমীর শেষ দুপুরেও রোগীর অপেক্ষা। বেলা সাড়ে তিনটে। ভেতরে বাইরে মিলিয়ে তখনও জনা পঞ্চাশ মানুষ। ডাক্তারবাবু বললেন, সারা বছর দৈনিক আড়াইশ’-তিনশ’ রোগী দেখেন। লকডাউনের সময় তো দিনে পাঁচশ ছাড়িয়ে যেত। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন। ভালো নাম নির্মলেন্দু ভৌমিক। চিকিৎসা ও পাঁচ-ছদিনের ওষুধের খরচা রোগী পিছু পঁচিশ তিরিশ টাকার বেশি নয়। ডাক্তারবাবুকে ডিগ্রির কথা ইনিয়ে বিনিয়ে জিগ্যেস করলে বলেন, ব্যারাকপুর থেকে আমার কোর্স করা আছে। ডিগ্রিটা ব্যাপার নয়। মেন হল প্র্যাকটিস, অভিজ্ঞতা।           ছবি ও কথাবার্তা- পর্ণব


সমাজটা একটু ভাল হতে পারে একটু নিরহঙ্কারী হওয়ার অভ্যেস করলে।
এটা অভ্যেসের ব্যাপার।
জনস্বাস্থ্য সেবার মূল নীতিমালাগুলো মানতে চাইলে সাংবিধানিকভাবেই আসে সবার অধিকার স্বাস্থ্য। এটা তখনই আসে যখন কোন প্রাইভেট স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা ব্যাবস্থা না থেকে পুরোটাই সরকারের আওতায় আসে। কিন্তু আমাদের দেশে বাস্তবটা কী ? বাস্তব হচ্ছে যে, (বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট অনুসারে) শতকরা তিরাশি ভাগ চিকিৎসা জনসাধারণকে নিজের পকেট থেকে কিনতে হয়, দুই শতাংশ এনজিও’রা দাতব্য করে আর পনের শতাংশ খরচ করে সরকার – সে যেকোন সরকার – কি রাজ্য বা কেন্দ্র বা লোকাল গভর্নমেন্ট(কর্পোরেশন , মিউনিসিপ্যালিটি বা পঞ্চায়েত)। পরিসংখ্যানটা উল্টো নয় কিন্তু। তাই একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাই , সকলের জন্য সমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাই – কথাটা আমাদের শ্লোগান হতে পারে কিন্তু তা এই ধরণের কোন সরকারের পক্ষেই দেওয়া বা মানা সম্ভব নয়। সরকার মূলত কোন্ শ্রেণিকে সুবিধে দেয় এটা বুঝতে হবে। ধরা যাক, ওষুধ বাজার। কে ওষুধের দাম নির্ধারণ করে ? করে একটি সংস্থা – যার নাম NPPA(national pharmaceutical pricing authority)। কে বা কারা আছে এই অথরিটিতে? আছে ৮৫% ফার্মা কোম্পানির তাবড় বড়ো বড়ো মালিকরা। আর ১৫% শতাংশ সরকারি লোকজন – আমলারা। তার মধ্যে চেয়ারম্যান যিনি তিনি সরকারি লোক – AIIMS দিল্লির ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসর হেড ডাক্তারবাবু। কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাদের? তাই যেটা হবার নয় তা হবে না- এটা ধরে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। তার কারণ ‘স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা’ দুটি আলাদা বিষয়। দুটিকে এক করে দিলে হবে না। সকলের জন্য স্বাস্থ্যের সমানাধিকার বললে সকলের জন্য সুষম খাদ্য দরকার, পরিশুদ্ধ পানীয় জল বোঝায়, সুন্দর স্যানিটেশন বোঝায়, পরিষ্কার জামাকাপড় বোঝায়, একটা নিরাপত্তার বাসস্থান বোঝায়, একটা স্থায়ী রোজগার বোঝায় ও শান্তি বোঝায়। তাই সকলের জন্য স্বাস্থ্যের সমানাধিকার কখনোই আমাদের দেশের এই সরকারগুলোর পক্ষে প্রদান করা সম্ভব নয়। তাহলে ইংল্যান্ডে কী করে সকলের জন্য স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ফ্রি? কানাডাতে কীভাবে হল? জার্মানিতে কীভাবে এটা সম্ভবপর হল? সৌদি আরবে, ভুটানে এমনকি শ্রীলঙ্কাতেও কীভাবে হল? তাহলে এদেশেই বা কেন হবে না?
জোরালো আইন দিয়ে কর্পোরেটকে বেঁধে দেওয়া যায়, যাতে ওরা মুনাফা বানাতে গিয়ে যা খুশি তাই না করে। তাহলে তঞ্চকতা কমবে। আর কেউ রসগোল্লা মিষ্টি খাইয়ে এটা পাইয়ে দেবে না। সমাজে সর্বস্তর থেকে জোরালো আন্দোলনের দরকার।
বিবিধ, বিবিধ প্রশ্ন। অসংখ্য বিতর্ক আসবে। তা আসুক কিন্তু আলাপ সংলাপ বাক্যালাপ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।
যদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং থাকতে পারে, তাহলে ডিপ্লোমা ডাক্তারি কেন থাকবে না ? আগে তো LMF registered ডাক্তার ছিল। তারা থাকলে প্রচুর গ্রামীণ ও শহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিতে ডাক্তারের সমস্যা আরো মিটতে পারে। পাড়ায় পাড়ায় তারা বাড়িতে গিয়েও চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু ভারতের সর্ববৃহৎ ডাক্তারদের সংগঠন IMA এটা কিছুতেই করতে দেয় না। যত বেশি কোয়ালিফিকেশন যে ডাক্তারের, সমাজে সেই ডাক্তার তত দামি। প্রশ্ন হল, এতে কি রোগীর বেশি উপকার হয় নাকি ডাক্তারের বেশি উপকার হয়? কোন ডাক্তার বা কতজন প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে ভাবিত?
হাতুড়ে ডাক্তার বা অ-পাশকরা ডাক্তার বা bare footed ডাক্তারকে নিয়েও নতুন করে ভাবা উচিত। WHO এর একটা রিপোর্ট বলছি। ভারতবর্ষে, জানেন, হাতুড়ে ডাক্তাররা শিশুদের ডায়রিয়া ও টিবি রোগের একটা ছাঁকনি? ওরা না থাকলে শিশু ডায়রিয়া ও টিবি তে ভারতর্ষে প্রতিবছর অতিমারি করিয়ে দিত। WHO এর রিপোর্ট। তাহলে সরকারকে বলতে হবে bare footed ডাক্তারদের ঠিকঠাক ট্রেনিং দাও যাতে তারা কিছুটা পর্যন্ত র‍্যাশনালি চিকিৎসা করিয়ে নিতে পারে। তাতে তো দেশের লাভই হবে। এতে সরকারকে বাধ্য করাতে হবে। কারণ সরকার তো এতো ডাক্তার সাপ্লাই করতে পারছে না। উল্টে কী করছে? বিশেষ করে সাউথ ইন্ডিয়াতে যত্তরকম দুনম্বরি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিয়েছে, যেখানে এক নম্বরি দুনম্বরি হয়ে টোটাল প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে একটা ছাত্রকে MBBS পড়ার জন্য ডাকে। যে বাপের এত টাকা খরচের ধক আছে, সেই বাপ সেই ছেলে বা সেই মেয়েটি তো চাইবেই টাকাটা তুলতে। সে কি আর জিপি হয়ে পাড়ায় কারুর বাড়িতে গিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট লিখবে? নাকি , গ্রামে প্রাকটিস করবে?